Space Science: সূর্য থাকতেই হবে, এমন কথা নেই, আঁধারেও হতে পারে প্রাণের সৃষ্টি, মহাশূন্য নিয়ে জল্পনা বাড়াল গবেষণা
সৃষ্টিতত্ত্বের কথা উঠলেই অন্ধকার থেকে আলোয় উৎসারিত হওয়ার কথা শোনা যায়। বিজ্ঞান থেকে কল্পকথা, ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে সূর্যের অস্তিত্ব এবং গুরুত্ব উপেক্ষা করার সাহস দেখায় না কেউই।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appকিন্তু সময়ের সঙ্গে যুক্তি-তর্ক সবেরই বিবর্তন ঘটে। তাই ইদানীং বিজ্ঞানীদের মধ্যে ধারণা জন্মেছে যে, প্রাণসৃষ্টির জন্য সূর্যের প্রয়োজন নেই। অন্ধকারেও দিব্যি চলতে পারে জীবনচক্র।
কম্পিউটার সিমুলেশন থেকেই সম্প্রতি এমন তত্ত্বে এসে একমত হত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি গ্রহ এবং তার উপগ্রহের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নিয়ে দড়ি টানাটানি চলতে থাকে। এর ফলে কিছু উপগ্রহ উষ্ণ থাকে, যা জলের অস্তিত্বের জন্য যথেষ্ট।
তাই বিজ্ঞানীদের দাবি, নক্ষত্র নয়, কোনও উপগ্রহ যদি ভবঘুরে কোনও গ্রহকেও নির্দিষ্ট কক্ষপথ ধরে প্রদক্ষিণ করে থাকে, তাতেও কোটি কোটি বছর ধরে উষ্ণ থাকে সেই উপগ্রহ। সেখানে প্রাণসৃষ্টি হতেই পারে।
জ্যোতির্পদার্থবিদ জুলিয়া রসেটি এবং তাঁর সতীর্থরা এই গবেষণা চালিয়ে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল ফর অ্যাস্ট্রোবায়োলজি-তে এ নিয়ে বিশদ তথ্য তুলে ধরেছেন তাঁরা। বলা হয়েছে, ব্রহ্মাণ্ডে এমন বহু জায়গা রয়েছে, যা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেখানে প্রাণধারণের উপযুক্ত পরিবেশ থাকাার সম্ভাবনা প্রবল।
জুলিয়া জানিয়েছেন। শুধু প্রাণসৃষ্টি হলেই হল না, দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতাও প্রয়োজন। তার জন্য সূর্যের প্রয়োজন নেই। ব্রহ্মাণ্ডে এমন বহু গ্রহ রয়েছে, যাদের কোনও নক্ষত্র নেই। নক্ষত্রের মতোই ধুলো এবং গ্যাস জমে সেগুলির উৎপত্তি। নিজ নিজ সৌরজগৎ থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছে তারা।
নক্ষত্ররে মতো এমন গ্রহের সংখ্যাও মহাশূন্যে কম নেই। তাদের আবার উপগ্রহও রয়েছে। সেই উপগ্রহগুলি শীতল, প্রাণধারণের অনুপযুক্ত নাও হতে পারে। আর গ্রহকে প্রদক্ষিণ করার ক্ষেত্রে কক্ষপথ যদি নিখুঁত বৃত্তাকার না হয়, তাহলে মাধ্যাকর্ষণ টানের ওঠাপড়া লেগেই থাকে। তাতে উষ্ণতা বজায় থাক ওই উপগ্রহের।
আমাদের সৌরজগতে শনির উপগ্রহ এনসেলাডাস এবং বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপার ক্ষেত্রে এমই লক্ষ্য করা গিয়েছে। যথেষ্ট পুরু এবং তাপ আটকে থাকে এমন বায়ুমণ্ডল, যেখানে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেশি, সেখানে মাটিও গরম থাকে। ফলে জল তরল অবস্থাতেই থাকে। বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন থেকে সৃষ্টি হতে পারে এই জলের।
যদিও এমন উপগ্রহ চিরকাল উষ্ণ থাকবে না। যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ওঠাপড়া উপগ্রহকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে, তা আকার বদলে বৃত্তাকার হয়ে যেতে পারে। তাতে ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন তাপের সরবরাহও কমে যায়। তবে কয়েক হাজার বা কয়েক লক্ষ বছর চলতে পারে।
জুলিয়া এবং তাঁর সতীর্থরা সূর্যেরই মতো একটি নক্ষত্রের সিমুলেশনকে ৮ হাজার কম্পিউটারে চালিত করে দেখেছেন, সৌরজগৎ থেকে ছিটকে যাওয়া গ্রহগুলি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজের উপগ্রহকে সঙ্গে নিয়েই ছিটকে যায়। তার পরেও কক্ষপথ ধরে ওই গ্রহকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে তার উপগ্রহ। ফলে তাপ সরবরাহ হতে থাকে। ফলে প্রাণসৃষ্টির পরিবেশ গড়ে ওঠে সেখানে।
বিজ্ঞানীদের মতে, সৃষ্টির কয়েক লক্ষ বছরের মধ্যেই পৃথিবী প্রাণধারণের উপযুক্ত হয়ে ওঠে। ১০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে প্রাণ ছিল বলেও মিলেছে প্রমাণ। এক্ষেত্রেও তাপ সরবরাহের তত্ত্ব প্রয়োগ করলে, চাঁদের বুকেও প্রায় ৫ কোটি বছর প্রাণধারণের উপযুক্ত পরিবেশ ছিল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -