Sergei Krikalev: নিচে খান খান গোটা দেশ, মহাকাশে একা আটকে নভোচারী, ইনিই শেষ সোভিয়েত নাগরিক
অচেনা জায়গায় গিয়ে আটকে যাওয়ার দিন আর নেই। কারও কাছে যেতে হবে না, উপায় বাতলে দেবে হাতের স্মার্টফোনই। কিন্তু আজ থেকে তিন দশক আগে এসব ছিল না। আর কোনও অচেনা জায়গাতেও নয়, বরং মহাশূন্যে গিয়ে আটকে গিয়েছিলেন এক মহাকাশচারী। পৃথিবীতে তখন তাঁর দেশ ভাগ হচ্ছে। তাই মহাশূন্যে আটকে পড়া ব্যক্তিকে নিয়ে শুরু হয় টানাপোড়েন। ছবি: NASA.
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appওই ব্যক্তি আর কেউ নন, রাশিয়ার (তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মহাকাশচারী সেরগেই কৃকালেভ। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে রকেট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন।-ফাইল চিত্র।
বেশ কয়েক বছর পর মহাকাশচারী নির্বাচিত হন। চলে প্রশিক্ষণ। মহাকাশযান মেরামতি থেকে মহাশূন্যে ভেসে থাকার কৌশল, সব রপ্ত করেন। কিন্তু পৃথিবীতে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া আর মহাকাশে গিয়ে তার প্রয়োগ, দুইয়ের মধ্যে ফারাক অনেক। ছবি: NASA.
১৯৯১ সালের ১৮ মে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দেন সেরগেই। কিন্তু গোড়াতেই বিপত্তি দেখা দেয়। মহাকাশযানের টার্গেটিং সিস্টেম বিকল হয়ে যায়। ফলে মহাশূন্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত Mir স্পেস স্টেশনের গায়ে রকেটটি নোঙর ফেলায় সমস্যা দেখা দেয়।-ফাইল চিত্র।
উপায় না দেখে ভাসমান অবস্থায় মহাকাশযান থেকে Mir স্পেস স্টেশনের গায়ে নোঙর ফেলতে সিদ্ধান্ত নেন সেরগেই। একটু এদিক ওদিক হলেই বিপদ হতে পারত। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে সেই কাজে সফল হন সেরগেই। তার পর আবার ব্রিটেনের প্রথম মহাকাশচারী হেলেন শারমানকে মহাকাশযানে তুলেও নেন। ছবি: সংগৃহীত।
মহাকাশে যদিও কোনও দুঃখ ছিল না সেরগেইয়ের। মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর দিকে তাকিয়েই সময় কেটে যেত তাঁর। কোথাও না কোথাও মুক্ত বলে মনে হতো নিজেকে। কিন্তু মহাশূন্যে যখন ভেসে বেড়াচ্ছেন, সেই সময় পৃথিবীতে টুকরো হয়ে যাচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনতার দাবি জানাচ্ছে কাজাখস্তান-সহ একাধিক দেশ। ছবি: সংগৃহীত।
এমন পরিস্থিতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ জানান, গবেষণা শেষ হলে কাজাখস্তানের কোনও মহাকাশচারী গিয়ে কৃকালেভের জায়গা নেবেন, পৃথিবীতে ফিরে আসবেন কৃকালেভ। এই ঘোষণার নেপথ্যে ছিল রাজনীতি। কাজাখস্তানে কোনও প্রশিক্ষিত মহাকাশচারী ছিলেন না, অর্থাৎ সাত তাড়াতাড়ি ফিরে আসার সম্ভাবনা ছিল না কৃকালেভের। ছবি: NASA.
দীর্ঘ চার মাসের গবেষণা সেরে বাকি মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফিরে এলেও, সেই অবস্থায় ফেরার উপায় ছিল না কৃকালেভের। রাশিয়ার হাতে দ্বিতীয় কাউকে পাঠানোর মতো টাকাও ছিল না হাতে। তাই Mir স্পেস স্টেশনের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে কৃকালেভের হাতেই। খাবার দাবার প্রায় শেষ হতে বসেছিল। শুধুমাত্র দেশের অবস্থার কথা ভেবেই স্পেস স্টেশন আগলে রয়ে গিয়েছিলেন কৃকালেভ। ছবি: সংগৃহীত।
১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে। জন্ম নেয় রাশিয়া। তাতে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটে আরও। কৃকালেভকে ফিরিয়ে আনার উপায় ছিল না। চাইলে Soyuz ক্যাপসুলে চেপে পালিয়ে আসতে পারতেন কৃকালেভ, কিন্তু তাতে স্পেস স্টেশনটি ভেঙে পড়ত। এমতাবস্থায় আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি হয়। সেই মতো প্রায় তিন মাস পর অন্য মহাকাশচারী প্রেরণ করা হয় স্পেস স্টেশনে। ছবি: সংগৃহীত।
শেষ পর্যন্ত, ৩১১ দিন মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন কৃকালেভ। কিন্তু যে সময় মহাকাশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি, তখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকেছিল। যখন ফিরে আসেন তিনি, সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্বই মুছে গিয়েছে। ফলে ‘শেষ সোভিয়েত নাগরিকে’র তকমা পান কৃকালেভ। ছবি: NASA.
সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও পৃথিবীতে ফিরে আবারও প্রশিক্ষণ শুরু করে দেন কৃকালেভ। পরে আবারও রওনা দেন মহাকাশে। সেবার ৮০৩ দিন মহাকাশে কাটান তিনি। সময়ের আপেক্ষিকতা এবং প্রসারণকে ধরলে, ০.২ সেকেন্ডের জন্য ভবিষ্যৎ থেকে ঘুরে এসেছেন সেরগেই। ছবি: সংগৃহীত।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -