Science News: ৬০ বছরে মহাকাশ অভিযানের বলি ২০, মহাশূন্যে মৃত্যু হলে কী হয় মরদেহের, বিধিনিয়ম কী বলছে?
শুধুমাত্র জীবনধারণ নয়, মানবসভ্যতার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে মহাকাশ অনুসন্ধানও। প্রতি নিয়ত মহাশূন্যে একের পর এক উদঘাটন ঘটিয়ে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। আগে যা ছিল শুধুমাত্র কল্পনা, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির দৌলতে বর্তমানে তা বাস্তব। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে মহাকাশে মানুষপ্রেরণ, সবকিছুই এখন সম্ভব।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appতবে খুব বেশিদিন নয়, মহাকাশ অনুসন্ধান শুরু হয় মাত্র ছ’দশক আগে, মহাশূন্যের রহস্যময় জগতে কী লুকিয়ে রয়েছে, তা জানতে দফায় দফায় চলেছে অভিযান। প্রতিবারই তাতে সাফল্য এসেছে এমন নয়, বরং দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানিও ঘটেছে।
মহাকাশ অভিযানে গত ৬০ বছরে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৬ এবং ২০০৩ সালে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র অভিযানেই মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। ১৯৭১ সালে সয়ুজ ১১ অভিযানে তিন জনের এবং ১৯৬৭ সালে অ্যাপোলো ১ অভিযানে আরও তিন জন মারা যান।
মহাকাশ অভিযান একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। প্রাণহানির ঝুঁকি এতটাই বেশি যে, ২০ জনের মৃত্যু সেই তুলনায় কিছুই নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে জোরকদমে পৃথিবীর বিকল্প বাসস্থানের খোঁজ চলছে মহাশূন্যে, তাতে প্রাণহানির ঝুঁকি আরও বাড়ছে। আর তাই প্রশ্ন উঠছে, মহাশূন্যে যদি কারও মৃত্যু হয়, তাহলে তাঁর মৃতদেহের কী পরিণতি হয়? মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন বিশদে। তাঁরা জানিয়েছেন, মহাকাশচারীদের নিরাপত্তাকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া হয় সবক্ষেত্রে। তার পরেও অঘটন ঘটে যায় কখনও কখনও।
আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন বা মহাকাশের অন্যত্র কারও মৃত্যু হলে দেহ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনাই দস্তুর। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন বা পৃথিবীর কক্ষপথ সংলগ্ন এলাকায় কারও মৃত্যু ঘটলে, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্যাপসুলে ভরে মৃতদেহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব পৃথিবীতে।
চাঁদের বুকে যদি কেউ মারা যান, সেক্ষেত্রে পৃথিবীতে মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে সময় লাগতে পারে কয়েক দিন। তবে সেক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। নাসা জানিয়েছে, মহাকাশ অনুসন্ধানে ১৯৬৭ সালে একটি তুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই অনুযায়ী, মহাকাশ অভিযানে গিয়ে কোনও দেশের মহাকাশচারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটলে, গোটা বিষয়টি তারই এক্তিয়ারের মধ্যে পড়বে।
সেক্ষেত্রে প্রথমে মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সেই তথ্য ভাগ করে নিতে হবে সকলের সঙ্গে। মহাশূন্যে হঠাৎ কারও মৃত্যু হলে, সব দেশই সহযোগিতা করবে। ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহের আগে অনুমতি নিতে হবে মৃত ব্যক্তির পরিবারের। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যদি দুই দেশের মহাকাশচারীদের মধ্যে অশান্তি বাধে এবং একজনের হাতে অন্য জনের মৃত্যু ঘটে, সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত যে দেশের নাগরিক, তাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়বে বিষয়টি।
পৃথিবীর কক্ষপথের আশেপাশে বা চাঁদে মৃত্যু ঘটলে, পৃথিবীতে অল্প সময়ের মধ্যেই দেহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ফলে দেহ সংরক্ষণেও তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ফিরে আসবেন বাকি মহাকাশচারীরাও। কিন্তু মঙ্গল বা মহাকাশের বহুদূরের কোথাও যদি কারও মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে মহাকাশযান ঘুরিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে অভিযান শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাতে সময় লাগতে পারে বেশ কয়েক বছরও।
সেক্ষেত্রে দেহ সংরক্ষণ করতে বডি ব্যাগের মধ্যে দেহ ঢুকিয়ে মহাকাশযানের বিশেষ চেম্বারে রেখে দিতে হবে। মহাশূন্যের যা আবহাওয়া, তাতে দেহটি সংরক্ষিত থাকবে। তবে মহাকাশযানের মধ্যে বা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের মধ্যে কারও মৃত্যু ঘটলেই এমনটা সম্ভব।
স্পেসস্যুট ছাড়া মহাকাশযানের বাইরে যদি বের হন কেউ, সে ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যু হবে। শ্বাস নিতে পারবেন না তিনি। শরীরের রক্ত এবং অন্য তরল কার্যত ফুটতে শুরু করবে। চাঁদ এবং মঙ্গলের বুকে স্পেসস্যুট ছাড়া নামলে এমনই পরিণতি হবে। সেক্ষেত্রে দেহ সমাধিস্থ করা সম্ভব নয়, কারণ তাতে যা শক্তি খরচ হবে, তা অন্য কাজে লাগানোর জন্য বাঁচানো প্রয়োজন। আবার দেহ এমনি ছেড়ে দিলে চাঁদ বা মঙ্গলের মাটি মৃতদেহ থেকে নির্গত ব্যাকটিরিয়া দ্বারী দূষিত হতে পারে। ফলে সে ক্ষেত্রেও মৃতদেহ ব্যাগে ভরে সংরক্ষণ করতে হবে।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -