Flat Earth Theory: পৃথিবী আসলে চ্যাপ্টা, চক্কর দিচ্ছে চন্দ্র-সূর্য! আদিকাল থেকে কেন টিকে রয়েছে এই তত্ত্ব!
উত্তর-দক্ষিণে একটু চাপা। বাকিটা ঠিক কমলালেবুর মতো। ছোট থেকে বইয়ের পাতায় পৃথিবীর এমন আকৃতির কথাই পড়েছি আমরা। এত বছর ধরে সেই যুক্তিই বিজ্ঞানসম্মত বলে মেনে আসচে গোটা বিশ্ব। মহাকাশ থেকে তোলা ছবিও সেই যুক্তিতেই সিলমোহর দেয়।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appকিন্তু যুগান্তকারী আবিষ্কারে ভর করে মহাশূন্যে প্রায় প্রতিদিন বিপ্লব ঘটে চললেও, এখনও কিছু মানুষের মধ্যে পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তাঁদের মুখেই শোনা যায় ‘কন্সপিরেসি থিওরি’ অর্থাৎ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা। দাবি করেন, পৃথিবী আসলে চাটুর মতো চ্যাপ্টা। মানুষকে ভুল বোঝাতে গোল বলে দাবি করা হয়। ইদানীং কালে তা নিয়ে কেউ বিশেষ উচ্চবাচ্য না করলেও, তা নিয়ে একসময় উথালপাথালও হয়েছিল বিশ্ব।
প্রাচীন যুগে গ্রীকরাই প্রথম পৃথিবী গোল বলে আবিষ্কার করেন। তখন থেকেই ভিন্ন মত উঠে এসেছে বার বার। তবে পাঁচের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সেই তত্ত্বের বিরোধিতা করতে আস্ত একটি বিচ্ছিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে। তাদের দাবি ছিল, পৃথিবী আসলে চ্যাপ্টা।
ওই সংগঠনের তত্ত্ব আজও বয়ে চলেছেন কিছু মানুষ। তাঁদের যুক্তি, আসলে চাটুর মতো চ্যাপ্টা পৃথিবী। মহাকাশ থেকে তোলা বলে যে ছবি দেখানো হয়, তা আসলে ধাপ্পাবাজি। বিভিন্ন দেশের সরকারের মিলিত কারসাজি। নিজেদের যুক্তি সাজাতে পদার্থবিজ্ঞানের নান সূত্রকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যাও করেন তাঁরা।
পৃথিবী চ্যাপ্টা বলে বিশ্বাস করেন যাঁরা, তাঁদের যুক্তি হল, পৃথিবীর আকৃতি আসলে চাটুর মতো। মেরুবলয়ের অবস্থান ঠিক মধ্যিখানে। সেই বলয়কে ঘিরে রয়েছে ১৫০ ফুট উঁচু বরফের দেওয়াল, যা আসেল আন্টার্কটিকা। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র এই দেওয়ালকে পাহারা দেয় বলে দাবি তাঁদের।
শুধু তাই নয়, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও আসলে বিভ্রম বলে দাবি করা হয় ওই সংগঠন বা পৃথিবী চ্যাপ্টা তত্ত্বে বিশ্বাসী মানুষ জন। তাঁদের দাবি, উপর থেকে পড়ার সময় কোনও বস্তুর গতি মোটেই ত্বরান্বিত হয় না। বরং পৃথিবীর চাকতির মতো অংশটি প্রতি বর্গ সেকেন্ডে ৯.৮ মিটার গতিতে ঊর্ধ্বমুখী হয়, এই গতি রহস্যময় একটি শক্তি দ্বারা চালিত হয় বলে দাবি করা হয়।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে আবার মতভেদও রয়েছে পৃথিবীর চ্যাপ্টা আকৃতিতে বিশ্বাসী মানুষ জনের মধ্যে। এমনকি পৃথিবী মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে, এই তত্ত্বেও বিশ্বাস নেই তাদের। ২০১৯ সালের বার্ষিক সম্মেলনে মহাশূন্যের কোনও অস্তিত্বই নেই বলে দাবি করা হয়। পৃথিবীর আহ্নিক গতি নেই, এক জায়গায় স্থির বলেও ওঠে দাবি।
চাঁদ-সূর্যকে নিয়েও আলাদা তত্ত্ব রয়েছে এই সমস্ত মানুষের কাছে। তাঁদের মতে, পৃথিবী চ্যাপ্টা হলেও, চাঁদ এবং সূর্য এক একটি গোলক। ২৪ ঘণ্টা তারাই গতিশীল। যে কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত, বিভিন্ন সময় আলোকিত হয়। আজকাল ঠিক কত সংখ্যক মানুষ এই চ্যাপ্টা পৃথিবীর তত্ত্বে বিশ্বাস করেন জানা নেই। তবে ১৯৫৬ সালে গড়ে ওঠা ‘ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি’র সদস্যসংখ্যা একসময় ৩৫০০-য় পৌঁছয়। বর্তমানে সদস্যসংখ্যা ৫০০-র আশেপাশে। ওই সংগঠনকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ২০১৯ সালে শোরগোল পড়ে যায়।
সে বছর আমেরিকার ডালাসে ‘ফ্ল্যাট আর্থ কনফারেন্স’-এর আয়োজন হয়। তাতে ওই সংগঠনের গড়ে ওঠার পিছনে সরকারি মদত রয়েছে বলে দাবি ওঠে। যদিও সংগঠনের তরফে তা অস্বীকার করা হয়। তবে শুধুমাত্র ডালাস বা আমেরিকাতেই ‘ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি’র অস্তিত্ব রয়েছে ভাবা ভুল। কারণ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল শেন্টন আদতে লন্ডনের বাসিন্দা। বর্তমানে হংকংয়ে থাকেন। বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে রবি ডেভিডসন। তিনি কানাডার বাসিন্দা। ‘বাইবেলে’র বিশ্বদর্শনে বিশ্বাসী তিনি, বিজ্ঞান- বিরোধী।
২০১৭ সালে একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ বিশ্বাস করেন পৃথিবী সমতল বলে। ৬ শতাংশের কোনও নিশ্চিত বিশ্বাস নেই। পৃথিবী চ্যাপ্টা বলে বিশ্বাস করেন যাঁরা, তাঁদের দাবি, বিশ্বের তাবড় রাজনীতিকরা আসলে অভিনেতা। পৃথিবীর উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতে আসল সত্য ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন।
অধিকাংশ মানুষ এই বিশ্বাসে আমল না দিলেও, বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত খ্যাতনামা কয়েক জনও পৃথিবীর আকৃতি চ্যাপ্টা বলে বিশ্বাস করেন, যেমন, র্যাপার-গায়ক ববি রে সিমন্স জুনিয়র। ‘ফ্ল্যাটলাইন’ বলে একটি গানও গেয়েছেন তিনি। তাতে জ্যোতির্পদার্থবিদ নীল ডিগ্রাসে টাইসনকে আক্রমণ করেছেন তিনি। ট্যুইটারে দু’জনের মধ্যে ঝামেলাও বাধে। ২০১৮ সালে NBA তারকা কাইরি আরভিং জানান, পৃথিবী চ্যাপ্টা বলেই বিশ্বাস করে তিনি। তা নিয়ে ঢের বিতর্ক হয়।
তবে যত বিতর্কিত তত্ত্বই উঠে আসুক না কেন, পৃথিবীর আকার যে কমলালেবুর মতোই, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ। আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান, চিন, ভারত, সব দেশের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, মহাকাশ গবেষণায় পৃথিবীর আকার নিয়ে একমত সকলে। তবে সহজ সরল উপায়ে পৃথিবীর আকার নির্ধারণ করতে পারেন যে কেউ। নদী বা সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালেই হল। দেখা যাবে, জাহাজের সঙ্গে যত দূরত্ব বাড়ে, প্রথমে তার নিচের অংশ চোখের বাইরে চলে যায়। সব শেষে মাস্তুল। পৃথিবীর আকার গোল বলেই এমনটা ঘটে।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -