উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও সঞ্চয়ন মিত্র, অযোধ্যা : রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিনই ঘরে ঘরে রামলালা পাওয়ার চাহিদা উত্তরপ্রদেশে ! ২২ জানুয়ারি সোমবার, কার্যত সিজারের আবেদনে হিড়িক পড়ে গেছে অযোধ্যা সহ উত্তরপ্রদেশের বহু বেসরকারি হাসপাতালে। সরযূ পাড়ের প্রাচীন শহরে দেদার বিকোচ্ছে রামায়ণ। গতকালই মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রামলালার মূর্তি।


রাম মন্দির উদ্বোধন ঘিরে অযোধ্যায় সাজসাজ রব। সোমবার নতুন মন্দিরে, রামলালার মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরযূর তটে সুপ্রাচীন নগরীতে এখন থেকেই আছড়ে পড়ছে উৎসবের ঢেউ...। আর এই রাম-উন্মাদনার মধ্যেই মাথাচড়া দিয়েছে আরও একটা হিড়িক। তা হল, রাম মন্দির উদ্বোধনের দিনই ঘরে সাক্ষাৎ 'রাম' চাই। ২২ জানুয়ারি, সোমবার কার্যত সিজারের হিড়িক পড়তে চলেছে অযোধ্যা সহ উত্তরপ্রদেশের বহু বেসরকারি হাসপাতালে। অন্তঃসত্ত্বারা চাইছেন, তাঁর যেন একটা রাম হয়, আর সেই রামের জন্ম যদি হয় ২২ তারিখ, তাহলে তো আনন্দের কথাই নেই। এই মাসেই যাদের তারিখ রয়েছে, তাঁদের অনেকের অনুরোধ যাচ্ছে চিকিৎসকদের কাছে।


রামায়ণ মহাকাব্যের রামচন্দ্রকে বলা হয় নরচন্দ্রমা। তুলসীদাস তাঁর রাম ভজনায় লিখেছেন, শিশু রঘুবীরের মুখ এতটাই সুন্দর, যে শুধুমাত্র রঘুবীরের মুখের সঙ্গেই তাঁর তুলনা চলে। সোমবার, অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন ঘিরে সারা দেশে যখন উন্মাদনা বাড়ছে, তখন ওই দিনই সন্তানের জন্ম দেওয়ার আগ্রহও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। সিজারের দিন বদলানোর জন্য অনুরোধ যাচ্ছে চিকিৎসকদের কাছে।


অযোধ্যার এক চিকিৎসক স্বাতী শ্রীবাস্তব বলছেন, আমি খুব খুশি হব, যদি সেই দিন কোনও শিশুর জন্ম দিতে পারি। এটা একটা শুভ দিন। এরকম চাহিদা তো হবেই। যাদের লেবার পেন হয়, তাদের তো দিন বদলানো যায় না। কিন্তু যাদের ধরুন ১৮ তারিখ ডেট আছে, তাদের ২২ তারিখ করানো যেতে পারে। অথবা যাদের ২৪ তারিখ ডেট তাদের ২২ তারিখ করানো যেতে পারে। তবে সবটাই নির্ভর করছে পেশেন্টদের ওপর।


অযোধ্যারই অপর এক চিকিৎসক সুমিতা বর্মা বলেন, এরকম প্রচুর অনুরোধ আসছে। আমরা চেষ্টা করছি। সব অনুরোধ রাখতে পারব না। যতটা পারব চেষ্টা করব। আমাদেরও ভাল লাগে যদি এরকম দিনে একটা হয়।

২০০০ সালের ১ জানুয়ারি নতুন শতাব্দীর সূচনায় সিজারের হিড়িক দেখা গিয়েছিল দেশে। জন্মাষ্টমীতেও কোলে গোপাল পেতে হাউসফুল ছিল বহু বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার। এমনকী ২৫ ডিসেম্বরও সেই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ বিশেষ এই দিনগুলোতে ভিড় উপচে পড়ে লেবার ওটি-র সামনে। ২০২৪ সালের শুরুতেও রাম মন্দির উদ্বোধনের হাত ধরে সেই স্মৃতি ফিরতে চলেছে আবার।


শুধু ঘরে রামলালা নিয়ে আসা নয়, ঘরে রামায়ণকে সাদরে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও হঠাৎই অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অযোধ্যার অলিগলিতে এখন দেদার বিকোচ্ছে রামায়ণ। পাল্লা দিয়ে বিকোচ্ছে তুলসীদাসের রামচরিতম মানস। বিক্রেতারা বলছেন, আগে যেখানে সারা বছরে ৫ থেকে ৬ হাজার রামায়ণ বিক্রি হত, এখন সেটাই দিনে প্রায় ২০০ পিস পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে ! শুধু যে রামায়ণ বা রামচরিত মানস হট কেকের মতো বিকোচ্ছে তা নয়, রামের নামাঙ্কিত উত্তরীয় থেকে গেঞ্জির চাহিদাও তুঙ্গে। সব মিলিয়ে অযোধ্যা এখন উৎসবনগরী।