তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া: এ যেন অকাল বোধনে'র অকাল বোধন। যখন সবাই চারদিকে কালী শক্তির আরাধনা ও আলোর উৎসবে মেতেছেন। ঠিক তখনই এক প্রকার নিঃশব্দেই দেবী দুর্গার আরাধনায় মত্ত বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বোলতলার পাটরাপাড়ার রক্ষিত পরিবার।                                             

  


গত দেড়শো বছরেরও বেশী সময় ধরে এখানে দীপান্বিতা অমাবস্যায় শুরু হয় দেবী দুর্গার বোধন। মা এখানে অসুরদলনী নন, নন সিংহবাহিনীও। এই সময় এখানে তিনি ঘরের মেয়ে উমা। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ আর শিব-সহ দুর্গা সপরিবারে পূজিতা হন এখানে। শারদীয়া দুর্গোৎসবের মতোই এই সময় এখানে টানা চার দিন পুজো হয়। শুরুর দিন চাল কুমড়ো বলি প্রথাও চালু আছে রক্ষিত বাড়ির পুজোতে।                                                         


রক্ষিত পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড়শো বছর আগে তাঁদের বংশের কোনো এক সদস্যাকে দেবী দুর্গা স্বপ্নাদেশ দেন। যেখানে দেবী দুর্গা, শিব সহ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের মূর্তি তৈরী করে পুজোর নির্দেশ পান। কথিত আছে রক্ষিত পরিবারের পূর্ব পুরুষদের রেশম গুটির ব্যবসা ছিল। ব্যবসার সুত্রে কোনও এক পূর্বপুরুষ পুরুলিয়ায় গিয়েছিলেন। কাজ সেরে ক্লান্ত হয়ে সেখানেই একটি গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন। তখন স্বপ্নাদেশ পান দেবী দুর্গাকে পুজো করতে হবে। 


আরও পড়ুন, কালীপুজোয় মা কালী রূপে পূজিতা, ফুল্লরা মন্দিরে ভক্ত সমাগম


তাহলে সংসারে মঙ্গল হবে। বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁদের তাঁতশালে দেবীর মূর্তি রয়েছে। দেবীর আদেশ মেনে পরিবারের লোকেরা অমাবস্যা তিথিতে কালীপুজোর রাতে শিবদুর্গার পুজো শুরু করেন। প্রায় ছ’পুরুষ ধরে বাড়িতে এভাবেই পুজো হয়ে আসছে।  ভাইফোঁটার পরে বৃহস্পতি, শনি ও রবিবার বাদ দিয়ে যে কোনো দিন বিসর্জন করা হবে। ঘট বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা কেউ বিষ্ণুপুর ছেড়ে যান না। শারদীয়া পুজোর পরিবর্তে তাদের বাড়ির পুজোয় আত্মীয় স্বজনদের আমন্ত্রণ করা হয়। তাই এসময় পরিবারে সবাই আসেন।