সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা : ‘বিপদতারিণী’ অর্থাৎ যিনি বিপদ থেকে তারণ করেন বা রক্ষা করেন। ‘বিপদতারিণী’ শব্দ অপভ্রংশে ‘বিপত্তারিণী’ হয়ে উঠেছে। বাংলা ও উড়িষ্যার আশপাশের গ্রামে-গঞ্জে বিপত্তারিণী পুজো বেশ জনপ্রিয়। 


কেমন রূপ মা বিপত্তারিণীর

আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া অর্থাৎ রথযাত্রা এবং শুক্লা দশমী অর্থাৎ উল্টোরথ বা রথের পুনর্যাত্রা মাঝের শনিবার ও মঙ্গলবারে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। বিপত্তারিণী আসলে দেবী দুর্গা বা কালীরই এক রূপ। দুর্গার মতই তিনি সিংহবাহিনী। তবে কোথাও তিনি রক্তবর্ণা কোথাও আবার মা কালীর মতই কৃষ্ণবর্ণা। তাঁর চারটি হাতে খড়্গ, ত্রিশূল ও বরাভয় মুদ্রা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন মা বিপত্তারিনী আসলে বাংলার এক লৌকিক দেবী। তবে মার্কণ্ডেয় মুনি প্রথম বিপত্তারিণী ব্রত কথা প্রচার করেন। 


হিন্দু ধর্মে বিপত্তারিণী ব্রতের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি ভরে এই পুজো করলে যে কোনও বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই বছর ২৪ জুন, শনিবার এবং ২৭ জুন, মঙ্গলবার পড়েছে বিপত্তারিণীর ব্রতর দিন।


পুজোর রীতি
মূলত মহিলারা রথযাত্রা ও পুনর্যাত্রার মাঝের শনিবার ও মঙ্গলবারে উপবাসে থেকে দেবীর পুজো অর্চনায় অংশ নেন। মনষ্কামনা করে হাতে লাল সুতোর তাগা ধারণ করেন। সেই তাগায় তেরোটি দুর্বা সহ তেরোটি গিট দেওয়া থাকে।সেই সঙ্গে তেরো রকম ফল এবং তেরো রকম ফুল দিয়ে দেবীর পুজো করা হয়। অনেকে মনষ্কামনা পূর্ণ হলে দণ্ডী কাটেন। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় নদী বা কোন জলাশয়ে স্নান সেরে দণ্ডী কেটে পুজো স্থলে গিয়ে তাঁরা পুজো দেন।                


 কলকাতার কাছে রাজপুরে বিপত্তারিণী দেবীর মন্দির রয়েছে। কলকাতায় কালীঘাট সহ বিভিন্ন শক্তি মন্দিরে ওই দুদিন প্রবল ভক্ত সমাগম হয়।       

মনে রাখতে হবে - 



  • বিপত্তারিণী ব্রতের আগের দিন, ব্যক্তি শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার খেতে হয়।

  • ব্রতের দিনে  কোনও খাবার খাওয়া যায় না। পুজোর পর উপবাস ভাঙা হয়।  

  • সমস্ত রকমের বাধা, বিপত্তি ও বিপদ থেকে সন্তান এবং পরিবারকে রক্ষা করার জন্য এই পুজো করা হয় । 

  • এই পুজোর দিন  চাল ও গমের কোনও খাবার না খাওয়াই ভাল । 

    আরও পড়ুন :

    সব বিপদ হরণ করেন যিনি, তিনিই বিপত্তারিণী ! পড়ুন তাঁর ব্রতকথা