কলকাতা : সব বিপদ হরণ করেন যিনি, তিনিই বিপত্তারিণী । তিনি মা কালীরই অন্য রূপ। এই পুজো আষাঢ় মাসে মঙ্গল ও শনিবার পালন করা হয়।  রথযাত্রার পরে এবং উল্টো রথের আগে মাঝের সময়ে করা হয় বিপত্তারিণী পুজো। এই বছর ২৪ জুন এবং ২৭ জুন এই ব্রতপালন। 


মা বিপত্তারিণীর ব্রতকথা


মা বিপত্তারিণীর ব্রতকথায় দুই রাজপরিবারের কাহিনিকে ঘিরে। তখন বিদর্ভের রাজা সত্যদাস। তাঁর পুত্র অলোকেশ একবার মৃগয়া করতে করতে পথ ভুলে পাশের রাজ্য অবন্তীপুরের সীমানায় ঢুকে পড়েন। সে জায়গাটি ছিল অবন্তী রাজের মৃগয়া ক্ষেত্র। সেখানে একটি হরিণ শিকার করলে অবন্তী রাজ্যের সেনারা তাঁকে বেঁধে নিয়ে যায় রাজদরবারে। সেসময় অবন্তী রাজ্যের রাজা ছিলেন চক্রধর। তিনি সব ঘটনা শুনে অলোকেশকে বন্দী করার আদেশ দিলেন। 

 ‘রক্তচক্ষু মহারাজ হেরিয়া তাহারে
 আদেশিল রাখ গিয়া অন্ধ কারাগারে’

রাজপুত্রের বন্দী হওয়ার খবর বিদর্ভে পৌঁছলে বিদর্ভরাজ সত্যদাস ছুটে গেলেন অবন্তী রাজের দরবারে। কিন্তু অবন্তীরাজ তাঁকেও বন্দি করলেন। বিদর্ভ রাজ্যের রাজা এবং রাজপুত্রের বন্দি হওয়ার খবর পেয়ে বিদর্ভের রানী রত্না কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তখনই দৈববাণী হল-

 ‘বিপত্তারিণী দুর্গায় পুজহ বিশেষ।
 আমা প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা তোমার অশেষ।।’ 

চোখের জল মুছে রানী পুজোর আয়োজন করলেন। সেই দিনটা ছিল রথ যাত্রার পরের মঙ্গলবার। দেবী বিপত্তারিণীর পুজো সেরে রানী ভক্তিভরে দেবীর স্তব করতে লাগলেন।

 ‘বিপদনাশিনী মা জগৎ জননী।
 এঘোর সংকট হতে রক্ষা কর তুমি।।’

দেবীর চরণে লুটিয়ে পড়ে রাণী রত্না স্তব করতে লাগলেন। আর সংকল্প করলেন মায়ের কৃপা না হলে তিনি এই দেহ ত্যাগ করবেন। স্ত্রী এবং মায়ের এই কাতর প্রার্থনা শুনলেন দেবী। সেই রাতেই দেবী বিপত্তারিণী অবন্তীরাজ চক্রধরকে স্বপ্ন দিয়ে বললেন যে তুমি আমার ভক্তকে বন্দি করে রেখেছে দেখে আমি কষ্ট পাচ্ছি। এখনই তাদের মুক্তি দাও।

‘সে মোর প্রিয় জান নাকি তুমি।
 তারে বন্দি রাখিয়াছ দুঃখ পাই আমি।।’

এই স্বপ্ন পেয়ে অবন্তীরাজ তখনি বিদর্ভরাজ সত্যদাস এবং তাঁর পুত্র অলোকেশকে মুক্তি দিলেন। সেই সঙ্গে নিজের মেয়ের সঙ্গে অলোকেশের বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। এভাবেই দুই রাজ্য আত্মীয়তায় বাঁধা পড়ল। আর এভাবেই দেবীর প্রসাদ লাভ করে শান্তি ফিরল উভয় রাজ্যে। 

বিদর্ভের রাণী রত্নার এই ব্রত কথা স্মরণ করে আজও বাংলার ঘরে ঘরে মহিলারা সংসারের বিপদ কাটাতে ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে দেবী বিপত্তারিণীর পুজো করে থাকেন।