কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: আর কয়েকটা দিন, তার পরেই বেজে উঠবে 'আলোকমঞ্জরী'। দেবী আরাধনার (Durga Puja 2023) তোড়জোড় তুঙ্গে। সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্য মেনে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গুসকরার চোংদার বাড়িতেও (Traditional Puja 2023)। তবে এখানে প্রতিমার রূপ আলাদা। দুর্গাপ্রতিমার কথা হচ্ছে না, হচ্ছে গণেশ, সরস্বতী ও লক্ষ্মীর প্রতিমার কথা। কেমন সে রূপ?


নানা রূপে...
চোংদার বাড়ির রীতি অনুযায়ী, একমাত্র কার্তিকের বাহন থাকে। সরস্বতী, লক্ষ্মী ও গণেশ প্রতিমার সঙ্গে এখানে কোনও বাহন থাকে না। আরও একটি দেখার মতো বিষয় রয়েছে। তা হল, এখানে সরস্বতীর প্রতিমার রং নীলাভ। এতেই শেষ নয়। দুর্গা এখানে সিংহবাহিনী নন, ঘোড়ায় সওয়ার।  তা ছাড়া দুর্গা ও লক্ষ্মীপ্রতিমার মাথায় মুকুট থাকলেও সরস্বতীর কোনও মুকুট থাকে না। চোংদার বাড়ির পুজো হয় শাক্ত মতে। বলির প্রথাও রয়েছ। সেই কারণেই সরস্বতী প্রতিমার রং নীলাভ, জানালেন আয়োজকরা। নিয়ম অনুযায়ী, সপ্তমীর দিন শঙ্খচিল দেখেই পুকুর থেকে ঘটে জল ভরা হয়। পুজো শেষে ঘট বিসর্জন হয় না। স্রেফ প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। চোংদার বাড়িতে ঘটের আহ্বানই সাড়ে চারশো বছরের প্রথা।


পুজোর ইতিহাস...
ঠিকাদারি ছিল চোংদারদের পারিবারিক ব্যবসা। রাজ্যের বহু সড়ক ও সেতু তৈরি করেছিলেন এই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা। প্রায় ৪৫০ বছর আগে, এই পরিবারের পূর্বপুরুষ, চতুর্ভূজ চোংদার দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই নিয়ম মেনেই পুজো চলে আসছে। শাক্ত মতে পুজো করা হয়। পালি ভাষার লেখা পুঁথি অনুসরণ করা হয় উপাচার। শোনা যায়, একসময় দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে এখানে কামান দাগা হত। এখন সে রীতি বন্ধ।এক সময় মোষ,মেষ ও ছাগ বলির চল থাকলেও বর্তমানে সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে চালকুমড়ো বলি হয়। অষ্টমীতে কুমারী পুজোর প্রচলনও রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, চতুর্ভুজ চোংদার পুজো করার মাঝেই মারা গিয়েছিলেন। স্ত্রীও স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেন। তাই দশমীর দিন ঠাকুরদালানে পূর্বপুরুষদের  শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করার রীতিও রয়েছে। 


ভোগের টুকিটাকি...
ঐতিহ্যশালী এই পুজোয় ৫১টি থালায় ভোগ দেওয়া হয়। ভোগে থাকে দুধ,ছানা,ক্ষীর, লুচি,মাছের-টক সহ নানা পদ। একসময়ে পুজোর ৫ দিনই চোংদার বাড়িতে গ্রামের সকলের নিমন্ত্রণ থাকত। এখন শুধু নবমীতেই নিমন্ত্রণ থাকলে সকলের। ইতিহাস বলছে, পুজো উপলক্ষে বাড়িতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন হত। কলকাতার বড় বড় যাত্রা দলের আসরও বসত সেখানে। সময়ের সঙ্গে সেই জাঁকজমক কমেছে, কিন্তু মহিষাসুরমর্দিনীর পুজোয় নিয়মের কোনও ত্রুটি রাখেন না চোংদার বাড়ির উত্তরাধিকারীরা। সকলেই এই সময়টা এখানে চলে আসেন। বর্ধমান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে গুসকরার এই চোংদার বাড়ি। বর্ধমান থেকে রামপুরহাট শাখার ট্রেন ধরে গুসকরা স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে টোটো করে ১.৫ কিলোমিটার গেলেই সাড়ে চারশো বছরের পুরনো পুজোর প্রস্তুতি চোখে পড়বে। বয়সের ভারে হয়তো সেই বাড়ির অনেকাংশে খসে পড়েছে। তবে নিষ্ঠার নিরিখে আজও অনন্য।


 


আরও পড়ুন:দমদম পার্ক ভারতচক্রে এবার অনন্য ভাবনা, মণ্ডপজুড়ে পুতুলনাচ ! ব্যাপারটা কী ?