কলকাতা: হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষেরা বিশ্বাস করেন, পুরাণ কাব্য অনুসারে, প্রতি যুগের অন্তিম পর্যায় ভগবান শ্রী বিষ্ণু তাঁর অবতার নিয়ে ধরাধামে আসেন যুগের অন্ত করে নতুন যুগের সূচনা করতে। ভারতের সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস দ্বাপর যুগে জন্ম হয়েছিল ভগবান শ্রী বিষ্ণুর কৃষ্ণ অবতারের আগমনের পর।
কিন্তু ভারতের এই সুপ্রাচীন মহাকাব্যের সঙ্গে জড়িত বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তির কারণে ঐতিহাসিকদের মধ্যে অনেক মতবিরোধ আছে পুরাণ কাহিনীতে বর্ণিত শ্রী কৃষ্ণের অলৌকিকত্ব নিয়ে। তবে কৃষ্ণ জন্মভূমি বৃন্দাবনকে ঘিরে এখনও অনেক রহস্য ছড়িয়ে আছে যার কোন ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য ব্যখ্যা করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে যে মথুরা, বৃন্দাবন নামে প্রসিদ্ধ ধর্মস্থান গড়ে উঠেছে, বলা হয় দ্বাপর যুগের এই শ্রী কৃষ্ণ জন্মভূমির কাছে নিধিবন নামে একটি স্থান আছে। এই সেখানে অবস্থিত রঙমহল নামে একটি হিন্দু ধর্মীয় স্থান। অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে হাজার হাজার বছরের পুরনো ১৬০০১০৮টি তুলসি বৃক্ষ দিয়ে, স্থানীয় ভাষায় এই তুলসি বৃক্ষকে পিলু বৃক্ষ বলা হয়।
বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তুলসি গাছগুলি আলোর বিপরীতেই বেড়ে চলেছে। যেন পুণ্যভূমিকে মাটি স্পর্শ করে আছে। এলাকার মানুষের বিশ্বাস, এই স্থানেই শ্রী কৃষ্ণ দ্বাপর যুগে তাঁর গোপী অর্থাৎ গুপ্ত সখীদের নিয়ে রাসলীলা করতেন। আর তাদের বিশ্বাস আসলে এই ১০০১০৮টি তুলসি বৃক্ষ আসলে শ্রী কৃষ্ণের সখী, যারা রাতের বেলা মনুষ্য রূপ ধারণ করেন ভগবানের সাথে রাসে অংশ নিতে।
কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, পৃথিবীর সাতটি রহস্যময় স্থানগুলির মধ্যে এই স্থানটিও বিশেষ রহস্য বহন করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে। এই নিধিবন প্রাচীন হিন্দু পুরণ, মহাকাব্য অনুসারে শ্রী কৃষ্ণ জন্মভূমির কাছে অবস্থিত। এই স্থানে রঙমহল বলে একটি স্থান আছে। যাকে দ্বাপর যুগের রাস মঞ্চ বলা হতো।
লোক কথা অনুসারে, গোপীদের নিয়ে এই রঙমহলেই মধ্যরাতে রাসলীলায় অংশ নিতেন শ্রী কৃষ্ণ। আর অদ্ভুত বিষয় এটাই যে এই অঞ্চলের মানুষ এখনও বিশ্বাস করেন প্রতি রাতে এখানে এখনও শ্রী কৃষ্ণ অসেন তার গোপীদের সঙ্গে প্রেম রাসে অংশ নিতে। সেই বিশ্বাসকে গুরুত্ব দিয়ে আজও ওই অঞ্চলে রাত নামার আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় রঙমহলের মূল মন্দিরের দরজা। আর মন্দির বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা নিধিবন অঞ্চল ফাঁকা করে দেওয়া হয় আর ভালো ভাবে তল্লাশি নেওয়া হয় গোটা এলাকার, যাতে নিধিবন সংলগ্ন মন্দিরের আসেপাশে একজনও মানুষ না থাকে।
স্থানীয় লোক কথা অনুসারে, রাতের অন্ধকার নামতেই নিধিবন সংলগ্ন চারপাশের অঞ্চল শুধু যে জনমানব শূণ্য হয়ে যায় তা নয় গোটা এলাকায় থাকেনা কেন পশু পক্ষীও। এমনকি নিধিবন সংলগ্ন অঞ্চলে যে বাঁদরগুলি ঘুরে বেড়ায় তারাও রাতের অন্ধকার নামতেই প্রস্থান করে এলাকা ছেড়ে, থাকেনা একটা পাখিও। এমন কি চারপাশের বাড়িতে নিধিবনের দিক করে জানালা পর্যন্ত তৈরী করা হয় না।
কী এই নিধিবন রহস্য? কেন রাতের পর কোন মানুষ এই অঞ্চলের দিকে তাকিয়েও দেখে না? স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস এই স্থানে রাতে যে থাকে তার দৃষ্টি শক্তি ও বাক্ শক্তি হারিয়ে যায়। প্রতি রাতে সন্ধ্যারতির পর মন্দিরে রূপোর পালঙ্ক সাজিয়ে রাখা হয়। থালায় পান ও লাড্ডু ভোগ হিসাবে রাখা থাকে। প্রতিদিনের মতো রোজ ভোরে মঙ্গল আরতির সময় সেই স্থানে সমস্থ জিনিস ব্যবহৃত অবস্থায় পান মন্দিরের প্রধান পুরোহিত।
মন্দিরের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে শাড়ি, শৃঙ্গারের দ্রব্য, এলোমেলো অবস্থায় থাকে বিছানা। পান ও লাড্ডু ভোগ অর্ধের অবস্থায় পাওয়া যায়। অনেকে অবশ্য মনে করেন এই ঘটনা কোন মানুষ অথবা জীব করে থাকে। যদিও বা সেই দাবির কোন সত্যতা প্রমান করতে পারেনি নৃতত্ত্ব গবেষকরা। স্থানীয় মানুষ বেঁচে আছে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের উপস্থিতির প্রাচীন কথাকে নিয়ে। তাঁরা এখনও দাবি করেন, ওই অঞ্চলে রাতের বেলা সাধু সন্তরা বাঁশীর সুর ও নূপুরের ধ্বনি শুনতে পান। বিজ্ঞান আর বিশ্বাসের দ্বন্ব চলছেই যুগ যুগ ধরে। আর নিধিবন থেকে গেছে পৃথিবীর রহস্যের আঁধারে।
ডিসক্লেমার: এখানে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র অনুমান এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে। এখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে এবিপি লাইভ কোনও ধরনের বিশ্বাস, তথ্য সমর্থন করে না।