নৈহাটি : এক-দু'জনের নয়। অগুণিত মানুষের মনোস্কামনা পূরণ হয়েছে। কঠিন সময়ে মা-কে ডেকে পেয়েছেন ফল। মা কাউকে নিরাশ করেন না, এমনই বিশ্বাস ভক্তদের। তাই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন তাঁরা। মায়ের টানে। মনোস্কামনা পূরণ হলে মায়ের কাছে এসে কার্যত আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তাঁরা। পুজোর দিনে এত ভিড় হয় যে কাউকে সরানো যায় না। এমনকী তারাপীঠ-দক্ষিণেশ্বরের থেকেও বেশি ভিড় হয় বলে জানিয়েছিলেন নৈহাটির বড় মায়ের পুজো কমিটির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য।
তিনি বলেছিলেন, "কালীপুজোর দিন এই জায়গাটায় একটা অন্য রূপ চলে আসে এখানে। ওই সময় দক্ষিণেশ্বর-তারাপীঠে যেরকম একটা রূপ আসে, মানুষের শুধু মাথা...সেরকম মাথা। ফুল, মালা, ডালা নিয়ে এসে মায়ের সামনে পড়ে আছেন। আর এখানে ১০-১৫ হাজার লোক দণ্ডি কাটছেন ! এই রাস্তার উপরে আমাদের পুরো প্রশাসন কার্পেট পেতে দেন। হাজার হাজার লোক দণ্ডি কাটছেন মায়ের কাছে। সেখানে কিছু লোক পেয়ে গেছেন, কিছু লোক পাবেন। মায়ের কাছে আসবে, মায়ের পায়ের তলায় দণ্ডিটা শেষ করবেন, পুজো দেবেন। আমাদের প্রধান আকর্ষণ, মা-কে গয়না পরানো। ওই সময় আপনি কাউকে সরাতে পারবেন না। এক একটা স্তম্ভ। এক একটা মানুষ এক একটা স্তম্ভ হয়ে যায়। আমি ঠেললেও সরবে না। লোকে হাতে গয়না নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যে, আমি গয়নাটা মায়ের গায়ে ঠেকাব। ওইদিনটা এখানে তারাপীঠ-দক্ষিণেশ্বরের থেকেও বেশি ভিড় হয়। আরতিও দেখার মতো। চারজন পুরোহিত একসঙ্গে আরতি করেন। ভোগ-আরতি। সন্ধেবেলায় হবে। দুপুরেও হবে।"
কীভাবে শুরু নৈহাটির বড় মায়ের পুজো ?
তাপসবাবুর কথায়, "এ পুজো শুরু করেছিলেন ভবেশ চক্রবর্তী। মন্দিরের পাশেই তাঁর বাড়ি। উনি এবং ওঁর বন্ধুরা নবদ্বীপ ঘুরতে গিয়েছিলেন। তিন-চার জন বন্ধু মিলে। নবদ্বীপে রাসপুজোয় অনেক বড় বড় মূর্তি হয়। সেইসব মূর্তি টেনে টেনে ভাসান দেওয়া হয়। উনি সেখানে গিয়ে এসব দেখেন। এরপর নৈহাটি ফিরলে, ওঁকে স্বপ্নে দেখা দেন মা। যে, আমাদের বাড়ির পুজোটা বড় করা যেতে পারে। সেটা বড় করা গেলে নৈহাটির বুকে একটা বড় উচ্চতার পুজো হবে। তখন ওঁর মনে হয়, এর উচ্চতা হবে ২২ ফুট এবং ১৪ হাত। তখন থেকেই এই পুজোর শুরু। ঠিক লক্ষ্মীপুজোর দিন, একটা কাঠামোর ওপরে, চাকা দেওয়া একটা ট্রলি তৈরি করেন। সেই ট্রলিতে মা-কে দাঁড় করানো হয়। সেরকম লক্ষ্মীপুজোর দিন কাঠামোর পুজো হয় এখানে। সেদিন থেকেই বাঁশ পড়ে যায় এবং মা-কে তৈরি করা হয়। ২০১২ সালে ওঁর ছেলের হাত থেকে আমাদের হাতে দায়িত্ব আসে। ২০১২ সালের পর থেকে নৈহাটির মানুষ আর বড় কালী বলেননি, বড় মা বলতে শুরু করেন।"