কলকাতা: বাঙালির তেরো পার্বণের অন্যতম একটি পার্বণ বা উৎসব হল পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। এই সময়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে এই উৎসব পালিত হয়। এই উৎসব পালিত হবে ১৫ জানুয়ারি, সোমবার।
এই পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতি হিন্দু ঘরে ঘরে পালন করা হয় নানান নিয়মকানুন। কিন্তু জানেন কি এই পৌষ সংক্রান্তির উৎপত্তি কিভাবে? কেন পালন করা হয় এই পৌষ সংক্রান্তির নিয়ম?
পুরাণ মতে, এই পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কথিত রয়েছে, এই মকর সংক্রান্তিতে সূর্য পুত্র শনিদেবকে নিয়ে নিজ বাড়িতে গমন করেন। এছাড়াও শোনা যায় মহাভারতের ভীষ্ম পিতামহ শরশয্যায় ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন এই দিনেই। দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের যে দ্বন্দ্ব চলছিল সেই দ্বন্দ্বের সমাপ্ত হয়েছিল এই মকর সংক্রান্তিতেই। অসুরদের বধ করে শুভ শক্তির সূচনা ঘটেছিল পৌষ সংক্রান্তিতেই। তাই এই সময় থেকে যেকোনো ধরনের শুভ কাজের সূচনা হয়ে থাকে। অত্যন্ত শুভ সময় বলা হয় মকর সংক্রান্তির সময়টাকে।
পৌষ সংক্রান্তির উৎপত্তি
হিন্দু পঞ্জিকা মতে ‘সংক্রান্তি’ কথার অর্থ হল মাসের শেষ তারিখ। সেই অনুযায়ী পৌষ মাসের শেষ তারিখে পৌষ সংক্রান্তি পালন করা হয়। প্রতি বাড়িতেই নানারকম পিঠে-পুলি তৈরি করা হয়। অপরদিকে জ্যোতিষ শাস্ত্রে ‘সংক্রান্তি’ কথার অর্থ হলো বিচরণ করা। অর্থাৎ প্রতিমাসেই সূর্য গ্রহ বিভিন্ন রাশিতে গমন করে, সেই অনুযায়ী পৌষ সংক্রান্তির শেষে সূর্য গমন করে মকর রাশিতে। আর এই সময়টিকে মকর সংক্রান্তি বলা হয়। এদিন সূর্যের দক্ষিণায়ণ সমাপ্ত এবং উত্তরায়ণ পালিত হয়। শুভ কাজগুলি এই দিন থেকেই শুরু হয় ।
মকর সংক্রান্তির নিয়ম-কানুন
শাস্ত্র মতে, মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তিতে হিন্দু ঘরে ঘরে নানা নিয়মমাচার পালন করা হয়। শুধু এই দিন নয়, মকর সংক্রান্তির আগে থেকেই গৃহ পরিষ্কার করা, শুদ্ধিকরণ করা শুরু করে বাঙালিরা। গ্রাম বাংলার হিন্দু বাড়িতে আলপনা আঁকা হয়। এদিন অনেকেই মিষ্টি, গুড় বিতরণ করে। প্রতি হিন্দু বাড়িতে লক্ষ্মী পূজা করা হয় এই মকর সংক্রান্তিতে।
মকর সংক্রান্তির অন্যতম নিয়ম হলো পিঠে-পুলি করা। এই উৎসবটিকে পিঠে-পুলি উৎসব বলেও নামাঙ্কিত করা হয়। চালের গুড়ি, দুধ, নারকেল, গুড় প্রভৃতি উপকরণ দিয়ে নানা ধরনের পিঠে পায়েস তৈরি করে স্বাগত জানানো হয় নতুন মাসের।
এদিন বহু জায়গায় ঘুড়ি ওড়ানোর চল রয়েছে। সবাই একত্রে হয়ে মকর সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ায়। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মকর সংক্রান্তিতে কোথাও গিয়ে রাত থাকা উচিত নয় বলে বিবেচিত হয়। এমনকি দুর ভ্রমণেও যাওয়া অনুচিত। যদি কোথাও কেউ যায় তাহলে সেদিনই তাকে বাড়ি ফিরে আসতে হয়। মূলত এদিন অশুভ শক্তির বিদায় জানিয়ে শুভ শক্তির আগমন করা হয় প্রতি হিন্দু বাড়িতে।
আরও পড়ুন, মকর সংক্রান্তির আগে করুন এই সহজ কাজ, অর্থলাভ আর চাকরির উন্নতি আপনার দুয়ারেই
ভারতবর্ষের অঞ্চলভেদে বিভিন্ন জায়গায় এই মকর সংক্রান্তি বা পিঠে-পুলি উৎসবের নিয়ম রীতি ভিন্ন ধরনের রয়েছে। সেই অনুযায়ী দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরদ্বীপে এই উৎসব উপলক্ষে সাগরমেলা আয়োজিত হয়। জনে জনে পুণ্যার্থী এই উৎসবে উপস্থিত হয় এবং গঙ্গা স্নান করে পূণ্যতা অর্জন করেন। শুধু দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা নয়, বাংলার বীরভূম জেলার কেঁদুলি গ্রামেও পৌষ পার্বণ উপলক্ষে জয়দেব মেলা বসে। নানা ধরনের অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বাউল গান, ভাদু, টুসু প্রভৃতি গানে সেখানের মানুষরা নাচে গানে মেতে ওঠে। চলে নানা ধরনের মেলা।