জগন্নাথ রথযাত্রা 2023: সৈকত-শহর পুরীর রথযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা কিংবদন্তী। অন্যান্য অনেক জায়গাতেই এখন মহাসমারোহে রথযাত্রা পালিত হয়। তবুও পূণ্যভূমি পুরীর মাহাত্ম্য স্বতন্ত্র। নিয়ম মেনে, প্রতিবছর ২২টি সিঁড়ি বা ধাপ বেয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে নামানো হয়। যাঁকে বলে ‘বৈশি পঁহচা’। পুরীর মন্দিরের সিংহদুয়ার থেকে কুর্মবেড়া পর্যন্ত এই ‘বৈশি পঁহচা’র প্রতিটি ধাপ খোন্ডালাইট পাথর দিয়ে তৈরি। এই স্থানটিকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করেন পুণ্যার্থীরা। রথ ঘিরে এমন অজস্র রীতিনিয়ম। 


জগন্নাথদেবের রথের নাম ‘নন্দীঘোষ’। রথের সারথির নাম দারুক। রথে  থাকে ১৬ টি চাকা। চাকার পরিধি ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি। কথিত আছে, এই রথের নাম দেন স্বয়ং ইন্দ্র। ছোট-বড় আকারের মোট ৮৩২টি কাঠের টুকরো দিয়ে এই রথ নির্মাণ করা হয়। জগন্নাথ দেবের রথের উচ্চতা সাড়ে তেরো মিটার অর্থাত্‍ ৪৫ ফুট। বলরামের রথকে বলা হয় তালধ্বজ।  সুভদ্রার রথের নাম দেবদলন বা পদ্মধ্বজ। 


রথ তৈরির নিয়ম









রথ তৈরির কারিগররা একই সময়ে খান। এই সময়টা তাঁরা আমিষ খাবার খেতে পারে না। তাঁদের খেতে হয় ছিমছাম খাবার। এই সময়ে, কারিগরদের ব্রহ্মচর্য পালন করা বাধ্যতামূলক। সুতক বা পাটকের মতো কারিগরের পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে যদি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তবে সেই কারিগরকে রথ তৈরির কাজ থেকে সরে আসতে হয়। 


সোনার কুড়াল দিয়ে রথের কাঠ কাটা হয়

জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার জন্য রথ তৈরির কাজ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে। রথ তৈরির জন্য জঙ্গল থেকে কাঠ আনা হয়। মন্দির কমিটির তরফে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে খবর পাঠানো হয়। তারপরে মন্দিরের পুরোহিতরা জঙ্গলে গিয়ে সেই গাছের পুজো করেন । নির্দিষ্ট সেই গাছের গুঁড়ি সোনার কুড়াল দিয়ে কাটা হয়। এই কুঠারটি প্রথমে ভগবান জগন্নাথের মূর্তির পায়ে স্পর্শ করানো হয়।


কোন কোন গাছের কাঠ রথে ব্যবহার করা হয়


জগন্নাথের রথ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় নিম ও হাঁসি গাছের কাঠ। রথযাত্রায় ভগবান জগন্নাথ,  বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রা প্রত্যেকেরই  রথ তৈরি করা হয়। এভাবে মোট ৩টি রথ তৈরি হয়। তিনটি রথ নির্মাণের জন্য প্রায় ৮৮৪ টি গাছের ১২ ফুটের কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। এগুলি থেকে রথের স্তম্ভগুলি তৈরি করা হয়।