১৯৬০-এর আগে পর্যন্ত হিংলাজ তীর্থ অনেক বাঙালির কাছেই ছিল অচেনা। ১৯৫৯-এ বেশিরভাগ বাঙালি হিংলাজ তীর্থ সম্পর্কে জানল উত্তমকুমার-বিকাশ রায়ের ছবির হাত ধরে - মরুতীর্থ হিংলাজ । বালুচিস্তানের রুক্ষ মরুপ্রান্তরে নিঃসঙ্গ এক হিন্দু তীর্থ, হিংলাজ। বহু প্রাচীনকাল থেকেই দেবী এখানে কোট্টরী ও ভৈরব ভীমলোচন রূপে পূজিত হন। স্থানীয়রা বলেন হিংলাজ দেবী। এই মন্দিরের নামেই গোটা গ্রামের নাম হিংলাজ। মূল সংস্কৃত শব্দটি হল "হিঙ্গুলা"৷
হিংলাজে কেমন মায়ের রূপ?
পুরাণ মতে, এই বালুচিস্তানের হিংলাজেই পড়েছিল সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র। সিঁদুর লেপা এক খণ্ড পাথরই সর্বজনপূজিতা দেবী হিংলাজ। সঙ্কীর্ণ গিরিখাত, তার মাঝে একটি গুহা। আর সেই গুহাই মহাশক্তিস্থল। গুহাটির উচ্চতা কমপক্ষে ৩০ ফুট। চওড়ায় ৬০ থেকে সত্তর ফুট। নীচে মরীচিকার মতো বয়ে চলেছে হিঙ্গোল নদী। নদীটি আছে, এই নেই। বর্ষায় ফেঁপে উঠে এই নদী হয়ে ওঠে স্রোতস্বিনী। যে স্রোত রুদ্ধ করে দেয় গুহায় প্রবেশের পথ।
হিংলাজের গায়ে কাঁটা দেওয়া গল্প
হিংলাজ মন্দিরকে ঘিরে নানা ইতিহাস ও কিংবদন্তি। ভক্তদের বিশ্বাস, যিনি যতই পাপ করে থাকুন না কেন, এমনকী পূর্ব জন্মের কোনও পাপ থাকলেও, এই মহাশক্তিস্থলে এলে সব পাপই বিলীন হয়ে যায়। হিংলাজের পরতে পরতে জড়িয়ে এমন নানা লোকগাথা। মন্দিরের কাছে আছে একটি কুণ্ড। সেই কুণ্ড ঘিরেও রয়েছে নানা বিশ্বাল। বলা হয়, কুণ্ডের মধ্যে অবিরাম ফুটতে থাকে কাদা মাটি । সেই ফুটন্ত কুণ্ডের কাছে এসে অন্তর থেকে নিজের পাপের কথা বললে নাকি দেবী মাফ করে দেন। মুছে যায় গ্লানি। ঘটে পাপমুক্তি। কথিত আছে, রাবণ যেহেতু ব্রাহ্মণ ছিলেন, তাই রাবণ বধের পর এই হিংলাজে এসেই দীর্ঘদিন ধরে তপস্যা করে পাপস্খালন করেছিলেন স্বয়ং রামচন্দ্র। এতটাই মাহাত্ম্য হিংলাজের।
কোথায় অবস্থিত হিংলাজ
পাকিস্তানের করাচি থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে, উত্তর-পূর্ব দিকে বালুচিস্তান প্রদেশের মকরান মরুভূমির উপর অবস্থিত এই হিংলাজ তীর্থক্ষেত্র।
হিন্দু ও মুসলিম উভয়ের দ্বারাই পূজিতা দেবী
প্রতি বছর এপ্রিলে হিংলাজে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। যাতে হিন্দু-মুসলমান, সকলেই সামিল হন। রীতি অনুযায়ী, নৈবেদ্য হিসেবে ৩টি করে নারকেল দেন সব ভক্ত। বছরে পর বছর ধরে এইভাবেই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী হিংলাজ।
বালুচিস্তান প্রদেশের হিঙ্গুল ন্যাশনাল পার্কের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে হিঙ্গুল নদী। এই নদীর ধারেই একটি দুর্গম পর্বতের মধ্যে বিরাজ করছেন বালুচিস্তানের ‘নানী কি হজ’ । পাকিস্তানের মুসলিমরা এই নামেই চেনে মরুতীর্থ হিংলাজকে। জানা যায়, এই হিন্দুদেবী পূজিত হন বালুচ মুসলিমদের দ্বারাও। সংসারের সবাইকে নিরাপদে রাখা ও প্রিয় মানুষের মঙ্গল কামনায় এই দেবীর দরবারে আসেন তাঁরা। হিংলাজ তীর্থ মরু প্রান্তরে। তাই প্রসাদও শুকনো। হিংলাজ মাতাকে নিবেদন করা হয় শুকনো নারকেল, মিছরি, বাতাসা।
খুব কম মানুষের কপালেই হিংলাজ দর্শন লেখা থাকে। কারণ হিংলাজ যেমন দুর্গম, তেমনভাবে এটাও সত্যি হিংলাজ এখন বালুচিস্তানে। বিদেশের মাটিতে গিয়ে সতীপীঠে দর্শনের সুযোগ খুব কম মানুষেরই হয়।
কীভাবে যেতে হবে হিংলাজে :
করাচি থেকে কোস্টাল হাইওয়ে ধরে বাসে বা গাড়িতে করে পৌঁছনো যায় হিংলাজে।
তথ্যসূত্র : পাকিস্তানের মরুতীর্থ হিংলাজ
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।