কলকাতা: তিনি উনবিংশ শতকের প্রাণপুরুষ। সকল জীবের মধ্যেই ঈশ্বর বাস করে, সেই বোধদয় জাগিয়ে গিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। জীবনবোধ থেকে সমাজসংস্কার, ঈশ্বর চেতনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য- কোন আঙ্গিকে এগিয়ে চললে তা জীবনের পাথেয় হয়ে থাকে, সেই দিকনির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ৪ জুলাই, মাত্র ৩৯ বছরে তাঁর নশ্বর দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হলেও চিরন্তন হয়ে রয়েছে তাঁর অমর বাণী। সেই বাণীই আজ জীবনীশক্তি হয়ে রয়ে গিয়েছে সমাজে। 


ভারতের ইতিহাসে স্বামী বিবেকানন্দ এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক প্রাণপুরুষ নজর কেড়েছিলেন পাশ্চাত্যরও। পশ্চিমে যোগ এবং বেদান্তের প্রবর্তনে তার অবদান আজও অনস্বীকার্য। 


স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও শিক্ষা: 


শৈশব জীবন থেকেই তিনি সাহসী, কৌতূহল প্রিয়ই ছিলেন। প্রথম জীবনে গৃহশিক্ষকের কাছে প্রারম্ভিক শিক্ষা অর্জনের পরে মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন থেকে নরেন্দ্রনাথ প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাশ করে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন।তারপর সেখান থেকে ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজ। এফ এ পাশ করে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে বি এতে ভর্তি হন। এরপর ওই কলেজ থেকেই দর্শনশাস্ত্র নিয়ে তিনি স্নাতক হন৷


আধুনিক শিক্ষার প্রাণপুরুষ রূপে তিনি বলেন “Education is the manifestation of perfection already in man” অর্থাৎ তিনি বলেন মানুষের মধ্যে যে অন্তনিহিত সুপ্ত সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে তার পরিপূর্ণ বিকাশসাধনই হল শিক্ষা। তিনি বৃত্তি শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শারীরশিক্ষা, গণশিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।


আরও পড়ুন, নিজে পরিবেশন,শিষ্যার হাত ধুইয়ে দেওয়া, কেমন ছিল বিবেকানন্দ-নিবেদিতার শেষ দেখা


রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ছিলেন তাঁর আধ্যাত্মিকতার গুরু। তাঁর কাছেই বিবেকানন্দ শিখেছিলেন – সকল জীবের মধ্যেই ঈশ্বর বাস করে, অতএব জীবের সেবা করে মানেই ঈশ্বরের সেবা করা। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভারতবর্ষ ও হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং আমেরিকার শিকাগোতে বক্তৃতা দেন। তাঁর তেজময়ী ভাষণে মুগ্ধ হয়ে যান উপস্থিত শ্রোতারা।


তিনিই শিখিয়ে গিয়েছিলেন, "এসো, মানুষ হও। নিজেদের সংকীর্ণ গর্ত থেকে বাইরে গিয়ে দেখ, সব জাতি কেমন উন্নতির পথে চলেছে। তোমরা কি মানুষকে ভালোবাসো? তোমরা কি দেশকে ভালোবাসো? তাহলে এসো, আমরা ভাল হবার জন্য উন্নত হবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করি। পেছনে চেয়ো না-অতিপ্রিয় আত্মীয়স্বজন কাঁদুক; পেছনে চেয়ো না, সামনে এগিয়ে যাও।"