নয়াদিল্লি: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে 'চন্দ্রযান-৩'। চন্দ্রপৃষ্ঠে তার অবতরণের দিকে এই মুহূর্তে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব (ISRO Sun Mission)। তার মধ্যেই নয়া অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)। তবে চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহ নয়, তাদের ছাপিয়ে এবার সৌর অভিযানই লক্ষ্য ISRO-র। সূর্যের গতিবিধি এবং তার বুকে ঘটে চলা ঘটনাবলীর দিকে নজর রাখতে মহাকাশে সৌরযান Aditya-L1 পাঠাচ্ছে ISRO.


ISRO-র একটি সূত্র জানচ্ছে, অগাস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে উৎক্ষেপণ হতে পারে Aditya-L1 সৌরযানের। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে ২৬ অগাস্ট Aditya-L1 সৌরযানের উৎক্ষেপণ হতে পারে। এই মুহূর্তে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। বহনক্ষমতা, যন্ত্রাংশের কর্মক্ষমতা, বার বার যাচাই করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা, যাতে কোথাও কোনও ত্রুটি, ভুলচুক না থাকে। তবে এই অভিযান ISRO-র জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, ২৩ অথবা ২৪ অগাস্ট চন্দ্রপৃষ্ঠে পালকের মতো অবতরণ করানোর কথা 'চন্দ্রযান-৩'-কে। আর তার ঠিক পর পরই, ২৬ অগাস্ট Aditya-L1 সৌরযানের উৎক্ষেপণ হতে পারে। (Aditya-L1 Launch)


সূর্যকে নিয়ে গবেষণায় এই প্রথম কোনও অভিযান ISRO-র। আপাতত যা খবর মিলেছে, সেই অনুযায়ীস সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যেকার ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে অবস্থান করবে Aditya-L1 সৌরযানটি। মহাশূন্যে সূর্য এবং পৃথিবীর মতো দুই বস্তুর পারস্পরিক আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের ফলে যে স্থিতিশীল অঞ্চল গড়ে ওঠে, তাকেই বলে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট। এই ল্য়াগ্রেঞ্জ পয়েন্টকে মহাকাশযানের পার্কিং স্পটও বলা হয়। কারণ সেখানে কম জ্বালানি খরচ করে, মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডের উপর নির্বিঘ্নে নজরদরি চালানো যায়। 


আরও পড়ুন: Coral Reefs: সমুদ্রগর্ভের বৃষ্টি অরণ্য, বাস্তুতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী, উষ্ণায়নের প্রকোপে রঙিন প্রবাল এখন বিবর্ণ, নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে


সূর্যের যে আলোকমণ্ডল, অর্থাৎ চাকতির আকারে যে আলোর ছটা দেখা যায়, সেখানকার তাপমাত্রা কয়েক লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। সৌরস্পৃষ্ঠের চেয়েও বেশি তাপমাত্রা সূর্যের এই বহিরাবরণের। এর কার্যকারণও অত্যন্ত জটিল। তবে সহজ ভাবে বুঝতে গেলে মোমবাতির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। মোমবাতির শিখার কাছে গেলে যেমন গরম অনুভূত হয়, দূরে গেলে আবার স্বাভাবিক বোধ হয়, খনিকটা তেমনই। ব্রহ্মাণ্ড, পৃথিবী, গ্রহ, উপগ্রহগুলি কী ভাবে সূর্যের দ্বার প্রভাবিত, এই আলোকমণ্ডলের মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার নেপথ্যকারণই বা কী, তা পর্যবেক্ষণ করবে Aditya-L1 সৌরযানটি। Aditya-L1 সৌরযানটি ভারতের প্রথম হেলিওফিজিক্স অবজার্ভেটরি। 


সূর্যের উপর নজরদারি চালাতে করোনাগ্রাফ ব্যবহার করবে Aditya-L1 সৌরযান। এই করোনাগ্রাফ হল এমন একটি যন্ত্র, যা সৌরযানের উপর বসানো একটি চাকতি। তাতে সূর্যরশ্মি আবদ্ধ হয়ে যায় এবং ওই চাকতির মধ্যেই সূর্যের বহিরাবরণ ফুটে ওঠে, যা দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো সম্ভব হয়। এই করোনাগ্রাফ না থাকলে সৌরযানের সেন্সর কাজ করবে না। এ বছরের গোড়ায় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (IIA) ISRO-র হাতে নিজেদের তৈরি ভিজিবল লাইন এমিসন করোনাগ্রাফ (VELC) তুলে দেয়। সেটিই বসানো হবে Aditya-L1 সৌরযানে।


তবে এই করোনাগ্রাফ ছাড়াও, Aditya-L1 সৌরযানে ছ'টি যন্ত্র থাকছে। এর মধ্যে চারটি দূর থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হবে। বাকি তিনটি সূর্য থেকে সৌরঝড়ের মাধ্যমে বাইরে ঠিকরে বেরনো অণু পরীক্ষা করে দেখবে, সৌরজগতের উপর তার কী প্রভাব, দেখা হবে খতিয়ে।


সূর্যে বদমেজাজি আচরণের জন্যই এই সৌরঝড়ের সৃষ্টি, যা মানব সভ্য়তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে বিদ্যুৎহীন হয়ে যেতে পারে গোটা বিশ্ব। বিঘ্নিত হবে রেডিও সংযোগ, বিমান এবং জাহাজের দিক নির্ধারণে বিপত্তি বাধবে। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ প্রবেশ করতে পারে মানবদেহে। তাই সূর্যের বাইরের আবরণের মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার উৎস বোঝা জরুরি বলে মত বিজ্ঞানীদের, যাতে আগামী দিনে বিপর্যয়ের মোকাবিলা করা যেতে পারে।