নয়াদিল্লি: বিবর্তনের ইতিহাস থেকে দেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বাদ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক চলছেই। তার মধ্যেই ফের কাঠগড়ায় ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT). চন্দ্রযান-৩ অভিযান ঘিরে পড়ুয়াদের ভুল পাঠ দেওয়ার অভিযোগ উঠল তাদের বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি জারি করলেন অল ইন্ডিয়া পিপলস সায়েন্স নেটওয়র্কের (AIPSN) সঙ্গে যুক্ত ৪০ বিজ্ঞানী। (NCERT Modules on Chandrayaan 3)


পড়ুয়াদের জন্য তৈরি মডিউলে চন্দ্রযান-৩ অভিযান নিয়ে বহু ভুল তথ্য রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে AIPSN. তাদের দাবি ওই মডিউলে উল্লেখ্য তথ্যে ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’, ‘অবৈজ্ঞানিক দাবি’, ‘বিভ্রান্তিকর বিষয়’  রয়েছে। শুধু তাই নয়, মডিউলে ‘নাৎজি বিজ্ঞানীর’ উল্লেখ থেকে পুরাণের উল্লেখও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে, যা বিজ্ঞানের সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যহীন। (Chandrayaan 3)


এর জন্য সরাসরি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের কাছে আবেদন জানিয়েছেনব AIPSN-এর প্রেসিডেন্ট সত্যজিৎ রায়। তাঁর বক্তব্য, “প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর।” অবিলম্বে ওই সমস্ত ভুল তথ্য তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন তিনি।



আরও পড়ুন: Iceland Earthquakes: পর পর ৮০০ বার ভূমিকম্প, মাটি ঠেলে উঠে আসছে লাভার স্রোত, জরুরি অবস্থা আইসল্যান্ডে


গত ১৭ অক্টোবর NCERT-র তরফে ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষার পাঠ্যবইয়ে চন্দ্রযান-৩ সংক্রান্ত বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়, যে মডিউলের নাম ‘চন্দ্রযান উৎসব’। চন্দ্রযান-৩ অভিযান নিয়ে শিশুদের প্রাথমিক জ্ঞানের সঞ্চার ঘটাতেই এমন উদ্যোগ বলে জানানো হয়। এর আওতায় শ্রেণিকক্ষে শিশুদের মহাকাশযান সম্পর্কে ধারণা গড়ে তোলা এবং কাগজ দিয়ে মহাকাশযানের মডেল তৈরি করানোর কথা বলা হয়।


কিন্তু বিজ্ঞানশিক্ষার নামে যে বিষয়বস্তু তুলে ধরা হচ্ছে শিশুদের সামনে, তাতে পুরাণ এবং বেদের উল্লেখ রয়েছে বলে অভিযোগ। বলা হয়েছে, বহু শতক আগেই আধুনিক মহাকাশ প্রযুক্তি গড়ে তোলেন প্রাচীন ভারতীয়রা। তার প্রমাণস্বরূপ NCERT-র মডিউলের লেখায় পৌরাণিক রথের উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে, প্রাচীন কালে উড়ন্ত রথ এবং উড়ন্ত বিমান ছিল। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেগুলি ব্যবহার করা হতো। কাল্পনিক লেখাকে সত্য বলে চালানো হচ্ছে কেন, প্রশ্ন তুলেছেন বিজ্ঞানীরা। NCERT-র মডিউইলে প্রায় প্রায় সর্বত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উল্লেখ রয়েছে, তার নেতৃত্বগুণেই চন্দ্রযান-৩ সাফল্য পায় এবং চাঁদের বুকে ভারতের নাম লেখা হয় বলে উল্লেখ রয়েছে।


বিজ্ঞানশিক্ষার নামে যে মডিউলে বিষয়বস্তু তুলে ধরেছে NCERT, তাতে ‘বিমানিকা শাস্ত্রের’ উল্লেখ রয়েছে বলে অভিযোগ, যা প্রাচীন সংস্কৃত লেখালেখিতে রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীদের অভিযোগ, চাঁদ পৃথিবীকে সৌরঝড় থেকে রক্ষা করছে, চন্দ্রযান-২ চাঁদের মাটিতে বরফের চাদরের হদিশ পায় বলেও লেখা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদের মাটিতে জলের অণুর সন্ধান মিলেছে, যা বরফের চাদর তৈরির উপযুক্ত নয় একেবারেই। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সমালোচনার মুখে পড়ে প্রথমে পিছু হটে NCERT. কিছু লেখা সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু পরে আবার তা সংযুক্ত করা হয়। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ‘বিজ্ঞান মহলের সকলের এবং যুক্তিবাদী নবাগরিকদের এই ভুল তথ্যসমূহ প্রত্যাখান করা উচিত’।