নয়াদিল্লি: গমনশক্তি না থাকলেও, গাছেল চলনশক্তি রয়েছে বলে ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলাম আমরা। কিন্তু আপনা থেকে জায়গা পরিবর্তন করা গাছের কথা শুনেছেন কি? এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা আমাদের কাছে। হেঁটে বেড়াতে সক্ষম গাছ সক্রেতেয়া এক্সোরেৎজা (Socratea exorrhiza) গাছের কথাও অনেকের অজানা। এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য তালগাছের মতো দেখতে এই গাছকে ‘ওয়াকিং পাম ট্রি’-ও বলা হয়। (Walking Palm Tree)


মানুষের মতো হনহন করে না হলেও, ধীরগতিতে সক্রেতেয়া এক্সোরেৎজা গাছটির জায়গা পরিবর্তনের গল্প শোনা যায়। মূলত লাতিন আমেরিকার বৃষ্টিচ্ছায় অরণ্যে এই গাছ চোখে পড়ে। বিভিন্ন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে সেই নিয়ে হাজারো রকম আখ্যান রয়েছে। কিন্তু হেঁটে বেড়ানোর ক্ষমতা কী করে রপ্ত করল এই গাছ? আদৌ কি হাঁটতে পারে গাছটি নাকি গোটাটাই দৃষ্টিভ্রম?  এর উত্তর দিয়েছে বিজ্ঞান।  (Science News)


সক্রেতেয়া এক্সোরেৎজা গাছের হেঁটে বেড়ানোর ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা আজ থেকে চলছে না। বিজ্ঞানীদের দাবি, সত্যিই জায়গা পরিবর্তনে সক্ষম এই গাছ। তবে মানুষের মতো হাঁটা রপ্ত করেনি। বরং এই গাছের জায়গা পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে তার শিকড়ের গঠন। অধিকাংশ গাছের কাণ্ড বলতে যে অংশ মাটির নিচে থাকে, তাকে বুঝি আমরা।মাটির নিচের অংশ শিকড়। কাণ্ড সোজা উপরে উঠে যায়। মাটির কিছুটা নিচে গিয়ে, এঁকেবেঁকে ছড়িয়ে বসে শিকড়।  



আরও পড়ুন: ISRO News: মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলেও, কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে মাস্কের সঙ্গে হাত মেলাল ISRO


সক্রেতেয়া এক্সোরেৎজার গাছের ক্ষেত্রে কাণ্ডের গোড়া থেকে শাখা-প্রশাখার মতো মোটা মোটা শিকড় মাটি ছুঁয়ে থাকে, মাটির ভিতরে প্রবেশ করে না, যা আসলে দেখতে পায়ের মতো হয়। বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে ঘন জঙ্গলের মধ্যে সূর্যের আলো ঢুকতে পারে না। অথচ সক্রেতেয়া এক্সোরেৎজা গাছটি সূর্যের আলোর অভিমুখে বৃদ্ধি পায়। সেই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই জায়গা বদলের কৌশল রপ্ত করে নিয়েছে গাছটি।


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ঘন অরণ্যে আলোর অভাব দেখা দিলে, আলোর অভিমুখে নতুন শিকড় গজায় সক্রেতেয়া এক্সোরেৎজা গাছের। পুরনো শিকড়গুলি মারা যায় আপনা আপনি। একটা সময় পর ঝরেও যায়। এর ফলে আড়াআড়ি ভাবে সরে যায় গাছগুলি। এছাড়াও হাওয়ার দাপটেও স্থান পরিবর্তন হয় তাদের। সক্রেতেয়া এক্সোরেৎজা গাছকে বিরল প্রজাতির গাছ ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলি সংরক্ষণের উদ্যোগ শুরু হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।


সক্রেতেয়া এক্সোরেৎজা বিশেষজ্ঞ জেরার্ডো আভালস, ২০০৫ সালে প্রকাশিত জার্নালে জানিয়েছিলেন, মানুষ ভাবেন গাছটি হয়ত হেঁটে বেড়াতে পারে, যা সত্য নয়। নতুন শিকড় গজালে, পুরনো শিকড় মারা যায়। তাতে অবস্থানে সামান্য বদল হলেও, মোটেই হাঁটতে পারে না এই গাছ।  যা দেখে গাছ হাঁটছে বলে মনে হয়, তা আসলে গাছের বৃদ্ধিরই অংশ। প্রতিদিন অন্তত ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার  করে সক্সরেতেয়া এক্সোরেৎজা গাছটি সরে যায় বলে জানা গিয়েছে।