নয়াদিল্লি: মাঝে মাত্র দু'দিনের অপেক্ষা। তার পরই চাঁদের বুকে নামা শুরু। এই মুহূর্তে তাই ভারতের চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের দিকেই নজর আটকে সকলের। তার মধ্যে রাশিয়ার Luna-25 মহাকাশযানের ভেঙে পড়া উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানকে নিরাপদে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করানোই প্রধান লক্ষ্য এখন। কিন্তু এর আগে, চাঁদের বুকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই, নিয়ন্ত্রিত ভাবে আছড়ে ফেলা হয়েছিল মহাকাশযানকে। (Lunar Mission)


খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, ২০০৮ সালের ঘটনা। সেবছর ২২ অক্টোবর চন্দ্রযান অভিযানের সূচনা ঘটে। পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে মহাকাশযান পাঠানোর ক্ষমতা যে ভারতেরও রয়েছে, সেই প্রথম বূুঝিয়ে দেওয়া হয় গোটা বিশ্বকে। তার আগে পর্যন্ত আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপ এবং জাপানই শুধুমাত্র চন্দ্রপৃষ্ঠে পা রাখতে সফল হয়েছিল। কিন্তু সে বছর পঞ্চম দেশ হিসেবে ওই তালিকায় আবির্ভাব ঘটে ভারতের। (Chandrayaan)


চন্দ্রযান অভিযানের আওতায় মূলত নিজেদের প্রযুক্তিশক্তি পরখ করে দেখতে চেয়েছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO. আর সেই প্রথম চন্দ্রাভিযানেই মাইলফলক তৈরি করেছিল ভারত। ভারতের চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে জলের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিল। প্রথম অভিযানের দৌলতেই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গিয়েছিল ভারতের নাম। এর বাইরেও প্রাপ্তি ছিল অনেক।


আরও পড়ুন: Luna-25 Crash: সত্যি হল আশঙ্কা, মাটি ছোঁয়ার আগের মুহুর্তে বিপত্তি, চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ল রুশ মহাকাশযান


সেবার চন্দ্রযানের মধ্যে ৩২ কেজি ওজনের, জুতোর বাক্সের আকারের একটি বিশেষ যান বসানো ছিল। চাঁদের বুকে সেটিকে আছড়ে ফেলাই লক্ষ্য ছিল ISRO-র। ওই যানটির নাম রাখা হয়েছিল Moon Impact Probe. ২০০৮ সালের ১৪ নভেম্বর রাতে গোটা দেশ যখন নিদ্রামগ্ন, সেই সময় দু'চোখের পাতা এক করতে পারছিলেন না ISRO-র বিজ্ঞানীরা। 


চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা যখন ১০০ কিলোমিটার, চূড়ান্ত পর্যায়ের যাত্রা শুরু করে Moon Impact Probe. মূল যান থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে ক্রমশ নামতে থাকে নীচের দিকে। চাঁদের বায়ুমণ্ডলে এমনিতে হাওয়া-বাতাস নেই। তাই কোনও বাধাবিপত্তি ছাড়াই নামতে থাকে Moon Impact Probe. দূরত্ব যত কমতে থাকে, ততই স্পষ্ট হতে থাকে খানাখন্দ, গহ্বর, বন্ধুর চন্দ্রপৃষ্ঠ। 


শুধুমাত্র লোহা বা টিনের পাত বসানো কোনও বাক্স নয়, Moon Impact Probe ছিল একটি অত্যাধুনিক যান। তার মধ্যে বসানো ছিল সূক্ষ্ম সব যন্ত্রপাতি। একটি ভিডিও ইমেজিং সিস্টেম, রেডার অল্টিমিটার, মাস স্পেকট্রোমিটারও ছিল ভিতরে। তাই চাঁদের সঙ্গে দূরত্ব যত কমতে থাকে, প্রতিমুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি হয়ে পৃথিবীতে এসে পৌঁছতে থাকে। মেমোরিতে গেঁথে নিয়ে প্রতিমুহূর্তের তথ্যও পাঠাতে থাকে পৃথিবীতে, যাতে সেগুল নিয়ে পরে গবেষণা করা যায়।


চন্দ্রযান থেকে আলাদা হওয়ার ২৫ মিনিট পর চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ে Moon Impact Probe. টুকরো টুকরো হয়ে কার্যত ধুলোয় মিশে যায় তার দেহ। কিন্তু ওই ২৫ মিনিটেই লেখা হয়ে যায় আস্ত ইতিহাস। Moon Impact Probe-এর পাঠানো তথ্য থেকেই চাঁদের জলের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। চাঁদকে নিয়ে যুগ যুগ ধরে যে ধারণা ছিল, Moon Impact Probe তা ভেঙে তছনছ করে দেয়। এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, জুতোর বাক্সের আকারের ওই Moon Impact Probe-এর রং ছিল ভারতের জাতীয় পতাকার মতো তেরঙা। ওই রাতে চাঁদের বুকে জায়গা পায় 'তেরঙ্গা'।