কলকাতা: সবার নজর এখন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। কয়েকদিন আগে রাশিয়া ব্য়র্থ হয়েছে, সেই ব্যর্থতার রেশ কাটিয়ে বুধবার বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছল ভারতের চন্দ্রযান ৩। ভারতের এই অভিযানের দিকে তাকিয়ে ছিল বিশ্বের বাকি দেশ ও মহাকাশ সংস্থাগুলিও।
কিন্তু চাঁদের দক্ষিণ মেরু ঘিরে এত উৎসাহ কেন? উত্তর অনেকগুলি। এই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই জলের অণু দিয়ে তৈরি বরফের (Frozen Water) খোঁজ মিলেছে। শুধু সেটাই কারণ নয়। চাঁদের কলোনি তৈরি, চাঁদের খনিজ আহরণ এবং মঙ্গল অভিযানের বেসক্যাম্প তৈরির ভাবনাও রয়েছে চাঁদ ঘিরে।
চন্দ্রযান ১ তো বটেই, তার আগেও একাধিক চন্দ্র অভিযানের মাধ্যমে চাঁদে জলের (Water Ice) উপস্থিতি নজরে আসে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, অতি প্রাচীন এই জল-বরফ থেকেই চাঁদের সৃষ্টির বিষয়ে আরও একাধিক তথ্য পাওয়া যাবে। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জলের উৎস থাকে, তাহলে সেখান থেকে পানীয় জল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এছাড়া, ওই জল ভেঙে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন উৎপন্ন করা গেলে জ্বালানি হিসেবে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর জন্য়ও ব্যবহার করা যাবে। তবে আরও বেশি নজর রয়েছে চাঁদের বুকে লুকনো অসীম মূল্যবান খনিজ সামগ্রীর জন্য।
১৯৬৭ সালে United Nations-এর বহির্বিশ্ব চুক্তি বা Outer Space Treaty - অনুযায়ী কোনও দেশ চাঁদকে নিজের সম্পত্তি বলে ঘোষণা করতে পারবে না। কিন্তু চাঁদের বুকে বাণিজ্য়িক কর্মকাণ্ড চালানো নিয়ে কোনও বিধিনিষেধ নেই। ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রংরা চাঁদের উত্তর মেরুর একটি অংশে নেমেছিলেন। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত চাঁদে যে ক’টি সফল অভিযান হয়েছে, সবই উত্তর গোলার্ধকে কেন্দ্র করে। এবার দক্ষিণের দুয়ার খুলে ফেললেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।
কী আছে দক্ষিণ মেরুতে?
বিজ্ঞানীদের দাবি, চাঁদের মাটির গভীর আছে – ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়ম, টাইটেনিয়াম, সিলিকনের অফুরন্ত ভাঁড়ার। এছাড়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের মাটিতে আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম। আছে আর এক মহার্ঘ জিনিস- হিলিয়াম থ্রি। পৃথিবীতে যার খোঁজ খুব একটা মেলে না। এই হিলিয়াম থ্রি, কোনও বর্জ্য ছাড়াই শক্তি উৎপাদনে সক্ষম। ২ টন হিলিয়াম থ্রি সারা ভারতের এক বছরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে লুকিয়ে রয়েছে রহস্যের ভাণ্ডার। তেজস্ক্রিয় মৌলের ভাণ্ডার রয়েছে চন্দ্রপৃষ্ঠের এই রুদ্ধদ্বারে। পৃথিবী সৃষ্টির রহস্যে নাকি সেখানেই লুকিয়ে। যার লোভে আমেরিকা, রাশিয়া, চিন বারে বারেই অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছে চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ ভাগে। কিন্তু চাঁদের এই অংশ যতটা সম্ভাবনাময়, ততটাই বিপদসঙ্কুল। সেইখানেই অবতরণ করল বিক্রম ল্যান্ডার। এবার রোভার কী আরও নতুন তথ্য হাজির করবে? উত্তর লুকিয়ে ভবিষ্যতের গর্ভে।
আরও পড়ুন: ইতিহাস তৈরি ভারতের! চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে 'বিক্রম'ধ্বজা