নয়াদিল্লি: মহাকাশ অভিযানে একের পর এক নজির তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘ সাড়ে ন'মাস মহাকাশে কাটিয়ে সম্প্রতি পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং ব্যারি বুচ উইলমোর। এবার ইতিহাস রচনা করে পৃথিবীতে ফিরলেন চার মহাকাশচারী।  পৃথিবীর দুই মেরুর উপর নজরদারি চালিয়ে পৃথিবীতে ফিরলেন তাঁরা। সুনীতাদের মতোই প্যারাশ্যুটে ভর করে প্রশান্ত মহাসাগরে নামলেন চার মহাকাশচারী। (Fram2 Astronauts Return)


মহাকাশ অভিযানে বেরিয়ে গত পাঁচ দশকে একের পর এক মাইলফলক ছুঁয়েছে মানবজাতি। মহাশূন্য থেকে পৃথিবীকে নিরীক্ষণ হোক বা চাঁদের মাটিতে মানুষের অবতরণ, মহাকাশে থেকে গবেষণা চালানো হোক বা পৃথিবীর চারিদিকে উড়ে বেড়ানো, তালিকা দীর্ঘ। কিন্তু এতদিন আড়াআড়ি ভাবে এবং উল্লম্ব ভাবেই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেছেন মহাকাশচারীরা। এবার দুই মেরুপ্রদেশের উপর নজরদারি চালানোর কৃতিত্ব অর্জন হল। (Science News)


বেসরকারি সংস্থার হয়ে অভিযানে গিয়ে এই নজির গড়লেন চার মহাকাশচারী- ১) মিশন কম্যান্ডার, মাল্টার বাসিন্দা চুং ওয়াং, ২) নরওয়ের বাসিন্দা, ভেহিকল কম্যান্ডার জ্যানিক মিকেলসন, ৩) জার্মানির বাসিন্দা, মিশন পাইলট রেবিয়া রগে, ৪) অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা, মিশন মেডিক্যাল অফিসার এরিক ফিলিপস। ইলন মাস্কের সংস্থা SpaceX-এর মহাকাশযানে চেপে তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন পৃথিবীর বাইরে। এই অভিযানের নাম রাখা হয় Fram2. ১৯ শতকে নরওয়ের একটি জাহাজ মেরুপ্রদেশ অভিযানে গিয়েছিল, যার নাম ছিল Fram. সেই নিরিখেই অভিযানের নামকরণ। ওসলোর মিউজিয়ামে রাখা জাহাজটির একটি অংশও মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়। 



মোট চারদিন মহাকাশে ছিলেন চার মহাকাশচারী।  সবমিলিয়ে ২২টি গবেষণা চালান তাঁরা, যার মধ্যে মহাকাশে প্রথম বার X-ray করা হয়েছে। মেরুপ্রদেশের পরিবেশের উপর নজরদারি চালান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝার চেষ্টা করেন মহাকাশচারীরা। মহাকাশ থেকে মেরুপ্রদেশের অভূতপূর্ব ছবিও তুলে পৃথিবীতে পাঠান। ছবি পাঠিয়েছেন বঙ্গোপসাগরের। মহাকাশে ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি নিয়েও চলে গবেষণা, আগামী দিনে যা চন্দ্র এবং মঙ্গল অভিযানের জন্য সহায়ক হবে। পৃথিবীতে অবতরণের সময়ও নিজে থেকেই Dragon মহাকাশযান থেকে বেরিয়ে আসেন। অর্থাৎ আগামী দিনে পৃথিবী থেকে কোনও রকম সহায়তা ছাড়াই মহাকাশযান ছেড়ে বেরোতে পারবেন মহাকাশচারীরা।


কিন্তু এই অভিযানের গুরুত্ব হল মেরুপ্রদেশ অভিযান। ১ এপ্রিল SpaceX-এর Dragon মহাকাশযানে চেপে রওনা দেন তাঁরা। কিন্তু এই অভিযানের জন্য অনন্য পথ বেছে নেওয়া হয়। সুমেরু প্রদেশ থেকে আন্টার্কটিকা অভিমুখে রওনা দেন মহাকাশচারীরা। অর্থাৎ মেরুপ্রদেশকে প্রদক্ষিণ করা হয়। এই প্রথম পৃথিবীকে উত্তর-দক্ষিণে প্রদক্ষিণ করা হল। এই অভিযানের স্পনসর ছিলেন খোদ চুংই। তিনি মাল্টার প্রখ্যাত বিনিয়োগকারী।



মেরুপ্রদেশ প্রদক্ষিণের অর্থ, মহাকাশযানটি উত্তর-দক্ষিণে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেছে। বাকি মহাকাশযান এবং কৃত্রিম উপগ্রহ যেমন নিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, তা না করে, Fram2 অভিযানে মহাকাশচারীরা উত্তর থেকে দক্ষিণে, অর্থাৎ পৃথিবীর উপর থেকে প্রথমে দক্ষিণে নেমে আসেন, তার পর আবার ফিরে যান উত্তরে। গত চার দিন ধরে, প্রতি ৯৩ মিনিটে এভাবে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার পর, শুক্রবার প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করেন বিজ্ঞানীরা। সুনীতার মতোই নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে প্যারাশ্যুটে ভর করে জল স্পর্শ করেন সকলে।