নয়াদিল্লি: চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছোঁয়ার দৌড়ে নেমে পড়েছে তাবড় দেশ। চাঁদের মাটিতে উপনিবেশ গোড়ার চাবি সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে মত বিজ্ঞানীদের একাংশের। কিন্তু গোটা পৃথিবী যখন চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে, সেই সময় চাঁদের উত্তর মেরু জয় মনোনিবেশ করল জাপানের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। চাঁদের উত্তর মেরুতে অবস্থিত হিমশীতল সাগরের বুকে মহাকাশযান নামানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করল তারা। (Science News)
জাপানের রাজধানী টোকিও-য় অবস্থিত বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা Ispace. দ্বিতীয় বারের জন্য চন্দ্রাভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। আর সেই অভিযানেই চাঁদের উত্তর মেরুকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে তারা। তাদের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের নাম SMBC x HAKUTO-R Mission 2. Ispace জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানে পাঠানো হবে SMBC x HAKUTO-R Mission 2 মহাকাশযানটিকে। উৎক্ষেপণের জন্য ছ'দিনের সময়কাল ধার্য হয়েছে। (Japan Lunar Mission)
ধনকুবের ইলন মাস্কের সংস্থা SpaceX-এর Falcon 9 রকেটের মাধ্যমে SMBC x HAKUTO-R Mission 2 মহাকাশযানটির উৎক্ষেপণ হবে। সঙ্গে নিয়ে যাবে Firefly Airspace-এর Blue Ghost Mission 1 ল্যান্ডার-ও। চাঁদের মাটিতে ১০টি পেলোড নামাবে সেটি। চাঁদর মাটিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবে। এর আগে ২০২২ সালে প্রথমবার চন্দ্রাভিযানে রকেট পাঠায় জাপানের বেসরকারি সংস্থা Ispace. কিন্তু সেবার অভিযান সফল হয়নি। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে Hakuto-R M1 ল্যান্ডার এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির Rashid রোভারটি চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়ে। দ্বিতীয় বার চন্দ্রাভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে Ispace।
SMBC x HAKUTO-R Mission 2 মহাকাশযানটি দীর্ঘ সাত মাসের অভিযানে যাচ্ছে। উৎক্ষেপণের চার-পাঁচ মাসের মধ্যে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে সেটি। Ispace-এর সিইও তথা প্রতিষ্ঠাতা তাকেশি হাকামাডা জানিয়েছেন, Resilience ল্যান্ডার এবং Tenacious মাইক্রো রোভারটিকে চাঁদের মাটিতে নামানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন সংস্থার সকলে। চাঁদের মাটিতে অর্থনীতির ভিত তৈরির লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন তাঁরা। চাঁদের মাটিতে দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তাকেশি। SMBC x HAKUTO-R Mission 2 অভিযানে প্রথমে চাঁদের গা ঘেঁষে অবস্থান করবে মহাকাশযানটি। চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে ৬০.৫ ডিগ্রি উত্তর এবং ৪.৬ ডিগ্রি পশ্চিমে, চাঁদের মাটিতে 'Mare Frigoris'-এর গা ঘেঁষে অবতরণ করবে।
'Mare Frigoris' চাঁদের মাটিতে অবস্থিত একটি বিশালাকার গহ্বর, যা 'হিমশীতল সাগর' নামেও পরিচিত। পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত সরু এই সাগরটি ১৪০০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। চাঁদের মাটিতে অবস্থিত অন্য গহ্বরের তুলনায় এই সাগর সবদিক থেকেই আলাদা। বাকিগুলির আকৃতি বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার। সেই নিরিখে বাকিদের সঙ্গে মিল নেই 'হিমশীতল সাগরে'র। এর প্রস্থ প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। বয়স ৩৯০ থেকে ৪৬০ কোটি বছর। এর দক্ষিণে আবার পর্বতমালা রয়েছে। উত্তরে প্রাচীরযুক্ত সমতল।
চাঁদের মাটিতে অবতরণের পর TENACIOUS মাইক্রো রোভারটি একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর পাশাপাশি, চাঁদের মাটির নমুনাও সংগ্রহ করবে। Ispace-এর এই চন্দ্রাভিযানের সাফল্যের উপর মহাকাশগবেষণার বাণিজ্যিকরণের ভবিষ্যৎও অনেকাংশে নির্ভর করছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। রাত্রি চলাকালীন চাঁদের মাটির তাপমাত্রা একধাক্কায় -১৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নেমে যায়। আবার দিনের বেলায় মাটির তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। এমন পরিস্থিতিতে অভিযান কতটা সফল হয়, সেদিকে তাকিয়ে সকলে।