নয়াদিল্লি: চাঁদের মাটিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে আগে থেকেই। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এবার গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর তোড়জোড়। সম্পূর্ণ ভাবে রোবট দিয়ে এই গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ হবে বলে জানা গিয়েছে। পাইলাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে, যাতে আগামী দিনে চন্দ্রাভিযানের ক্ষেত্রে অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যেতে না হয়। বরং পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি সেখানে গড়ে তোলা ঘাঁটিতে সরবরাহ করা যায়। (Gas Pipeline on Moon)
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA. প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে Lunar South Pole Oxygen Pipeline (L-SPoP). চাঁদের মাটিতে গবেষণার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী বিপ্লব আনতে পারে এই প্রকল্প। আর্টেমিস অভিযানের আগেও এই পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। (Moon South Pole)
বিজ্ঞানীদের মতে, এতে পৃথিবী থেকে অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও কমবে। আবার সাশ্রয় হবে খরচ-খরচাতেও। আর্টেমিস অভিযানের আওতায় চাঁদের বুকে স্থায়ী ঘাঁটি তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সেখানে থেকে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেবন বিজ্ঞানীরা। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে চাঁদের বুকে অক্সিজেনের পাইপলাইন বসানো অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন সকলে।
পৃথিবী থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়া অক্সিজেনের উপর নির্ভর করে নয়, চাঁদের মাটি থেকে অক্সিজেন নিষ্কাশন করে, তা-ই পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। যে কারণে NASA ইতিমধ্যেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করেছে। চাঁদের মাটির নীচ থেকে, দক্ষিণ মেরুতে জমে থাকা বরফের আস্তরণ খুঁড়ে অক্সিজেন নিষ্কাশন করা হবে।
আর্টেমিস অভিযানের আগেই ওই প্রযুক্তিতে চাঁদের মাটিতে অক্সিজেন নিষ্কাশনের পরিকল্পনা নিয় এগোচ্ছে NASA. ২০২৬ সালে আর্টেমিস অভিযানে ওই প্রকল্প নভোশ্চরদের সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। NASA-র পরিকল্পনা অনুযায়ী, কমপ্রেসড ট্যাঙ্কের মধ্যে ভরে রাখা হবে উত্তলোন করা অক্সিজেন। তরল অবস্থায় এনে সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু ওই ট্যাঙ্ক চাঁদে বয়ে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ, খরচ সাপেক্ষও। আবার যেখানে অক্সিজেন উত্তোলন করা হবে, সেখান থেকে অক্সিজেনকে তরল করার কারখানা এবং নভোশ্চরদের ঘাঁটির দূরত্বও অনেকটা।
তাই আপাতত পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। সেখান থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে নিকটবর্তী কারখানায়। চাঁদের মাটিতে যে অ্যালুমিনিয়াম রয়েছে, তা দিয়েই পাইপ তৈরি হবে বলে জানা গিয়েছে। কারণ দক্ষিণ মেরুর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেখানকার অ্যালুমিনিয়ামই দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে। যে পদ্ধতিতে অক্সিজেন নিষ্কাশন করা হবে, তার জন্যও সহায়ক ওই অ্যালুমিনিয়াম।
NASA-র তরফে এই প্রকল্পের রূপরেখাও তুলে ধরা হয়েছে। তাতে যে বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে, তা হল-
১. নির্মাণকার্য সম্পন্ন হবে রোবটের মাধ্যমে।।
২. কোথাও ত্রুতি ধরা পড়লেও, মেরামত হবে রোবটের সাহায্যেই।
৩. ঘণ্টায় ২ কেজি অক্সিজেন সরবরাহের লক্ষ্য আপাতত।
৪. দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে যতটা সম্ভব কম শক্তির ব্যবহার।
৫. অন্তত ১০ বছরের লক্ষ্য নিয়ে এগনো।
চন্দ্রাভিযানের ক্ষেত্রে পৃথিবীর উপর যথা সম্ভব নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনাই লক্ষ্য NASA-র। সেই লক্ষ্যপূরণে এই গ্যাসের পাইপলাইন সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চাঁদের মাটিতে এই প্রকল্প সফল হলে, আগামী দিনে অন্যত্রও একই পন্থা অবলম্বন করা সম্ভব হবে।