ম্যানিলা: আচমকাই ফুঁসে উঠল আগ্নেয়গিরি। তীব্র শব্দে বিস্ফোরণ প্রথমে, তার পর বেরিয়ে এল ধোঁয়ার কুণ্ডলী। প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলার অবস্থা হল। মাত্র কয়েক মিনিটই স্থায়ী হল অগ্ন্যুৎপাত, কিন্তু তত ক্ষণে প্রাণ হাতে করে ছুটতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। সওয়া তিন কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ছিটকে পড়ে ছাই। এখনও উদ্ধারকার্য চলছে আশেপাশের এলাকায়। (Philippines Mount Kanlaon Volcano)
সোমবার ফিলিপিন্সে এই ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার মাউন্ট কানলাওন আগ্নেয়গিরিটি আচমকাই জেগে উঠেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত মাউন্ট কানলাওন আগ্নেয়গিরিটি আইল্যান্ড অফ নিগ্রোসে অবস্থিত। ফিলিপিন্সে যে ২৪টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে, এই মাউন্ট কানলাওন তার মধ্যে অন্যতম। সোমবার দুপুর ৩টে বেজে ৩ মিনিটে আচমকাই ফুঁসে ওঠে। (Mount Kanlaon Volcano Erupts)
সোশ্যাল মিডিয়া যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে প্রথমে তীব্র বিস্ফোরণ শোনা গিয়েছে। তার পর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী জ্বালামুখ ছাড়িয়ে আকাশের দিকে উঠতে শুরু করে। জানা গিয়েছে, আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে ওই কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশের দিকে প্রায় চার কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছে যায়। সেই সঙ্গে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছিটকে পড়তে থাকে গরম ছাই, পাথর।
ফিলিপিন্সের ইনস্টিটিউট অফ ভলক্যানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজির অগ্ন্যুৎপাত বিষয়ক প্রধান মারিয়া অ্যান্টোনিয়া বোর্নাজ জানিয়েছেন, আগ্নেয়গিরিটি শীঘ্রই ফুঁসে উঠবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা। মারিয়া জানান, আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং তার সঙ্গে মিশে থাকা পদার্থের সংস্পর্শে আসার অর্থ উচ্চ গতিতে ছুটে চলা গাড়ির নীচে চাপা পড়া।
মারিয়া আরও জানান, ওই ধোঁয়া কোনও বাবে ফুসফুসে প্রবেশ করলে, দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু অনিবার্য। ফলে অগ্ন্যুৎপাত ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় উদ্ধারকার্য শুরু করতে বলেন তিনি। আগ্নেয়গিরি সংলগ্ন ছ'কিলোমিটার এলাকায় গড়ে ওঠা ১৫টি গ্রাম খালি করার উচিত, বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলে জানান। এখনও পর্যন্ত মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির খবর সামনে না এলেও, মারিয়া জানিয়েছেন, আচমকা বিস্ফোরণে আগ্নেগিরির জ্বালামুখের নীচের অংশ দুর্বল হয়ে গিয়েছে। কোনও ভাবে ফের যদি অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, নীচে বসবাসকারী গ্রামগুলি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ফিলিপিন্স সরকার জানিয়েছে, ওই এলাকায় বসবাসকারী ৮৭০০০ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরেই আগ্নেগিরি থেকে অল্প অল্প ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এত তাড়াতাড়ি অগ্ন্যুৎপাত ঘটবে, বুঝতে পারেননি তাঁরা। কয়েক মিনিটের মধ্যেই যদিও আগ্নেয়গিরির রুদ্রমূর্তি স্তিমিত হয়ে আসে, কিন্তু সম্ভাব্য বিপদের কথা মাথায় রেখে ঝুঁকি নিতে নারাজ কেউই। বিমান চলাচলে কোনও প্রভাব না পড়লেও, বিমানের উচ্চতা ১০০০০ কিলোমিটারের কম যেন না হয়, নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগ্নেয়গিরি ঘেঁষে বিমান না ওড়ানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে।
এর আগে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই ওই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। সেবারও দলে দলে মানুষজনকে সরাতে হয়েছিল এলাকা থেকে। কারণ একই দিনে কয়েক হাজার টন বিষাক্ত গ্যাস মিশে যায় বাতাসে। ফিলিপিন্সের সিসমোলজি বিভাগ জানিয়েছে, ১৮৬৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৪০ বার অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে মাউন্ট কানলাওনে। ১৯৬৬ সালে হঠাৎ আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে তিন পর্বতারোহী মারাও যান।