নয়াদিল্লি: দীর্ঘ পাঁচ দশক পর আবারও চাঁদে মানুষ পাঠাতে চলেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA. কিন্তু খানাখন্দে ভরা চাঁদের বুকে হেঁটে বেড়ানো মোটেই সহজ কাজ নয়, তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা। সেই মতো পৃথিবীর বুকেই চাঁদে হাঁটার অনুশীলনে নামলেন NASA-র দুই নভোশ্চর। আমেরিকার অ্যারিজোনায় 'Moonwalk'-এর অনুশীলনে নেমেছেন তাঁরা। (NASA Artemis 3 Mission)


১৯৭২ সালে শেষ বার Apollo অভিযানের আওতায় চাঁদের মানুষ পাঠিয়েছিল NASA. Artemis 3 অভিযানের আওতায় আবারও চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা। এর আওতায় ২০২৬ সালে চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের, যার জন্য নভোশ্চর কেট রুবিন্স এবং আন্দ্রে ডগলাস অনুশীলন শুরু করলেন। (NASA Lunar Mission)


অ্যারিজোনার ফ্ল্যাগস্টাফ মালভূমি অঞ্চলে 'Moonwalk'-এর এক সপ্তাহব্যাপী অনুশীলন শুরু হয়েছে। কলোরাডো মালভূমির দক্ষিণ সীমানা জুড়ে অবস্থিত ফ্ল্যাগস্টাফ মালভূমি অঞ্চল। সেখানে প্রায় ৬০০টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে, একসময় যা থেকে নিয়মিত অগ্ন্যুৎপাত ঘটত। আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা জমেই ওই মালভূমি অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে, যার সঙ্গে চাঁদের মাটির মিল রয়েছে। তাই 'Moonwalk' অনুশীলনের জন্য ওই ক্ষেত্রকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।


আরও পড়ুন: Solar Storm: প্রতিবারই শক্তি বাড়িয়ে আঘাত, সৌরঝড়ের বিরুদ্ধে যুঝে চলেছে পৃথিবী, আশঙ্কার কথা শোনাল ISRO


NASA যে ছবি প্রকাশ করেছে, তাতে কেট এবং আন্দ্রেকে নকল স্পেসস্যুট পরে থাকতে দেখা গিয়েছে। সেখানে একাধিক বিভিন্ন প্রযুক্তি এবং হার্ডওয়্যার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন তাঁরা, Artemis 3 অভিযানের আওতায় যা আগামী দিনে চাঁদের বুকে কাজে লাগবে। NASA জানিয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে এই অনুশীলন পর্ব চলবে। সেখানে মোট দু'টি টিম থাকছে। একটি টিমে রয়েছেন নভোশ্চর, NASA-র ইঞ্জিনিয়ার এবং অ্যারিজোনার ভূমি বিশেষজ্ঞরা। অন্য টিমে রয়েছেন, মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণকারী বিজ্ঞানী এবং NASA-র Johnson Space Center-এর গবেষকরা। তাঁরা এই অনুশীলনের তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা নভোশ্চরদের পথ দেখাবেন। পারস্পরিক সহযোগিতায় কাজ করবে এই দুই টিম।


চন্দ্রাভিযানের আগে পৃথিবীর বুকে অনুরূপ ভূমিতে সমস্ত প্রযুক্তি, হার্ডওয়্যার পরীক্ষা করে দেখাই দস্তুর। চাঁদের বন্ধুর মাটিতে হাঁটাচলা, গবেষণার খুঁটিনাটিও শেখানো হয় নভোশ্চরদের। Johnson Space Center-এর ডিরেক্টর বারবরা জানোইকো জানিয়েছেন, চন্দ্রাভিযানে সাফল্য পেতে গেলে এই ফিল্ড অপারেশন অত্যন্ত জরুরি। ইঞ্জিনিয়ার এবং বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে মিলে কাজ করছেন, যাতে চাঁদের বুকে প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকা যায়। 


NASA জানিয়েছে, এই  অনুশীলনপর্বে চাঁদের বুকে হাঁটার কৌশল অর্থাৎ 'Moonwalk' শেখানো হবে নভোশ্চরদের। ছ'টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হবে। চাঁদের বুকে গবেষণা চালানোর পর যাতে নির্দিষ্ট গতিপথ ধরে ল্যান্ডারে ফিরে আসতে পারেন নভোশ্চররা, তারও অনুশীলন চলবে।  কারণ পৃথিবীতে বসে বিজ্ঞানীরা নভোশ্চরদের সাহায্য় করলেও, Artemis 3 অভিযানে নভোশ্চরদেরই সব কার্য সারতে হবে চাঁদের বুকে। তাই সবকিছুর জন্য তাঁদের প্রস্তুত করে রাখা হচ্ছে। প্রত্যেক দিন অনুশীলন শেষ হলে, কী শেখা গেল, কোথায়, কী সমস্য়া হচ্ছে, তা নিয়ে বিশদে আলোচনাও হবে।


সেই Apollo অভিযানের সময় থেকেই অ্য়ারিজোনায় অনুশীলন চলে আসছে। কারণ চন্দ্রপৃষ্ঠ, চন্দ্রপৃষ্ঠের গহ্বর, চ্যুতি এবং লাভার গঠনের সঙ্গে ওই অঞ্চলের মিল রয়েছে। Artemis 3 অভিযানের হাত ধরে এই প্রথম কোনও মহিলা, কোনও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী নভোশ্চরকে চাঁদে পাঠাচ্ছে NASA. চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের পরিকল্পনা রয়েছে এবার।