নয়াদিল্লি: জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে চরিত্র বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর। ভবিষ্যতের পৃথিবী আদৌ বাসযোগ্য থাকবে কি না, সেই নিয়ে নানা তত্ত্ব রয়েছে। এমনকি বিজ্ঞানীরাও সেই নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। বিজ্ঞানীদের দাবি, আগামী ১০০ কোটি বছরের মধ্যে সূর্যের তেজে ছারখার হয়ে যাবে সব কিছু। পৃথিবীতে গাছের অস্তিত্ব থাকবে না, ফলে অক্সিজেনের জোগানও থাকবে না পরিবেশে।  অর্থাৎ আজ থেকে ১০০ কোটি বছর পর পৃথিবীর অক্সিজেন ফুরিয়ে যাবে।  (Earth Without Oxygen)


সৌরগজগতের বাইরে বিকল্প বাসস্থান খোঁজার কাজে হাত দিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA. তাদের Nexss প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের ১ মার্চ Nature Geoscience পত্রিকায় একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। আর তাতেই ভবিষ্যতের পৃথিবী নিয়ে চাঞ্চল্য়কর দাবি করা হয়। (Science News


বিজ্ঞানীরা জানান, বর্তমানে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন রয়েছে। অক্সিজেন রয়েছে ২১ শতাংশ, ০.৯ শতাংশ আর্গন এবং ০.১ শতাংশ অন্য গ্যাস রয়েছে। এই অন্যান্য গ্যাসের মধ্যে পড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, জলীয়বাষ্প এবং নিয়ন। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বরাবর এই পরিমাণ অক্সিজেন ছিল না। এমনকি পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর প্রথম ২০০ বছর অক্সিজেনই ছিল না বায়ুমণ্ডলে। শ্যাওলার মাধ্যমে প্রথম অক্সিজেনের আমদানি ঘটে। আজ থেকে ২৪০ কোটি বছর আগেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে, যার নেপথ্যে ছিল শ্যাওলার সালোকসংশ্লেষ। ধীরে ধীরে বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে। 


কিন্তু বর্তমানে এই যে অক্সিজেনের জোগান, এটাও সাময়িক বলে মত বিজ্ঞানীদের। ওই গবেষণায় যুক্ত, জাপানের ইউনিভার্সিটি অফ টোকিওর বিজ্ঞানী কাজুমি ওজাকি জানান, সময়ের সঙ্গে সৌরজগতের আয়ু বাড়ছে। সূর্যও একসময় মাত্রাতিরিক্ত তেতে উঠবে। এর ফলে আমাদের বায়ুমণ্ডলও প্রভাবিত হবে। কার্বন ডাই অক্সাইড প্রথমে কমতে শুরু করবে। ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে যারা অক্সিজেন তৈরি  করে, তাদের অস্তিত্ব মুছতে শুরু করবে পৃথিবী থেকে। আর অক্সিজেন তৈরি না হলে, প্রাণীজগতের অস্তিত্বও সঙ্কটে পড়বে। 


অর্থাৎ কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা যত কমবে, উদ্ভিদেরও বিলুপ্তি ঘটবে। এখনও কোটি কোটি বছর হাতে থাকলেও, একবার প্রক্রিয়া শুরু হলে, ১০ হাজার বছরের মধ্যেই পৃথিবী থেকে অক্সিজেন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। জর্জিয়া টেকের বিজ্ঞানী ক্রিস রেনহার্ট জানান, শুধু অক্সিজেন কমতে শুরু করবে যেমন, মিথেনের মাত্রাও বাড়তে শুরু করবে। বর্তমানের তুলনায় বায়ুমণ্ডলে মিথেনের মাত্রা ১০ হাজার গুণ বেড়ে যাবে। অক্সিজেন সমৃদ্ধ ওজোন স্তর গায়েব হয়ে যাবে একেবারে। ফলে অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে এসে পড়বে, যার ছোঁয়া লেগে ধ্বংসের দিকে এগোবে পৃথিবী। ভবিষ্যতে বিকল্প গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেলে, বা অক্সিজেন নির্ভর হয়ে থাকার বিকল্প পথ যদি বের করা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে বাস্তুতন্ত্রই পাল্টে যাবে।