ফ্লোরিডা: পৃথিবীর বিকল্প খুঁজতে গিয়ে কার্যতই চষে ফেলা হচ্ছে মহাকাশ। কোটি কোটি টাকা খরচে একের পর এক অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু তাতে মহাকাশের ক্ষতি বই লাভ হচ্ছে না বলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পৃথিবীর কক্ষপথ এবং সংলগ্ন অঞ্চল যেভাবে মহাজাগতিক বর্জ্যে ভরে গিয়েছে, তা নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানীদের একাংশ। ভবিষ্যৎ অভিযানের উপর তার প্রভাব পড়ার পাশাপাশি, ওই আবর্জনা পৃথিবীতে আছড়ে পড়লে মারাত্মক ৭তি গহতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। আর সেই আশঙ্কাই এবার সত্য প্রমাণিত হল। মহাকাশ থেকে বর্জ্য আছড়ে পড়ল পৃথিবীর বুকে। সেই নিয়ে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হল আদালতে। (Space Debris in Florida)


গত ৮ মার্চ আমেরিকার ফ্লোরিডার একটি বাড়িতে মহাজাগতিক বর্জ্য আছড়ে পড়ে। তিন তলা বাড়ির ছাদ, মেঝে, দোতলার মেঝে ফুঁড়ে আছড়ে পড়ে সেটি। ভাগ্যচক্রে কেউ হতাহত হননি। অল্পের জন্য রক্ষা পান বাড়ির এক সদস্য। কিন্তু বাড়িটির ক্ষতি হয়েছে। আতঙ্কে সিঁটিয়ে গিয়েছেন বাড়ির লোকজন। তাঁরাই NASA-র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি এবং মানসিক ধাক্কার জন্য NASA-র কাছ থেকে মোটা টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তাঁরা। সেই নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে আমেরিকায়। গোটা ঘটনায় NASA-র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। (NASA Sued by Family)


ওই পরিবারের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার পরিবর্তে দায় স্বীকার করেছে NASA. তারা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে ব্যবহারের পর শেষ হয়ে যাওয়া ব্য়াটারি রাখার ২.৯ টনের একটি প্যালেট ছিল। ২০২১ সালের মার্চ মাসে সেটি ফেলে দেওয়া হয়। বেশ কয়েক বছর পৃথিবীর কক্ষপথেই সেটি ভেসে বেড়ানোর কথা ছিল। যদিও বা তার কোনও অংশ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে যায়, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করার সময় তা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে বলে মনে করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তা যে ঘটেনি, এই ঘটনার পর বুঝতে পারছেন তাঁরা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ওই বাড়ির মালিক আলেহান্দ্রো ওতেরো জানিয়েছেন, ভাগ্যক্রমে হয়ত প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এর ফল ভয়ঙ্কর হতে পারত। তাই শুধু ভুল স্বীকার করলে চলবে না। 



আলেহান্দ্রো জানিয়েছেন, তাঁর ১৯ বছরের ছেলে ঘটনার সময় বাড়িতেই ছিলেন। যেখানে আছড়ে পড়ে মহাজাগতিক বর্জ্যটি, তার পিছনের ঘরে ছিলেন তিনি। ফলে কোনও ক্রমে রক্ষা পেয়েছেন তিনি। তাঁদের আইনজীবা মিকা গুয়েন জানিয়েছেন, বাড়ির ক্ষতি তো হয়েইছে। কিন্তু এই ঘটনায় মানসিক ভাবে ধাক্কা খেয়েছে আরেহান্দ্রোর পরিবার। দুশ্চিন্তায় বিনিদ্র রাত কাটছে সকলের। তাই NASA-কে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মে মাসে NASA-ৎ বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ওই পরিবার। মামলাটি যেহেতু বিচারাধীন, তাই এ নিয়ে কথা বলতে চাননি NASA-র পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার জিমি রাসেল। এই ঘটনায় আদালত কী রায় দেয়, সেদিকে তাকিয়ে সকলে। 


তবে এই ঘটনায় আবারও মহাজাগতিক বর্জ্য সঙ্কট আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। মহাজাগতির বর্জ্য শুধুমাত্র পৃথিবীর কক্ষপথেই আটকে নেই, পৃথিবীবাসীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। কারণ এর আগেও এমন ঘটনা সামনে এসেছে। ইলন মাস্কের SpaceX সংস্থার ড্রাগন ট্রাঙ্কের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হয় নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র পকেটের অংশ বিশেষ আছডে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে। তাই আলেহান্দ্রো জানিয়েছেন, শুধু ক্ষতিপূরণের জন্যই মামলা করেননি তিনি, মহাকাশ গবেষণায় নিযুক্ত সরকারি, বেসরকারি সংস্থাগুলিকে বার্তা পাঠানোও লক্ষ্য় তাঁর।