নয়াদিল্লি: ব্যর্থতায় মুখ লুকিয়ে বসে থাকার পরিবর্তে কার্যতই জান লড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। করোনা কালে চারিদিকে যখন আর্তনাদ, সেই সময়ও নিবিষ্ট চিত্তে কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। দীর্ঘ চার বছর তৈরি তাঁদের হাতে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান। দিনরাত এক করে তার জন্য খেটে গিয়েছেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-য় কর্মরত ১ হাজার ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী। তাঁদের এই পরিশ্রমের নিটফল ৭০০ কোটি টাকার চন্দ্রযান-৩ অভিযান। ISRO-য় কর্মরত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আজ ইতিহাস রচনা করল ভারত। তবে বিশেষ কয়েক জনের নাম না বললেই নয়।


এস সোমনাথ, চেয়ারম্যান, ISRO


পেশায় এ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার। লঞ্চ ভেহিকল মার্ক-৩ ওরফে বাহুবলী রকেট, যা থেকে উৎক্ষেপিত হয় চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান, তার নকশা তৈরি করেন এস সোমনাথ। ISRO-র ইঞ্জিনিয়াররাও তাঁর নির্দেশ মেনেই কাজ করেন। বর্তমানে ISRO-র যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তাঁর হাতেই। উৎক্ষেপণের আগে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের সম্পূর্ণ পরীক্ষাও হয় তাঁরই তত্ত্বাবধানে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, বেঙ্গালুরুতে প্রযুক্তি শিক্ষা লাভ করেন। সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী। সংস্কৃত ভাষায় 'ইয়ানম' নামের একটি ছবিতেও অভিনয় করেন। তাঁর নামও সোমনাথ, যার অর্থ 'চন্দ্রদেবতা'।


উন্নিকৃষ্ণণ নায়ার এস, ডিরেক্টর, বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার


বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের ডিরেক্টর, যেখানে জিওসিঙ্ক্রোনাস স্য়াটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (GSLV) মার্ক-৩ তৈরি হয়। চন্দ্রযান-৩ অভিযানের খুঁটিনাটি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন উন্নিকৃষ্ণণ নায়ার। তিনিও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, বেঙ্গালুরুর প্রাক্তনী। এর আগে, 'গগনায়ন' অভিযানের নেতৃত্বেও ছিলেন। হিউম্যান স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের প্রথম ডিরেক্টরও তিনি। তাঁর নেতৃত্বে তৈরি মার্ক-৩  এখনও পর্যন্ত কখনও ব্যর্থ হয়নি। ভারতীয় নভোচারীদের মহাশূন্যে পাঠানোর কার্যেও লিপ্ত রয়েছেন। এর পাশাপাশি ছোট গল্পও লেখেন উন্নিকৃষ্ণণ।


আরও পড়ুন: Chandrayaan 3 Landing: গোটা দেশের আশা-প্রত্যাশা জড়িয়ে, চাঁদের বুকে অবতরণ মহাকাশযানের, সরাসরি সম্প্রচার করবে ISRO


বীরামুথুভেল পি, প্রজেক্ট ডিরেক্টর, চন্দ্রায়ন-৩ অভিযান, ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার


চন্দ্রায়ন-৩ অভিযানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর বীরামুথুভেল পি। ভারতের তৃতীয় চন্দ্রাভিযানে একেবারে সূচনাপর্ব থেকে জড়িয়ে তিনি। চেন্নাই থেকে প্রযুক্তিতে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করেন। এর আগে, চন্দ্রযান-২ এবং মঙ্গলযান অভিযানেও যুক্ত ছিলেন। ২০১৯ সালে ল্যান্ডার 'বিক্রম' চাঁদের অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়। ল্যান্ডার নিয়ে প্রচুর জ্ঞান রয়েছে বীরামুথুভেলের। এবারে ল্যান্ডার 'বিক্রম'কে আরও শক্তপোক্ত ভাবে গড়ে তোলার নেপথ্যেও ছিল তাঁর হাত।


কল্পনা কে, ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর, চন্দ্রযান-৩, ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার


করোনার মধ্যেও চন্দ্রযান-৩ অভিযান সংক্রান্ত কাজকর্মে লিপ্ত ছিলেন কল্পনা কে। পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। ভারতের হয়ে স্যাটেলাইট নির্মাণেই নিজের জীবন অতিবাহিত করে চলেছেন তিনি। চন্দ্রযান-২ এবং মঙ্গলযান অভিযানেও যুক্ত ছিলেন।


এম বনিতা, ডেপুটি ডিরেক্টর, ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার


চন্দ্রযান-২ অভিযানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন। ইলেক্ট্রনিক্স সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার পেশায়। চন্দ্রাভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম ভারতীয় মহিলা এম বনিতা। চন্দ্রযান-২ অভিযান থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে চন্দ্রযান-৩ অভিযানে কাজে লাগান। বাগান পরিচর্যা করতে পছন্দ করেন এম বনিতা।


এম শঙ্করন, ডিরেক্টর, ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার


ISRO-তে বাকিদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় এম শঙ্করন। নোভেল পাওয়ার সিস্টেম এবং পাওয়ার স্যাটেলাইটে তৈরিতে অভিজ্ঞ তিনি। দীর্ঘ তিন দশক ধরে স্যাটেলাইট নির্মাণ করে চলেছেন। চন্দ্রযান-১, মঙ্গলযান এবং চন্দ্রযান-২ মহাকাশযানের গায়ে তাঁর স্বাক্ষর ছিল।  চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের তাপমাত্রার ওঠাপড়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বিকল্প চাঁদের মাটি তৈরি করে, তার উপর চন্দ্রযান-৩ পরীক্ষার দায়িত্বেও ছিলেন। পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর তিনি।  


ভি নারায়ণ, ডিরেক্টর, লিকুইড প্রোুপালসন সিস্টেমস সেন্টার


লিকুইড প্রোপালসন ইঞ্জিন বিশারদ ভি নারায়ণ। তাঁর নেতৃত্বে যে ইঞ্জিন তৈরি হয়েছে, তাতে ভর করেই চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান। আইআইটি খড়্গপুরের প্রাক্তনী ভি নারায়ণ। ক্রায়োজেনির ইঞ্জিনের বিশেষজ্ঞও। ISRO এযাবৎ যত রকেট তৈরি করেছে, তার মধ্য়ে অধিকাংশই তাঁর ইঞ্জিন দ্বারা চালিত। লঞ্চ ভেহিকল মার্ক-৩, যা থেকে উৎক্ষেপিত হয় চন্দ্রযান-৩, তার ইঞ্জিনও তৈরি করেন।


বিএন রামকৃষ্ণণ, ডিরেক্টর, ISRO টেলিমিটরি ট্র্যাকিং অ্যান্ড কম্যান্ড নেটওয়র্ক (ISTRAC)


চাঁদের চারিদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান। যে কম্যান্ডের উপর ভর করে তা সম্ভব হয়েছে, তার নেপথ্য নায়ক বিএন রামকৃষ্ণণ। ভারতের বৃহত্তম ডিশ অ্যান্টেনা, ৩২ মিটার ব্যাসযুক্ত ডিশ, যা বেঙ্গালুরুর বাইরে রয়েছে, তার মাধ্যমেই বিজ্ঞানীদের নির্দেশ পৌঁছচ্ছে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান এবং ল্যান্ডার 'বিক্রমে'। অধোগমন থেকে অবতরণ, শেষ ২০ মিনিটও ISTRAC থেকেই পর্যবেক্ষণ করা হবে।