নয়াদিল্লি: পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশেও এখন আধিপত্য় কায়েমের চেষ্টা চলছে। তাবড় দেশ সেই দৌড়ে নাম লিখিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। আর সেই আবহেই কৌতূহল জাগাচ্ছে আমেরিকার মহাকাশ বাহিনীর একটি গোপন অভিযান ঘিরে। তাদের যন্ত্রচালিত মহাকাশ বিমান X37B ৪৩৪ দিন মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। মহাকাশে এতদিন কী করল বিমানটি, কেনই বা সেটিকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কারণ চিন এবং রাশিয়াও মহাকাশ প্রতিরক্ষায় বিশেষ জোর দিচ্ছে। (US Space Force)
মহাকাশে নিজেদের স্বার্থরক্ষা, আগ্রাসন প্রতিহত এবং গবেষণা সংক্রান্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ২০১৯ সালে আমেরিকার সেনার ষষ্ঠ শাখা হিসেবে মহাকাশ বাহিনীর প্রতিষ্ঠা হয়। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত সাতটি মহাকাশ অভিযানে গিয়েছে X-37B বিমান, সরকারি ভাবে যাকে X-37B Orbital test Vehicle 7-ও বলা হয়। ৭ মার্চ গভীর রাতে মহাকাশ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ মহাকাশ বাহিনী ঘাঁটিতে এসে নামে সেটি। (Science News)
বিমানটি ফিরে আসার পর আমেরিকার মহাকাশ বাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখে, ‘আমেরিকার মহাকাশ বাহিনীর X-37B যন্ত্রচালিত বিমানটি ভ্যান্ডেনবার্গ মহাকাশ বাহিনী ঘাঁটিতে নেমে এসেছে’। বিমানটির নির্মতা Boeing হলেও, ২০০৪ সালে প্রকল্পটি Defense Advanced Researche Projects Agency (DARPA)-র হাতে হস্তান্তরিত হয়। ৩০ ফুট দীর্ঘ বিমানটি, আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র অবসরপ্রাপ্ত Space Shuttle-এর আয়তনের চার ভাগের একভাগ।
পৃথিবীপৃষ্ঠের ১৫০ থেকে ৫০০ মাইল উঁচু দিয়ে ওড়ে X-37B বিমানটি। পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান প্রযুক্তি এবং অন্য দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা চালায়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি অভিযানের সূচনা করে আমেরিকা। মহাকাশে বিমানটি Aerobraking অনুশীলন করেছে বিমানটি, যা আসলে ন্যূনতম জ্বালানি ব্যবহার করে কক্ষপথ বদলের কৌশল। বায়ুমণ্ডলের একেবারে গা ঘেঁষে এই কার্য সম্পন্ন হয়।
এর আগে OTV-6 অভিযাবের আওতায় পৃথিবীর কক্ষপথে ৯০৮ দিন কাটিয়েছিল একটি মহাকাশ বিমান। কিন্তু ৪৩৪ দিন ধরে মহাকাশে কী করছিল X-37B, সেই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ সম্প্রতি মহাকাশ প্রতিরক্ষায় জোর দিয়েছে চিনও। মহাকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি বিজ্ঞাপনও দেয় তারা। মহাজাগতিক বস্তুসমূহের আঘাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষার কথা বলে হলেও, বিজ্ঞাপনে এ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক, অল্পবয়সিদের আবেদন চাওয়া হয়। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং গ্রহাণু সম্পর্কিত জ্ঞান থাকার কথাও উল্লেখ ছিল বিজ্ঞাপনে।
মহাকাশ প্রতিরক্ষায় চিনের সক্রিয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন আমেরিকার মহাকাশবাহিনীর প্রধান, জেনারেল চান্স সল্টজম্যান। চিন এবং রাশিয়া, দুই দেশই মহাকাশ প্রতিরক্ষা নিয়ে অত্যধিক তৎপরতা দেখাচ্ছে বলে মত তাঁর। চিন এবং রাশিয়া মহাকাশে যুদ্ধ চালানোর ক্ষমতা যেভাবে বাড়িয়ে চলেছে, তার মোকাবিলা করতেই আমেরিকাকে নিজস্ব মহাকাশ বাহিনী তৈরি করতে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাই আমেরিকার X-37B মহাকাশ বিমানটিকেও কোনও অভিযানে পাঠানো হয়েছিল কি না উঠছে প্রশ্ন।