মুম্বই : মুম্বই। সাংস্কৃতিকভাবে একটি প্রাণবন্ত শহর। কিন্তু, গত কয়েকমাস ধরে যেন স্তব্ধ। ফের একবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বাণিজ্যনগরী। সৌজন্যে- রাধিকা মার্চেন্ট। মঞ্চে তাঁর ভারতনাট্যম পারফরম্যান্স আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। কিন্তু, কে এই রাধিকা মার্চেন্ট ? নীতা ও মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির হবু স্ত্রী। 


এই উপলক্ষ্যে রবিবার BKC-তে জিও ওয়ার্ল্ড সেন্টারের গ্র্যান্ড থিয়েটারে উপস্থিত ছিলেন শহরের বিশিষ্টরা। রাধিকার মঞ্চে প্রথম একক পারফরম্যান্সে উৎসাহ ও সাহস জোগাতে। সপরিবারে উপস্থিত ছিল মার্চেন্ট ও আম্বানি পরিবার। একইভাবে অনুষ্ঠানে সামিল হন তাঁদের জনসেবা, ব্যবসা এবং শিল্পকলা জগতের বন্ধু-বান্ধবরা। ধীরুভাই আম্বানি স্কোয়ারের মধ্যে দিয়ে জিও ওয়ার্ল্ড সেন্টারের গ্র্যান্ড থিয়েটারে প্রবেশের সময় অতিথিদের চোখেমুখে উত্তেজনা ছিল দেখার মতো। অতিথিদের বেশিরভাগই তাঁদের ঐতিহ্যবাহী এমব্রয়ডারি করা সিল্ক শাড়ি, শেরওয়ানি এবং কুর্তা পরিহিত ছিলেন। যা অনুষ্ঠানের জাঁকজমকতা বাড়িয়ে তোলে। আম্বানি ও মার্চেন্টরা প্রত্যেক অতিথিকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সমস্ত কোভিড প্রোটোকল অনুসরণ করা হয়। তার আগে পরীক্ষা সহ যাবতীয় বিধি গ্রহণ করা হয়েছিল, যা সবার নিরাপত্তা এবং সুস্বাস্থ্যের স্বার্থে অতিথিরা সহজেই মেনে নেন।


এই পরিবেশে যে তারকা সত্যিই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল, তিনি রাধিকা মার্চেন্ট নিজেই। তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে। এটি ছিল তাঁর এবং তাঁর গুরু শ্রীমতী ভাবনা ঠাকরের সাফল্যের সময়। ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাধিকাকে ভারতনাট্যমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ভাবনা। মঞ্চে তাঁর একক পারফরম্যান্সের এই বিশেষ দিনটির জন্য তাঁকে তিলে তিলে গড়ে তুলছেন। Arangetram (আরঙ্গেত্রাম) অর্থাৎ একজন নতুন শিল্পীর প্রাচীন শিল্পকলার দুর্লভ জগতে, শিল্পের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবং গুরু-শিষ্য পরম্পরায় প্রবেশ করাকে নির্দেশ করে। নীতা আম্বানির পরে আম্বানি পরিবারে ভারতনাট্যমের অপর একজন সদস্য হতে চলেছেন রাধিকা। নীতা আম্বানি নিজেও ভারতনাট্যমে প্রশিক্ষিত। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বিশাল দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও, তিনি ভারতনাট্যম পারফর্ম করে যান। 




রাধিকার পারফরম্যান্সে Arangetram-এর সমস্ত ঐতিহ্যবাহী উপাদান ছিল। পুষ্পাঞ্জলি থেকে শুরু করে মঞ্চের দেবতা, ঈশ্বর, গুরু এবং শ্রোতাদের আশীর্বাদ প্রার্থনা, এরপরেই গণেশ বন্দনা এবং ঐতিহ্যবাহী আল্লারিপু - পারফরম্যান্সের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা...সবই ছিল। এই পারফরম্যান্স সেট করা হয়েছিল আদি তালের ঐতিহ্যবাহী রাগ ও ছন্দে। এর পরে জনপ্রিয় ভজন ‘অছ্যুতম কেশবম’ থেকে রাগ রাগমালিকা এবং তিনটি গল্প বলা - ভগবান রামের প্রতি শবরীর আকাঙ্ক্ষা, গোপীদের সাথে ভগবান কৃষ্ণের নৃত্য এবং মা যশোদা ও শিশু কৃষ্ণের গল্প। শিব পঞ্চাক্ষরের একটি শক্তিশালী পরিবেশনা, ভজন এবং ভগবান নটরাজের চিরন্তন নৃত্যকে চিত্রিত করা।



রাধিকা এরপর জটিল 'অষ্টরস'- বা নাট্যশাস্ত্র অনুযায়ী মানুষের মধ্যে থাকা আটটি আবেগ তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে শৃঙ্গার (প্রেম), হাস্য (হাসি), করুণা (দুঃখ), ভয় (ভয়), বীরা (বীরত্ব), রৌদ্র (ক্রোধ), বিভীৎসা (বিতৃষ্ণা) এবং অদ্ভূত (আশ্চর্য)। রাধিকার অভিব্যক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন নৃত্য মুদ্রার মাধ্যমে আবেগ দেখানোর ক্ষমতা দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে যান।


শেষ হয় তিল্লানা অর্থাৎ জটিল ফুটওয়ার্ক, জটিল হাত সঞ্চালন সহ একটি নাচ এবং মূর্তিময় ভঙ্গি দিয়ে। বিশাল করতালিতে তাঁর শো শেষ হয়। যা ছিল তাঁর এবং তাঁর গুরুর জন্য সন্তুষ্টির একটি মুহূর্ত এবং শিল্পের ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিল্প-জগতে আরও এক শিল্পীর আবির্ভাব।