কলকাতা: সামনেই দোলপূর্ণিমা। তার আগে রাধার বেশে জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার মহম্মদ শামির (Mohammed Shami) কন্যা আইরা। পরনে লাল পাড় হলুদ শাড়ি, হাতে মাটির কলসী, পা মেলাল 'কলঙ্কিনী রাধা'র সুরে। ক্যামেরার পিছনে হাসিন জাহান (Hasin Jahan)। মেয়ের নাচ শ্যুট করলেন তিনি।


এর আগে মহালয়ার সময় মেয়েকে দুর্গা সাজিয়ে শ্যুট করেছিলেন। এবার রাধা। হাসিন বলছেন, 'আমরা বাংলার মানুষ। বাঙালি সংস্কৃতিতেই বেড়ে উঠেছি। বাংলার সমস্ত উৎসব অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছি। স্কুল জীবনে অনুষ্ঠান করেছি। বেবোকেও (আইরার ডাকনাম) সেভাবেই মানুষ করতে চাই।'


মাত্র ২ বছর বয়স থেকে নাচ শিখছে আইরা। লেক গার্ডেন্সে নাচের ক্লাস করতে যায়। মাঝে অবশ্য করোনার জন্য বন্ধ ছিল নাচের ক্লাস। করোনা সংক্রমণের ঢেউ কিছুটা নিস্তরঙ্গ হয়ে আসার পর আবার শুরু হয়েছে নাচের ক্লাস। হাসিন বলছেন, 'বেবো দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠবে। ভরতনাট্যম শিখতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে রবীন্দ্র নৃত্য ও আধুনিক গানের সঙ্গে নাচ করে। সঙ্গীত ও ভীষণ পছন্দ করে। নিজেই মোবাইলে গান চালিয়ে নাচতে শুরু করে দেয় বাড়িতে।'


এক্সক্লুসিভ সেই ভিডিও দেখুন এবিপি লাইভে (ভিডিও সৌজন্য: হাসিন জাহান)


 



হাসিন নিজে নাচ করতেন। বলছেন, 'আমি ক্লাসিক্যাল নাচ শিখেছি। ভাল নাচ করব স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু নিজের কেরিয়ার আর সেদিকে যায়নি। মেয়ের মধ্যে দিয়ে অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। মেয়েও নাচে আগ্রহী। সাজতে ভালবাসে। নাচ করতেও ভীষণ ভালবাসে।'


কিন্তু রাধা সাজিয়ে ভিডিও শ্যুট করতে দ্বিধা হয়নি? বিশেষ করে আইরাকে দুর্গা সাজানোয় আগেই যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিংয়ের শিকার হতে হয়েছিল? প্রত্যয়ী গলায় হাসিন বলছেন, 'জাতপাতের ভেদাভেদ মানি না। রক্ষণশীল পরিবার নয় আমাদের। পোশাক-আশাক নিয়ে কোনও ছুৎমার্গ নেই। আমরা ছোটবেলা সকলের সঙ্গে মিশেছি। সকলের বাড়িতে গিয়েছি। মেলামেশা করেছি। এখনকার বাচ্চারা ফ্ল্যাটবন্দি। বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে তাই ওদের আলাপ করানোটা জরুরি। তবে সামাজিক কিছু সমস্যা থাকেই। আমি মডেলিং শুরু করেছিলাম। পরে শামির সঙ্গে বিয়ে হয়। তারপর থেকে পোশাক থেকে শুরু করে জীবনযাপন, অনেক কিছু নিয়েই কট্টরপন্থীরা ট্রোলিং করেছে। গায়ে মাখিনি। বেবো বড় হচ্ছে। ওকে শেখানো জরুরি যে, আমরা সবার আগে মানুষ।'


হাসিন আরও বলছেন, 'জোর করে বিধিনিষেধ চাপানো হবে কেন? চাই না আমার মেয়ে এভাবে মানুষ হোক। বোরখা পরা নিয়ে গোঁয়ার্তুমি পছন্দ নয়। বেশিরভাগ মহিলাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভয়ে বোরখা পরে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আতঙ্ক নিয়ে ধর্ম হয় না। যাঁরা সত্যিই ধর্ম অন্ত প্রাণ, দিনে পাঁচবার নমাজ পড়েন, তাঁরা কেউ ট্রোল করেন না। যাঁরা নিজেরা অন্যায় করেন, তাঁরাই ট্রোলিং করেন।'


দোল যে তাঁর জীবনেও বিশেষ এক মুহূর্ত, জানিয়েছেন হাসিন। বলেছেন, 'ছোট ছিলাম যখন, তখন বাবা সকলকে নিয়ে বাজারে গিয়ে পিচকিরি ও রঙ কিনে দিতেন। গত বছর আমার ভাই বাড়ির সব বাচ্চাদের রঙ কিনে দিয়েছিল। কলকাতায় থাকলেও দোলের নানা অনুষ্ঠানে গিয়েছি। উপভোগ করি এই দিনটি।' যোগ করলেন, 'অনেক কিছু দেখেছি। ধর্ম নিয়ে অশান্তি-হিংসা দেখেছি। আমি মনুষ্যত্বের ধর্মে বিশ্বাসী। আগে তো মানুষ। তারপর হিন্দু-মুসলিম। ধর্ম নিয়ে শো অফে বিশ্বাসী নই। বেবোকেও সেভাবেই মানুষ করতে চাই।'