সন্দীপ সরকার, কলকাতা: প্রথম পর্বতারোহী হিসাবে বিনা অক্সিজেনে মাউন্ট এভারেস্ট (Mt Everest) জয় করার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। এভারেস্টের শৃঙ্গে উড়িয়েছিলেন ভারতের জাতীয় পতাকা। হুগলির চন্দননগরের পিয়ালি বসাক (Piyali Basak) ফের বেরিয়ে পড়ছেন পর্বত জয়ের অভিযানে। এবার তাঁর লক্ষ্য, বিনা অক্সিজেনে জোড়া শৃঙ্গ - অন্নপূর্ণা ও মাকালু আরোহণ।


এবিপি লাইভকে পিয়ালি বলছেন, 'ফের অভিযানে বেরোচ্ছি। ১৬ মার্চ রওনা হব। এবারের লক্ষ্য বিনা অক্সিজেনে অন্নপূর্ণা ও মাকালু জয় করা। এই অভিযানের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর পর্বতারোহণে যেমন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, তেমনই ভারতের নাম আরও উজ্জ্বল হবে বলে আমার বিশ্বাস। ৮ মার্চ আত্মর্জাতিক নারীদিবস পালিত হল। তারপরই আমি অভিযানে বেরোচ্ছি। আশা করছি নারী শক্তির বিকাশ ঘটাবে আমার আগামী অভিযান। পর্বতারোহণের প্রতি জনসাধারণের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও সাহস সঞ্চারিত হবে। আরও অনেক মানুষ পাহাড়কে ভালবাসবেন। দেশকে ভালবাসবেন।'


মাথার ওপর ঋণের বিশাল বোঝা। এভারেস্ট ও মাকালু অভিযানে গিয়ে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকার দেনা হয়েছিল। তার ওপর গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম শৃঙ্গ চো-ইউ গিয়েছিলেন। সেই অভিযানেও নতুন মাইলফলক তৈরি করেন পিয়ালি। সেই প্রথম নেপালের দিক দিয়ে কেউ চো-ইউ (৮২০১ মিটার) অভিযান করেন। সেই অভিযানেও বিপুল খরচ হয়েছে। বেড়েছে ঋণের পরিমাণ। সব মিলিয়ে এখনও ৫০ লক্ষ টাকার দেনা। তবু পর্বতারোহণে অদম্য বঙ্গকন্যা।


পিয়ালি বলছেন, 'সেরকম কোনও স্পনসর পাইনি। সকলের আশীর্বাদ চাইছি। সাধারণ মানুষ আমার পাশে থেকেছেন। তাঁদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। পৃথিবীর পর্বতারোহণের ইতিহাসে এই প্রথম কেউ বিনা অক্সিজেনে ৮ হাজার মিটারের দুটি শৃঙ্গ জয়ের অভিযানে যাচ্ছে। আমি চাই পৃথিবীর মানচিত্রে ভারতের নাম উজ্জ্বল করে তুলতে। আমার সাফল্য মানুষকে আরও প্রগতিশীল ও নতুন নতুন ভাবনার ইন্ধন দিক। অভিনবত্ব আনতে সাহায্য করুক।'


২০২১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে প্রথম ভারতীয় হিসাবে অক্সিজেনের সহায়তা ছাড়াই ধৌলগিরি পর্বত (৮১৬৭ মিটার) আরোহণ করেছিলেন পিয়ালি৷ তার আগে ২০১৮ সালে মাউন্ট মানাস্লু (৮১৬৩ মিটার) আরোহণ করেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে স্নাতক পিয়ালির ছোট থেকেই খেলাধুলোর প্রতি অদম্য ঝোঁক। মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট রয়েছে। স্কিয়িংয়ে পারদর্শী। পিয়ালি বলছেন, 'আমি পর্বতারোহণের মধ্যে দিয়ে একটা বার্তা দিতে চাই। বলতে চাই যে, সমাজে নারীরা পুরুষের মতো সমানভাবে সক্ষম। ভারতীয় নারীদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতে চাই।'


অভিযানের এক সপ্তাহ আগে পিয়ালিকে শুধু ভাবাচ্ছে আর্থিক প্রতিকূলতা। বলছেন, 'অনেকেই পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তবে এত বিশাল ঋণের বোঝা নিয়ে অনেক লড়াই করতে হচ্ছে। বড় কোনও স্পনসর পেলে আরও অনেক অনেক শৃঙ্গ জয়ের সাহস রাখি।'



আরও পড়ুন: শুরু থেকেই কলকাতায় কেকেআরের প্রস্তুতি শিবিরে থাকবেন রাসেল-নারাইন, শাকিবদের নিয়ে প্রশ্ন