কলকাতা: সদ্য ভারতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। আর শুরুতেই সামনে প্রবল প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যাদের কাছে হারতে হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও মাঠ ছাড়তে হয়েছিল খালি হাতে। কেন উইলিয়ামসনদের (Kane Williamson) বিরুদ্ধে মাঠের যুদ্ধের নকশা তৈরিতে তাই বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছিল রাহুল শরদ দ্রাবিড়কে (Rahil Dravid)।


কিন্তু শুনলে চমকে উঠবেন যে, টিম ইন্ডিয়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি দ্রাবিড় সামলে চলেছেন আর এক দায়িত্ব। আর সেটা হল, ভারতের জুনিয়র ক্রিকেটারদের দিশা দেখানো। যে কাজ করার ফাঁকে হয়তো কোচিংয়ে একটা বড়সড় বিপ্লবই ঘটিয়ে ফেলছেন দ্রাবিড়।


জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচির মধ্যে থেকেও ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সময় বার করে ফেলছেন দ্রাবিড়। জুনিয়র ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স কেমন হচ্ছে, তাঁদের কী করতে হবে, কীভাবে এগোবে, সব ছকে দিচ্ছেন ক্রিকেট বিশ্বের 'দ্য পারফেকশনিস্ট'। ভারতে তো বটেই, সারা বিশ্বেও এভাবে একটা গোটা দেশের ক্রিকেটকে এক সূত্রে বেঁধে ফেলার প্রয়াস বড় একটা দেখা যায়নি। কিংবদন্তি দ্রাবিড় তাই কোচিংয়েও নতুন পথের দিশারি হয়ে উঠেছেন।


দেশের মাটিতে রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলি-অজিঙ্ক রাহানেরা যখন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলছিলেন, তখনই ভারতের এ দল গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। দক্ষিণ আফ্রিকা এ দলের বিরুদ্ধে তিনটি চারদিনের ম্যাচ খেলেছে ভারতীয় এ দল। সেই দলে ছিলেন পৃথ্বী শ (Prithvi Shaw), ঈশান পোড়েল (Ishan Porel), অভিমন্যু ঈশ্বরণ (Abhimanyu Easwaran), প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চালরা (Priyank Panchal)। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই আবার দ্রাবিড়ের পুরনো ছাত্র। ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলার সময় 'দ্য ওয়াল'-এর ছায়ায় ছিলেন।


ভারতীয় এ দলের কোচ হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ কোটাক। সহকারী কোচ ছিলেন সাইরাজ বাহুতুলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কোচিং স্টাফেদের নিয়মিত ফোন করতেন দ্রাবিড়। প্রত্যেকের পারফরম্যান্স, পিচ, আবহাওয়া, প্রতিপক্ষ দল, সব কিছু নিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করতেন। তারপর সাজিয়ে দিতেন নকশা। কোন ক্রিকেটারের কোথায় খামতি থাকছে, কোথায় আরও উন্নতি প্রয়োজন, বিশ্লেষণ করে সব বলে দিতেন দ্রাবিড়।


দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শনিবার বিকেলে শহরে ফিরেছেন ভারতীয় এ দলে বাংলার দুই প্রতিনিধি - ঈশান ও অভিমন্যু। দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন ওমিক্রনের বাড়াবাড়ি চলছে। তাই সতর্কতা হিসাবে আপাতত এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে বাংলার দুই তরুণকে। রবিবার এবিপি লাইভকে ঈশান বললেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকা এ দলের বিরুদ্ধে খেলার সময় আমাদের কোচিং স্টাফেদের নিয়মিত ফোন করতেন দ্রাবিড় স্যার। সকলের ব্যাপারে খোঁজ নিতেন। নির্দেশ দিতেন। আমাদের সকলকেই রাহুল স্যার হাতের তালুর মতো চেনেন। সেই মতো কার কোথায় শক্তি আর কোন জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে, সব স্যারের নখদর্পণে। সেই মতো স্যার প্রত্যেকের জন্য নীল নকশা বানিয়ে আমাদের কোচেদের হাতে দিতেন। সেই পরামর্শ মেনে আমরা প্র্যাক্টিস করেছি। সুফলও পেয়েছি।'


একই কথা শোনা গেল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরা অভিমন্যু, প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চাল, উমরন মালিকদের থেকে। প্রত্যেকের জন্যই আলাদা আলাদা কৌশল বানিয়ে দিয়েছেন দ্রাবিড়।


সিনিয়র জাতীয় দলের কোচ থাকাকালীন কেউ জুনিয়র দলের এত খুঁটিনাটি নিয়ে ভেবেছেন বলে শোনা যায়নি। বড়জোর জাতীয় দলের কোনও তারকা চোট পেয়ে মাঠের বাইরে কিছুদিন কাটানোর পর এ দলে খেলে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইলে তাঁর ফিটনেস ও অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নিতেন সিনিয়র দলের কোচ। ডানকান ফ্লেচার থেকে রবি শাস্ত্রী, এই নিয়মের হেরফের হয়নি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ছক ভাঙছেন দ্রাবিড়। তৈরি করছেন নতুন দৃষ্টান্ত।


সেই সঙ্গে দেখিয়ে দিচ্ছেন, কেন তাঁকে 'মিস্টার ডিপেন্ডেবল' বলে কুর্নিশ করে গোটা বিশ্ব।