কলকাতা: মুম্বই থেকে পালগড় প্রায় ৯০ কিলোমিটার রাস্তা। ছুটির দিনে অনেকেই ভোরবেলা লংড্রাইভে পালগড়ের দিকে গাড়ি ছোটান। সন্ধ্যায় ফিরে আসেন হাইওয়ে ধরে।


কিন্তু ১৮০ কিলোমিটার পথ যদি নিত্য যাতায়াতে পাড়ি দিতে হয়! এবং সেটাও নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য! যে স্বপ্ন সফল করতে হলে ক্লান্তি, ধকল সব কিছুকে ছুড়ে ফেলতে হয় আরব সাগরের জলে।


শার্দুল ঠাকুরের সংগ্রামটা ঠিক সেরকমই ছিল। পালগড় থেকে মুম্বই পাড়ি দিতেন রোজ। ৩ ঘণ্টা ট্রেনে সফর করে পৌঁছতেন প্র্যাক্টিসে। মাঠে নেমে ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে কিটব্যাগ টানতে টানতে ফেরার ট্রেন ধরতেন।


সেই সংগ্রামের পুরস্কারই যেন পাচ্ছেন শার্দুল। ভারতের চলতি ইংল্যান্ড সফরে বলের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন মুম্বইয়ের ক্রিকেটার। এতটাই প্রভাবশালী তাঁর পারফরম্যান্স যে, ওভালে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার পাওয়ার পর রোহিত শর্মা পর্যন্ত বলে দিয়েছেন, ম্যাচের সেরার স্বীকৃতি প্রাপ্য ছিল শার্দুলের। যিনি দুই ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করেছেন। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন জো রুটের মহার্ঘ উইকেট।


রোহিতের মতোই মুম্বইয়ে দীনেশ লাডের প্রশিক্ষণে ক্রিকেট মাঠে উত্থান শার্দুলের। মুম্বই থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে দীনেশ বললেন, 'শার্দুল আমাদের স্কুলের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচে ৭৮ রান ও ৫ উইকেট নিয়েছিল। নবম শ্রেণিতে পড়ত তখন। ওকে দেখে ভাল লেগে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল এই ছেলে অনেক দূর যাবে। আমি ওকে বলেছিলাম, আমাদের স্কুলে ভর্তি হও। শার্দুল বলেছিল, বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। ওর বাবা সেদিন মাঠে এসেছিলেন। জিজ্ঞেস করায় বললেন, মুম্বই থেকে তিন ঘণ্টার দূরত্বের পালগড়ে থাকেন। সেখান থেকে মুম্বইয়ের স্কুলে যাতায়াত কার্যত অসম্ভব ছিল। ওর বাবা জানিয়েছিলেন যে, পরের বছর দশম শ্রেণিতে উঠবে। পড়াশোনার চাপ বাড়বে। তাই মুম্বই আসতে পারবেন না। তবে আমি দমিনি। ফেব্রুয়ারিতে সেই ম্যাচটা হয়েছিল। তারপর মার্চ ও এপ্রিল মাসে নিয়মিতভাবে ফোন করে গিয়েছি ওকে এবং ওর অভিভাবকদের।'


এত ভাল প্রতিভা বিকশিত হতে পারবে না, এই চিন্তাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল দীনেশকে। তারপরই বড় এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। দীনেশ বলছেন, 'তারপর একদিন স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করি। বলি তুমি রাজি হও শার্দুলকে আমার কাছে রাখব। আমার স্ত্রী বলে, তোমার বাড়ি, তুমি চাইলে রাখো। আনন্দে দিশাহারা হয়ে তৎক্ষনাৎ শার্দুলের বাবাকে ফোন করি। আমার বাড়িতে ওকে এনে রাখার প্রস্তাব দিই। ওরা রাজি হয়। আমার বাড়িতে আসে। সেই বছরই ছয় বলে ছয় ছক্কা মেরে বিশ্বরেকর্ড করে। তারপর মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব ১৫ দলে সুযোগ পেয়ে যায়। ওর কেরিয়ার অন্য খাতে বইতে শুরু করে।'


বিদেশে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন রোহিত। তবে দীনেশ দুই ছাত্রের জন্যই সমান গর্বিত। বলছেন, 'শার্দুল ৬৭ করে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতকে ম্যাচ জেতানোর দিনও কোচ হিসাবে গর্ব হয়েছিল। ওই ম্যাচে পন্থও ভাল খেলেছিল। তবে শার্দুলের ইনিংস আর বল হাতে সাফল্য না থাকলে ভারত জিতত না।' যোগ করছেন, 'প্রতিভা ছিল। সুযোগ পেয়েই তা কাজে লাগিয়েছে। শার্দুল অনেক দূর যাবে।'