কলকাতা: তিনি যখন শেষবার ভারতের হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন, বিজ্ঞানীরা ছাড়া করোনা ভাইরাসের নাম পর্যন্ত শোনেননি কেউ। আমেরিকার মসনদে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আফগানিস্তানে ফের তালিবানি শাসন কায়েম হয়নি।


চার বছর পর ভারতের টেস্ট দলে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন জয়ন্ত যাদব (Jayant Yadav)। আর দলে ফিরেই নজর কেড়েছেন হরিয়ানার অফস্পিনার। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের (Ind vs NZ) দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট নিয়ে কিউয়িদের ব্যাটিংয়ের কোমর ভেঙে দিয়েছেন। সাড়ে তিন দিনে টেস্টে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে ভারত। যে জয়ের অন্যতম কারিগর জয়ন্তও।


টেস্টে জাতীয় দলের হয়ে ফের মাঠে নামতে পেরে উচ্ছ্বসিত ৩১ বছরের অফস্পিনার। মুম্বইয়ে সিরিজ জয়ের পরই ফিরেছেন গুরগাঁওয়ে নিজের বাড়িতে। মঙ্গলবার সেখান থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে জয়ন্ত বললেন, 'ভারতীয় টেস্ট দলে ফিরতে পারাটা অসাধারণ অনুভূতি। ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ড্রেসিংরুমের আবহটা চমৎকার। সব কিছুই পরিকল্পনামাফিক হয়েছে। ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পেরে ভাল লাগছে। উত্তেজনা, স্নায়ুর চাপ, আনন্দ, সব মিলিয়ে মিশ্র অভিজ্ঞতা।'


২০১৬ সালে বিশাখাপত্তনমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক। সেই সিরিজে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরিও করেছিলেন। টেস্টে ৯ নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করে ভেঙে দিয়েছিলেন ফারুখ ইঞ্জিনিয়ারের রেকর্ড। জয়ন্তর আগে পর্যন্ত ৯ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয়দের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ রানের (৯০) ইনিংস ছিল ফারুখের।


ঘটনা হল, সেই ওয়াংখেড়েতেই প্রত্যাবর্তন ঘটালেন জয়ন্ত। দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন। মাঝের সেই চার বছরে কখনও অবসাদ গ্রাস করেনি? 'হতাশ হইনি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর চোট পাই। সেই কারণে বাদ পড়ি। আমি বিশ্বাস করি, যা হয় ভালর জন্যই হয়। চোট কোনও ক্রিকেটারের কাছেই ভাল নয়। তবে এরকম সময় অনেক কিছু শিখিয়ে যায়। যখনই সুযোগ পেয়েছি, নিজের সেরাটা দিয়েছি,' বলছিলেন জয়ন্ত। যোগ করলেন, 'নিজেকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখাটা কঠিন। প্রত্যেক মানুষেরই একটা সাপোর্ট সিস্টেম থাকে। আমার পরিবার, আমার স্ত্রী, মা, বোন, বন্ধুরা আমাকে সবসময় সমর্থন করে গিয়েছে। হরিয়ানা ক্রিকেট সংস্থা ও অনিরূদ্ধ চৌধুরি সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন। সাহায্য করেছেন। আমার প্রত্যাবর্তনের নেপথ্যে সব কারণগুলোই কাজ করেছে।'


সামনেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে তিনটি টেস্ট খেলবে ভারত। যে সফরের আগে রবীন্দ্র জাডেজা সুস্থ হয়ে উঠবেন। থাকবেন আর অশ্বিন ও অক্ষর পটেল। চার স্পিনার নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। নজরকাড়া প্রত্যাবর্তন ঘটানোর পরেও দক্ষিণ আফ্রিকাগামী দলে সুযোগ না পেলে? প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ যেন থামলেন জয়ন্ত। তারপর পরিণত গলায় বললেন, 'খেলোয়াড় হিসাবে কিছু ব্যাপার আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। যেমন পরিশ্রম করা, নিজের সেরাটা দেওয়া, মাঠে পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগানো। আর কিছু ব্যাপারের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যেমন বৃষ্টির জন্য খেলা ভেস্তে যাওয়া বা দল নির্বাচন। আমার কাজ হল নিজের কাজটা করে যাওয়া। দলে থাকব কি না ঠিক করবেন নির্বাচকেরা। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সুযোগ পেলে দারুণ হবে। না পেলেও ভেঙে পড়ব না। এই সিরিজ থেকে প্রচুর আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। সেটা কাজে লাগিয়ে মানসিকভাবে ও দক্ষতার দিক থেকে আরও উন্নতি করতে থাকব।'


মা লক্ষ্মী ১৮ বছর আগে এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। জয়ন্ত তখন সদ্য কিশোর। বিমাতা জ্যোতি যাদব অবশ্য ছেলের ওপর কোনও আঁচ পড়তে দেননি। পাশে থেকেছেন। ছোটবেলার সেই কঠিন অধ্যায় জয়ন্তকে মানসিকভাবে আরও পোক্ত করে তুলেছে বলে মনে করেন তাঁর ঘনিষ্ঠরাও।


দলে ফিরে ছাপ রেখেছেন। তবু, জাতীয় দলে তাঁর জায়গা পাকা কি না, হলফ করে বলা যাচ্ছে না। চিরলড়াকু জয়ন্ত তাই কোমর বাঁধছেন পরের লড়াইয়ের জন্য।