কলকাতা: লাল টুকটুকে শাড়ি। কপালে সিঁদুরের টিপ। গা ভর্তি গয়না। হাতে ত্রিশূল।


মহালয়ার সকালে দুর্গা সাজল একরত্তি আইরা। বয়স মাত্র ৬। অস্ত্র হাতে অবশ্য বেশ নিপুণ। মহিষাসুরকে যুদ্ধে হারিয়ে বুকে গেঁথে দিল ত্রিশূল। আর তাতেই বিপত্তি। কট্টরপন্থীরা রেগে আগুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলল খুদেকে বিদ্রুপ।


কারণ, ফুটফুটে বাচ্চাটি মুসলিম। আইরার আর একটি পরিচয় হল, তার বাবা জাতীয় দলের তারকা পেসার মহম্মদ শামি। সেলিব্রিটি-কন্যা হওয়ার বিড়ম্বনা আরও বেশি। দুর্গা সেজে নেটিজেনদের ট্রোলিংয়ের নিশানা হতে হল আইরা শামিকে।


যদিও তাতে দমে যাওয়ার পাত্রী নন আইরার মা হাসিন জাহান। বরং জোর গলায় বলছেন, মেয়েকে সব ধর্মকে ভালবাসতে শেখাচ্ছেন তিনি। উদারমনস্ক করে তুলতে চাইছেন।


বুধবার, মহালয়ার দিন সকালে দুর্গা সেজে ফটোশ্যুট করে আইরা। তার কয়েকটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন হাসিন। তারপর থেকেই কুমন্তব্যে ভরে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়াল। আগেও দোল বা দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে ট্রোলিংয়ের শিকার হয়েছেন হাসিন নিজেই। এবিপি লাইভকে তিনি বললেন, 'আমি চাই না আইরার ধর্ম নিয়ে কোনও ছুৎমার্গ থাকুক। ও নাচতে ভালবাসে। প্রত্যেক উৎসবে নাচে, উদযাপন করে। সব ধর্মের অনুষ্ঠানে সামিল হয়। ওকে এভাবেই বড় করতে চাই।'


ধর্ম নিয়েও কট্টরপন্থীদের সমালোচনা হজম করতে ভায় পান না? হাসিন বলছেন, 'আমার জীবনে এত কিছু ঘটে গিয়েছে যে, আজ এসবে আর পাত্তা দিই না। মাথা ঘামাই না। খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। আগের শ্বশুরবাড়িতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। তারপর মহম্মদ শামিকে বিয়ে। সন্তানের মা হওয়া। তারপর আর এক নতুন লড়াই। নিজের স্বামীর বিরুদ্ধেই। পরিবারের সাহায্য পাইনি। আমার মতো পরিস্থিতিতে পড়লে অনেকেই হয় আত্মহত্যা করবে, বা লড়াই করবে। আমি দ্বিতীয় পথটা বেছে নিয়েছি। একা লড়াই করতে করতে মানসিকভাবে পোক্ত হয়ে গিয়েছি। এখন আর এসবের তোয়াক্কা করি না।' যোগ করলেন, 'আইরার বয়স মাত্র ৬ বছর। খুব ছোট থেকেই ও আমার কাছে নাচ শেখে। ওর যেটা ভাল লাগে সেটাই করেছে।'


আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বরুণ চক্রবর্তীকে পাওয়া নিয়ে সংশয়


হাসিন নিজে মডেলিং করতেন। বিয়ের পর সেভাবে কাজ করেননি। শামির সঙ্গে আপাতত তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। নিজের জগতে ফেরার চেষ্টা করছেন হাসিনও। নতুন করে শুরু করেছেন মডেলিং। আপনি কখনও দুর্গা সেজেছেন? হাসিন বলছেন, 'আমিও দুর্গা সেজেছি। স্কুলে নাচ করতাম। মডেল হিসাবেও দুর্গা সেজে কাজ করেছি।'


মডেলিংয়ের জন্য সাহসী পোশাক পরে হাসিনও মৌলবাদীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তবে হাসিন বলছেন, 'সাহসী পোশাক পরতে সমস্যা হয় না। পরিবার কখনও বাধা দেয়নি। মুসলিম পরিবার হলেও বাড়ি থেকে বাধা দেয়নি।' যোগ করলেন, 'বড় সেলিব্রিটিদেরও তো সমালোচনা হজম করতে হয়। কেউই পাত্তা দেয় না। তোয়াক্কা করে না। আমিও ওসব নিয়ে ভাবি না।'


একাধিক মামলা। খোরপোশের মামলা। মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা। ৮০ হাজার টাকা মেয়ের জন্য প্রত্যেক মাসে।