সন্দীপ সরকার, কলকাতা: একটা সময় খাবার জুটত না। দারিদ্রের অন্ধকারে এমনই ডুবে ছিলেন যে, এক বাটি ঘুগনি আর ডিমসিদ্ধ পাওয়ার জন্য ধানের বস্তা মাথায় তুলে নিতেন। সেই অচিন্ত্য শিউলি (Achintya Sheuli) বার্মিংহামে একইরকম দৃঢ়তায় মাথার ওপর তুলে ধরেছিলেন রেকর্ড ওজন। কমনওয়েলথ গেমসে (CWG 2022) সোনা জয়ের পর এবার পদোন্নতির পথে বাংলার ভারোত্তোলক।
কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতে দেশকে গর্ব করার মতো মুহূর্ত উপহার দিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীতে কর্মরত পদকজয়ীদের সংবর্ধনা দিলেন সেনাপ্রধান মনোজ পাণ্ডে। বুধবার নয়াদিল্লিতে সেবাহিনীতে কর্মরত পদকজয়ীদের হাতে স্মারক ও নগদ পুরস্কারমূল্য তুলে দেন সেনাপ্রধান। সেখানে হাজির ছিলেন অচিন্ত্যও। যিনি সেনাবাহিনীতে সুবেদার পদে কর্মরত। তবে এবার পদোন্নতি পাওয়ার পথে তিনি। সেনাপ্রধান বাংলার ভারোত্তোলককে জানিয়েছেন, কমনওয়েলথে গেমসের স্বর্ণপদকে গোটা দেশ আপ্লুত। সেনাকর্তারাও ভীষণ খুশি। সেনাবাহিনীর প্রথা মেনে পদোন্নতি হবে অচিন্ত্যর।
সেনাবাহিনীতে খেলাধুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্পোর্টস কোটায় প্রতিশ্রুতিমান খেলোয়াড়দের চাকরির বন্দোবস্তও করা হয়। ২০১১ সালে সেনাবাহিনী 'মিশন অলিম্পিক্স প্রোগ্রাম' প্রকল্প চালু করেছিল। যে প্রকল্পের অধীনে সেনাবাহিনীর সমস্ত প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের আধুনিক পরিকাঠামোয় বিশেষ প্রস্তুতির ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৫ সালে পুনেতে সেনাবাহিনীর ট্রায়ালে গিয়ে ভারোত্তোলনে নির্বাচিত হন অচিন্ত্য। তারপর থেকে সেনার তত্ত্বাবধানেই তাঁর ভারোত্তোলন সাধনা। সেনাবাহিনীতে সুবেদার পদে কর্মরত তিনি।
এবারের কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় অ্যাথলিটদের মধ্যে ১৮ জন ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি। সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদের হাত ধরে কমনওয়েলথ গেমস থেকে চারটি সোনা, একটি রুপো ও তিনটি ব্রোঞ্জ-সহ মোট ৮টি পদক এসেছে ভারতের ভাঁড়ারে। সোনা জিতেছেন ভারোত্তোলক নায়েব সুবেদার জেরেমি লালরিন্নুগা, ভারোত্তোলক হাবিলদার অচিন্ত্য শিউলি, বক্সার সুবেদার অমিত পাংহাল এবং কুস্তিগীর সুবেদার দীপক পুনিয়া। রুপো জিতেছেন অ্যাথলিট সুবেদার অবিনাশ সাবলে। ব্রোঞ্জ জিতেছেন হাবিলদার দীপক নেহরা, সুবেদার বক্সার মহম্মদ হুসামুদ্দিন ও সুবেদার সন্দীপ কুমার।
দিল্লিতে ফোন করে জানা গেল, কমনওয়েলথ গেমসে প্রত্যেকের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন সেনাপ্রধান মনোজ পাণ্ডে। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, সেনাবাহিনীর প্রথা মেনে সকলেরই পদোন্নতি হবে। বুধবার নয়াদিল্লির অনুষ্ঠানে বাংলার ভারোত্তোলক অচিন্ত্য-সহ সকলকেই দেখা গিয়েছে খোশমেজাজে। আপাতত দিনবদলের আশায় বাংলার ভারোত্তোলক।
আরও পড়ুন: কমনওয়েলথ ফেন্সিংয়ে সোনা, ভবানী দেবীর হাত ধরে ফের গর্বের মুহূর্ত