কলকাতা: এএফসি কাপে (AFC Cup) জয়ের ছন্দ ধরে রাখতে পারল না মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giants) । মঙ্গলবার রাতে ভুবনেশ্বরে তারা বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসের (Basundhara Kings)বিরুদ্ধে ২-২ ড্র করল। এ দিনের অন্য ম্যাচে মলদ্বীপের মাজিয়া এসআরসি-কে ৬-১-এ হারায় ওডিশা এফসি। এর ফলে তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট পেয়ে মোহনবাগান এসজি রইল গ্রুপশীর্ষে। বসুন্ধরা কিংসের এক পয়েন্ট পেয়ে লাভই হল। তারা উঠে এল দুই নম্বরে। ওডিশা এফসি তিনে। 


এ দিন মোহনবাগানের পক্ষে দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও আশিস রাই গোল করেন। বসুন্ধরা কিংসের পক্ষে ডোরি ও রবিনহো গোল করে সমতা ফেরান। মোহনবাগান এসজি এই মরশুমে টানা আটটি ম্যাচে জয়ের পর এই প্রথম ড্র করল। 


এএফসি-র বিদেশি একসঙ্গে খেলানোর নিয়ম  থাকলেও এ দিন মোহনবাগান এসজি প্রথম এগারোয় পাঁচ বিদেশিকে রাখে। ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিল ও হেক্টর ইউস্তে, মাঝমাঠে হুগো বুমৌস এবং দুই স্ট্রাইকার পেট্রাটস ও জেসন কামিংস। এছাড়াও আনোয়ার আলি, লিস্টন কোলাসো, আশিস রাই, সহাল আব্দুল সামাদ ও গ্ল্যান মার্টিন্স ছিলেন। গোলে যথারীতি বিশাল কয়েথ। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে পরে নামেন শুভাশিস বোস, লালরিয়ানা হ্নামতে, অনিরুদ্ধ থাপা এবং আরমান্দো সাদিকু। 


এ দিন শুরুতে মোহনবাগানের দাপটই ছিল বেশি। বল দখল এবং গোলে শটের দিক থেকে তারাই এগিয়ে ছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশের সেরা দলটি এবং পাল্টা চাপে ফেলে দেয় কলকাতার দলকে। ম্যাচের শেষে দেখা যায় দুই দলই চারটি করে শট গোলে রাখে। মোট শটেও মোহনবাগান সামান্য (১৪-১২) এগিয়ে ছিল। বল দখলেও মোহনবাগান এমন কিছু আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। ৫৩-৪৭-এ এগিয়ে ছিল তারা। ক্রসের দিক থেকে সামান্য এগিয়ে ছিল বসুন্ধরা (১৬-১৪)। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এ দিন কেউ কাউকে একটুও জমি ছাড়তে রাজি ছিল না। 


ম্যাচের কুড়ি মিনিটের মাথাতেই লিস্টন কোলাসো বসুন্ধরার জালে বল জড়িয়ে দেন, কিন্তু তিনি অফসাইডের ফাঁদে পড়ে যান বলে সেই গোল বাতিল হয়ে যায়। তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। ২৯ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন পেট্রাটস। গোলটি মূলত তৈরি হয় বুমৌস, কামিংস ও পেট্রাটসের উদ্যোগে। ডানদিক দিয়ে ওঠা বুমৌস বক্সের মধ্যে থাকা কামিংসকে পাস দেন। ছ’গজের বক্সের মধ্যে চলে আসেন পেট্রাটস। এ বার তাঁকে গোলের পাস বাড়ান কামিংস এবং তাঁর পক্ষে ওই জায়গা থেকে গোলে বল ঠেলা কঠিন ছিল না (১-০)।


তবে মোহনবাগানের আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি ডোরি। ৩৩ মিনিটের মাথায় গোল শোধ করেন তিনি। বসুন্ধরার ব্রাজিলীয় তারকা রবিনহোকে বাড়তি জায়গা দেওয়ারই মাশুল দিতে হয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে। তাঁরই পাস পেয়ে বাঁকানো শটে জালে বল জড়িয়ে দেন ডোরি (১-১)। হেক্টর ইউস্তে স্লাইড করে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারেননি। 


এই গোলের দু’মিনিট পরে বসুন্ধরাকে এগিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে নেন রবিনহো। কিন্তু পেনাল্টি বক্সের বাঁ দিক থেকে নেওয়া তাঁর গোলমুখী শট বারে লেগে ফেরত আসে। ৩৯ মিনিটের মাথায় পেট্রাটসও একটি জোরালো শট নেন বক্সের ডানদিকের কোণ থেকে। যা গোলকিপার মেহদি হাসানের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে গলে গেলেও তিনি হাত দিয়ে তা বাঁচিয়ে নেন। এরপরেও একাধিকবার পরষ্পরের গোল এলাকায় হানা দেয়। কিন্তু প্রতিবারই সজাগ ছিলেন দুই দলের ডিফেন্ডার ও গোলকিপাররা। বিরতিতে ১-১ অবস্থাতেই ড্রেসিংরুমে ফিরে যান তাঁরা। 


দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই বসুন্ধরার ফুটবলারদের মধ্যে ম্যাচের রাশ হাতে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ৪৮ মিনিটেই ডোরির শট বারে লেগে ফিরে আসে। প্রথমার্ধের মতো  দ্বিতীয়ার্ধেও ক্রসবারই ফের বাঁচায় সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। 


এ দিন মোহনবাগানের ডান উইংয়ে আশিস রাই বেশ ভাল খেলেন। প্রথমার্ধেই একাধিক সুযোগ তৈরি করেন তিনি। তাঁর চেষ্টা সফল হয় দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ মিনিটে, যখন মাঝমাঠে একটি বল ইন্টারসেপ্ট করার পর তা পেট্রাটসকে দেন গ্ল্যান মার্টিন্স। ডানদিক দিয়ে ওঠা আশিসকে পাস দেন পেট্রাটস। ডান উইং দিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে নিজেই ফিনিশ করে আসেন আশিস (২-১)। 


কিন্তু গোল করে দলকে এগিয়ে দিলে কী হবে, এই আশিসের ভুলেই ৬৯ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি পেয়ে যায় বসুন্ধরা। বক্সের মধ্যে গোলমুখী রবিনহোকে অবৈধ ভাবে বাধা দেন তিনি। ফলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে দ্বিধা করেননি। রবিনহো নিজেই পেনাল্টি নেন ও দ্বিতীয় গোল শোধ করেন (২-২)। 


শেষ কুড়ি মিনিটে দুই দলই ব্যবধান তৈরি করার মরিয়া চেষ্টা চালায়। ৭৯ মিনিটের মাথায় শুভাশিস বোস, অনিরুদ্ধ থাপাদের নামান মোহনবাগান কোচ ফেরান্দো। ম্যাচের শেষ দিকে একটি থ্রো কল নিয়ে তাঁর সঙ্গে বচসায় জড়ান বসুন্ধরার ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ। যার ফলে সবুজ-মেরুন কোচকে সতর্কও করেন রেফারি। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেও তাঁদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হতে দেখা যায়। 


ছ’মিনিটের বাড়তি সময়েও জয়সূচক গোলের চেষ্টা করে দুই দলই। বুমৌসের দূরপাল্লার জোরালো শট প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লাগে। শেষ মিনিটে সাদিকু গোলের পাস দেন পেট্রাটসকে। কিন্তু ক্লান্ত অস্ট্রেলিয়ান ঠিকমতো বলে পৌঁছতে পারেননি। এই সময়ে আনোয়ার আলি ডানপায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। পরের ম্যাচে তিনি খেলতে পারেন কি না, সেটাই দেখার।