কলকাতা: মুম্বইয়ে জন্ম। সেই মুম্বইয়েই ভারতের ত্রাস হয়ে উঠলেন (Ind vs NZ)। ওয়াংখেড়ে, যে স্টেডিয়ামে বিশ্বসেরার মুকুট উঠেছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মাথায়, সেখানেই বিরল এক রেকর্ড গড়ে ফেললেন আজাজ পটেল (Ajaz Patel)। নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার নিলেন ১০ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় বোলার হিসাবে। জিম লেকার ও অনিল কুম্বলের (Anil Kumble) পর।


যে কৃতিত্ব দেখে উচ্ছ্বসিত এমন একজন, ভারতের মাটিতে বল হাতে যাঁর কৃতিত্ব বেশ মনে রাখার মতো। মন্টি পানেসর (Monty Panesar)। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন স্পিনার ৯ বছর আগে ভারতীয় ব্যাটারদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছিলেন। ২০১২ সালে পানেসর ও গ্রেম সোয়ান মিলে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, দক্ষতা থাকলে ভারতকে ভারতের মাটিতে স্পিন দিয়েই ঘায়েল করা যায়। সেই সফরে ভারতকে ভারতের মাটিতে হারিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল অ্যালেস্টেয়ার কুকের ইংল্যান্ড। সিরিজে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন পানেসর। যার মধ্যে ওয়াংখেড়েতে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। ১০ উইকেটে জিতিয়েছিলেন দলকে।


শনিবার একই মাঠে আজাজের কীর্তি দেখে লন্ডন থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে পানেসর বললেন, 'ইংল্যান্ডে বসে খেলা দেখতে দেখতে প্রার্থনা করছিলাম ও যাতে ১০ উইকেট পায়। বিরাট কৃতিত্ব। ওকে অনেক অভিনন্দন জানাই। আজাজের জন্য আমি ভীষণ খুশি।'


পানেসরকে আকৃষ্ট করছে আজাজের ভারতীয় শিকড়। ৫০ টেস্টে ১৬৭ উইকেট নেওয়া প্রাক্তন বাঁহাতি স্পিনার বলছিলেন, 'আজাজ পটেলের অনবদ্য নজির। ওর কীর্তিকে আরও অসাধারণ করে তুলেছে এই ব্যাপারটা যে, ওর জন্ম মুম্বইয়ে এবং ৮ বছর বয়সে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি দেয়। সেখানেই ওর ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু। ওর কাছে তাই এই সফর বাড়ি ফেরার মতো। নিজের জন্মের শহরে এই কীর্তি গড়তে পেরে ও নিশ্চয়ই খুব গর্বিত। গোটা ভারতেরই গর্ব করা উচিত। বলা উচিত, আরে, এ তো মুম্বইয়ের ছেলে। দারুণ গর্ব করার মতো মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। মুম্বই ও ভারত তো বটেই, সারা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য দুর্ধর্ষ একটা মুহূর্ত।'


পানেসর নিজে ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার। আজাজও তাঁর মতো বাঁহাতি স্পিনার। কিউয়ি স্পিনারের কোন বিশেষত্ব নজর কাড়ল? পানেসর বলছেন, 'ওর মন্থর গতিতে করা বাঁহাতি স্পিনের আমি ভক্ত হয়ে গিয়েছি। এমন একটা গতিতে বল করছে যাতে ব্যাটসম্যান শট খেলতে বাধ্য হচ্ছে। খুব একটা জোরের ওপর বল করছে না। তাই বল দারুণ ঘুরে চকিতে ব্যাট পেরিয়ে যাচ্ছে, তা নয়। বরং যাকে বলে হাওয়ায় ও পিচে পড়ে ভাঙা, তাই হচ্ছে।' যোগ করলেন, 'বল হাওয়ায় রাখতে ভয় পাচ্ছে না আজাজ। সবচেয়ে বড় কথা, ও জানে কোথায় ফিল্ডার রয়েছে। সেই অনুযায়ী বল করছে। দুরন্ত বোলিং। আমি ওর জন্য ভীষণ খুশি।'


আজাজের কীর্তি দেখে পানেসরের মনে হচ্ছে, টেস্ট ক্রিকেটের পালে নতুন করে হাওয়া লাগল। 'ভারতে এই নজিরটা হওয়ায় আরও ভাল হয়েছে। কারণ বলা হয় ভারতে ঘূর্ণি পিচ হয় এবং এখানে টেস্ট ম্যাচ আকর্ষণ হারাচ্ছে। ফাঁকা মাঠে টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়। কেউ কেউ তো এমনও বলাবলি করে যে, আর ৮-১০ বছরের মধ্যে ভারতে টেস্ট ক্রিকেট বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবু লোকে টেস্ট ক্রিকেট দেখছে। আর এরকম কীর্তি টেস্ট ক্রিকেটে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করছে,' বলছিলেন পানেসর। যোগ করলেন, 'বিশ্বাস করুন, টেস্ট ক্রিকেট রমরম করে চলবে। কারণ টেস্ট ক্রিকেট বিলুপ্ত হয়ে গেলে ক্রিকেটই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। টেস্ট ক্রিকেটের দারুণ বিজ্ঞাপন। আশা করছি এই ধরনের পারফরম্যান্স টেস্ট ক্রিকেটেও মাঠে আরও দর্শক আনবে।'