সিডনি: তিনি হয়তো অস্ট্রেলিয়ার (Australia) ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার নন। কিন্তু তাঁর মতো বর্ণময় চরিত্র খুব কমই দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস (Andrew Symonds)। গাড়ি দুর্ঘটনায় মাত্র ৪৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন। রেখে গেলেন অসংখ্য রঙিন স্মৃতি। যেখানে সাফল্যের পাশাপাশি জড়িয়ে রয়েছে বিতর্কও।


ছক্কার বিশ্বরেকর্ড


গ্লস্টারশায়ারের হয়ে তখন কাউন্টি খেলছেন অ্যান্ডুর সাইমন্ডস। সদ্য কুড়িতে পা দিয়েছেন। গ্ল্যামারগনের বিরুদ্ধে ২৫৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেললেন। সেই ইনিংসে ১৬টি ছক্কা মেরেছিলেন। যা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ। ভেঙে দিয়েছিলেন জন রিডের রেকর্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে মেরেছিলেন ৪ ছক্কা। সব মিলিয়ে ২০ ছক্কা মেরে নজির গড়েছিলেন। পরে নির্লিপ্তভাবে সাইমন্ডস জানিয়েছিলেন, রেকর্ডের কথা ভাবেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল দলকে সাহায্য করা।


ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া দড়ি টানাটানি


সাইমন্ডসের জন্ম ইংল্যান্ডে। বার্মিংহামে। ৯ জুন, ১৯৭৫ সালে। তাঁকে জাতীয় দলে খেলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল ইংল্যান্ড ও ওয়েলশ ক্রিকেট বোর্ড। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দড়ি টানাটানিও হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার হয়েই খেলার সিদ্ধান্ত নেন সাইমন্ডস।


খালি পায়ে চুক্তি


ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (CEO) তখন ম্যালকম স্পিড। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করা হবে সাইমন্ডসকে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের সদর দফতরে সঠিক সময়ে হাজির হলেন স্পিড। সাইমন্ডসও এলেন। তবে তাঁকে দেখে চমকে গিয়েছিলেন অজি ক্রিকেট কর্তা। বার্ষিক চুক্তির জন্য সাইমন্ডস গিয়েছিলেন খালি পায়ে। মাথায় আবার কাউবয় হ্যাট!


এক ইনিংসে বদল


২০০৩ বিশ্বকাপ। ওয়ান ডে ক্রিকেটে তখনও পর্যন্ত মাত্র ২৩ গড়ে ৭৬২ রান সাইমন্ডসের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১২৫ বলে করলেন ১৪৩ রান। ওই একটা ইনিংসেই বদলে গেল সাইমন্ডসের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার। তারপর থেকে তাঁর ব্যাটিং গড় দাঁড়াল ৪৩। সাইমন্ডস নিজে বলেছিলেন, 'ওই ইনিংসের আগে পর্যন্ত ব্যাট করতে নামার সময় সামনে কোনও লক্ষ্য থাকত না।' তবে ওই সেঞ্চুরি ঘুরিয়ে দিয়েছিল সাইমন্ডসের কেরিয়ার।


মদের জন্য স্বীকৃতি হাতছাড়া


সাল ২০০৬। দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন সাইমন্ডস। ঠিক হল, ওয়ান ডে ক্রিকেটে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা ক্রিকেটারের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। সাইমন্ডস পাবেন অ্যালান বর্ডার পদক। কিন্তু ২০০৫ সালে বাংলাদেশের কাছে লজ্জার হারের পর মদ্যপান করে প্রকাশ্যে এসেছিলেন সিমো (অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মহলে এই নামেই পরিচিত ছিলেন)। যে কারণে পুরস্কার প্রাপকদের তালিকা থেকে তাঁর নাম ছেঁটে ফেলা হয়।


মাঙ্কিগেট


২০০৭-০৮। স্বপ্নের ফর্মে সাইমন্ডস। শ্রীলঙ্কা, ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৯ টেস্টে ৭৭৭ রান। সিডনিতে অপরাজিত ১৬২ রান। তবে ছিল বিতর্কও। সিডনিতেই হরভজন সিংহের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়লেন। কৃষ্ণাঙ্গ সাইমন্ডস অভিযোগ করলেন যে, হরভজন তাঁকে 'মাঙ্কি' বলেছেন। বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেন ভাজ্জি। তাঁর পাশে দাঁড়ান সচিন তেন্ডুলকরও। ভাজ্জির সঙ্গে তারপর থেকেই রেষারেষি চরমে পৌঁছয় সিমোর। পরে অবশ্য দুজনে মিটমাট করে নেন।


টিমমিটিং বাদ দিয়ে ছিপ হাতে


সাইমন্ডস মানেই যেন বিতর্ক। ২০০৮। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ খেলবে অস্ট্রেলিয়া। তার আগে গুরুত্বপূর্ণ টিম মিটিং। কিন্তু সাইমন্ডস কই? জানা গেল, মাছ ধরতে গিয়েছেন সিমো। যা তাঁর ভীষণ পছন্দের নেশা। তাঁর অপেশাদারিত্বে ক্ষুব্ধ হয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। রাখা হয়নি ভারত সফরের দলেও। দেশে ফিরেও বিতর্ক। পাবে মারামারি করার অভিযোগ ওঠে সাইমন্ডসের বিরুদ্ধে। একটি সাক্ষাৎকারে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম সম্পর্কে এমন কথা বলেন যে, তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দলে রাখা হয়নি। মদ্যপান করায় ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে তাঁকে রাখা হয়নি। মাঝে হাঁটুর অস্ত্রোপচার। আইপিএলে খেলছিলেন সিমো। অবশেষে ২০১২ সালে তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানান।