কলকাতা: ওস্তাদের মার হয়তো সত্যি সত্যিই শেষ রাতে। তা নাহলে ময়ঙ্ক অগ্রবাল, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও দেবদত্ত পড়িক্কল সমৃদ্ধ কর্নাটককে গ্রুপে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর সেই কর্নাটকের কাছেই হেরে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টির (Syed Mushtaq Ali T20) শেষ আট থেকে বাংলার ছিটকে যাওয়ার আর কী কারণ থাকতে পারে!


গ্রুপে বাংলার বিরুদ্ধে খেললেও বৃহস্পতিবার, কোয়ার্টার ফাইনালে কর্নাটকের তারকা ত্রয়ী খেলতে পারেননি। তিনজনই জাতীয় শিবিরে। অথচ তাঁদের ছাড়াই দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে বাংলাকে সুপার ওভারে হারিয়ে দিল কর্নাটক। শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর চাপ সামলে। সেই সঙ্গে মণীশ পাণ্ডেরা দেখিয়ে দিলেন, কেন ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁদের সমীহ করেন সকলে। কেনই বা রাজ্য থেকে একের পর এক ক্রিকেটার জাতীয় দলে সুযোগ করে নেয়। আর বাংলাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ভারতীয় এ দলে দু-একজনকে সুযোগ পেতে দেখেই। কখনও দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে প্রোটিয়াদের বি টিমের সঙ্গে ভারতীয় দলের রিজার্ভ বেঞ্চে থাকতে পারলেই তৃপ্তির ঢেকুর তোলে।


বৃহস্পতিবার কোয়ার্টার ফাইনালে টস জিতে প্রথম ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা। প্রথমে ব্যাট করে কর্নাটক তুলেছিল ১৬০/৫। ২৯ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন করুণ নায়ার। ২৯ রান করেন অধিনায়ক মণীশ পাণ্ডে। বাংলার বোলারদের মধ্যে একটি করে উইকেট আকাশদীপ, মুকেশ কুমার, সায়ন ঘোষ, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় ও শাহবাজ আমেদের। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬০ রানেই আটকে যায় বাংলা। ৪০ বলে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়। শেষ দিকে ১৮ বলে ৩৬ রান করে ম্যাচ টাই করেন ঋত্বিক রায়চৌধুরী।


ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। যেখানে ৪ বলে ৫ রান তুলতেই সর্বোচ্চ ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলা। মাত্র ২ বলে যে রান তুলে ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় কর্নাটক।


ম্যাচের পরই বাংলার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। অভিষেক দাসকে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ইনিংস ওপেন করানো হয়। সেই অভিষেক দাস, যিনি ক্লাব ক্রিকেটে তথাকথিত বাঘ। কিন্তু বাংলা দলে যতবার সুযোগ পেয়েছেন, মনে রাখার মতো কিছুই করেননি। বরং এত জঘন্য পারফর্ম করেছেন যে, তাঁকে ভুলে যাওয়াও অসম্ভব। চলতি টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁকে প্রথম একাদশ থেকে বাদ দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। দলও জিতছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি ফিরলেন। স্কোরারদের বিন্দুমাত্র বিরক্ত না করে শূন্য করে ফিরলেন। দলকে প্রবল বিপাকে ফেলে।


গ্রুপ পর্বের সময় বাংলা দলেই রাখা হয়নি শ্রীবৎস গোস্বামীকে। বলা হয়েছিল, সামনের দিকে তাকাতে চায় বাংলা। সেই দর্শন বাক্সবন্দি হয়েছে গ্রুপ পর্বেই। নক আউট পর্বে শ্রীবৎস দলে ফিরলেন। হয়তো রেকর্ডও গড়ে ফেললেন। কারণ, নির্ধারিত ওভারে ও পরে সুপার ওভারে, দুবারই ব্যাট করতে নেমে রান আউট হলেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক ম্যাচে দুবার রান আউট হওয়ার লজ্জা আর কাউকে হজম করতে হয়েছিল কি না, তা জানতে পরিসংখ্যান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে বৈকি!


সবচেয়ে হতাশাজনক সুপার ওভারে বাংলার ব্যাটিং অর্ডার। যে ঋত্বিক রায়চৌধুরী ১৮ বলে ৩৬ অপরাজিত করে ম্যাচে ফেরালেন বাংলাকে, সুপার ওভারে স্ট্রাইকই পেলেন না। ওপেন করানো হল কাইফ আমেদকে দিয়ে। কর্নাটক সেখানে মণীশ পাণ্ডে ও করুণ নায়ারকে দিয়ে ওপেন করিয়ে ম্যাচ বার করে নিল।


শেষ আটেই বাংলার সব স্বপ্নের সলিলসমাধি ঘটে গেল। সেই সঙ্গে ফের একবার বঙ্গ ক্রিকেটের কঙ্কালসার চেহারা প্রকট হয়ে পড়ল। যেখানে সারাবছর শুধু প্র্যাক্টিস আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিমমিটিং। আর মরসুম শেষে হাতে পড়ে থাকে শুধু পেন্সিল।