কলকাতা: রঞ্জি ট্রফির (Ranji Trophy) ফাইনালে একপেশেভাবে হেরেছে বাংলা। সৌরাষ্ট্রের কাছে নিজেদের ঘরের মাঠে ৯ উইকেটে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে মনোজ তিওয়ারিদের। লজ্জার যে পরাজয়ের পর বঙ্গ ক্রিকেটে শ্মশানের নিস্তব্ধতা থাকার কথা। এমনকী, কোচ ও অধিনায়কের সঙ্গে পারফরম্যান্স কাটাছেঁড়া শুরু করে দেওয়ার কথা বাংলার ক্রিকেট প্রশাসকদের।
কোথায় কী! সিএবি কর্তারা নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্যে ব্যস্ত। এমনই সেই দ্বন্দ্বের আঁচ যে, ময়দান রীতিমতো সরগরম। ঝামেলা মেটাতে আসরে নামতে হয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Sourav Ganguly)।
লড়াইয়ের একদিকে স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। অন্যদিকে অভিষেক ডালমিয়া। স্নেহাশিস বর্তমান সিএবি প্রেসিডেন্ট। অভিষেক প্রাক্তন। অভিষেকের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন স্নেহাশিস। দুজনের আরও একটি পরিচয় হল, স্নেহাশিস জাতীয় দলের কিংবদন্তি অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাদা। আর অভিষেক প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেট প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়ার পুত্র।
ঘটনার সূত্রপাত রঞ্জি চ্যাম্পিয়নদের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়া নিয়ে। রবিবার বাংলাকে ৯ উইকেটে হারিয়ে দিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হয় সৌরাষ্ট্র। বিজয়ী অধিনায়ক জয়দেব উনাদকটের হাতে ট্রফি কে তুলে দেবেন, তা নিয়েই বিতর্ক। প্রথমে ঠিক ছিল বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দেবেন বোর্ডের যুগ্ম-সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া। কিন্তু খেলা নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, সাইকিয়া কলকাতায় পৌঁছতে পারবেন না। তখন তিনি বোর্ডের সচিব জয় শাহকে ফোন করেন। জয় জানতে চান, সৌরভ শহরে আছেন কি না। সেক্ষেত্রে সৌরভের হাত দিয়ে ট্রফি তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু সৌরভ না থাকায় বোর্ডের প্রতিনিধি হিসাবে ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা বলা হয় আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য অভিষেককে।
অন্য দিকে, একটি মহল থেকে স্নেহাশিসকে বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার জন্য তৈরি থাকার কথা বলা হয়। ম্যাচ শেষ হতেই স্নেহাশিস মাঠে যান। কিন্তু অভিষেক ট্রফি তুলে দেওয়ায় আর তিনি থাকতে চাননি। পরে যদিও রানার্স দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন স্নেহাশিস। কিন্তু সিএবি সূত্রে খবর, ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, এভাবে অপমানিত হতে হবে ভাবেননি তিনি।
এরপরই সিএবি থেকে অভিষেক ডালমিয়ার নামাঙ্কিত বোর্ড খুলে ফেলা হয়। সিএবি-তে একটি ঘরের বাইরে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের নামাঙ্কিত ফলক রয়েছে। সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় অভিষেকের নামাঙ্কিত ফলকটি। এমনকী, ঘর থেকে অভিষেকের আসবাবও সরিয়ে দেওয়া হয়। যা জানাজানি হতেই শুরু হয়ে যায় ধুন্ধুমার। অভিষেক এতটাই ক্ষিপ্ত হন যে, তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দেন, আর কোনওদিন সিএবি যাবেন না।
পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সিএবি কর্তারা সৌরভের দ্বারস্থ হন। সূত্রের খবর, অভিষেককে বোঝাতে উদ্যত হন সৌরভ। বেহালায় সৌরভের বাড়িতে অভিষেকের সঙ্গে প্রাক্তন অধিনায়কের দীর্ঘ বৈঠকও হয়। অভিষেক যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি সৌরভও। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, সৌরভের সঙ্গে কথা বলে অনেকটা নরম হয়েছেন অভিষেক। সিএবি-তে একটি ঘরে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের ঘর বলে নতুন ফলকও বসানো হয়েছে।
গোটা ঘটনায় প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা বিস্মিত। ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা দলের এক প্রাক্তন অধিনায়ক বলছিলেন, 'মনে হচ্ছে সার্কাস দেখছি। দল কীভাবে আরও ভাল খেলবে, বড় ম্যাচে সফল হবে, সেসব নিয়ে না ভেবে ছেলেমানুষি হচ্ছে।' বাংলার শেষ রঞ্জি জয়ী দলের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলছিলেন, 'নিজেদের মাঠে সৌরাষ্ট্র হারিয়ে দিয়ে চলে গেল, এরকম সময় তো বিমর্ষ থাকার কথা। আর সেখানে কি না নিজেদের মধ্যে এই পর্যায়ের মনোমালিন্য! যা সামলাতে কি না সৌরভকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে! বাংলা ক্রিকেটের জন্য পুরো ঘটনাটাই লজ্জাজনক।'
সম্প্রতি সাংবাদিকদের জন্য ক্লাব হাউসের একতলায় একটি স্থান নির্দিষ্ট করে রেখেছে সিএবি। দোতলায় উঠতে গেলে বিশেষ অনুমতি নিতে হয় সাংবাদিকদের। এক নামী প্রাক্তন ক্রিকেটার বলছেন, 'নিজেদের হাস্যকর জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে সিএবি। সাংবাদিকরা খেলোয়াড়দের নানাভাবে উৎসাহিত করেন। সেখানে সংবাদমাধ্যমকে ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছে। আর কর্তারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছেন। বঙ্গ ক্রিকেট যে কোন পথে এগোচ্ছে, তা ঈশ্বর জানেন।'