রিও দে জেনেইরো: অবশেষে লিওনেল মেসির শাপমোচন। সাত বছর আগে যে মাঠ থেকে অল্পের জন্য বিশ্বচ্য়াম্পিয়ন হতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে বেরতে হয়েছিল, বিখ্যাত সেই মারাকানাতেই জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম বড় ট্রফি জিতলেন তিনি। ব্রাজ়িলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হল আর্জেন্তিনা। প্রথমার্ধে লা আলবিসেলেস্তেদের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন অ্য়াঙ্খেল দি মারিয়া। টুর্নামেন্টে ফাইনালেই একমাত্র যিনি শুরু থেকে খেললেন।


২৮ বছরের ট্রফি খরা কাটল আর্জেন্তিনার। ১৯৯৩ সালে শেষবার কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লা আলবিসেলেস্তেরা। সেটাই ছিল দিয়েগো মারাদোনার দেশের বড় মঞ্চে শেষ আন্তর্জাতিক ট্রফি। মাঝে শুধু লিওনেল মেসিরা অলিম্পিক্সে সোনা জিতেছিলেন। যদিও অলিম্পিক্সের ফুটবলকে কখনও কুলীন তকমা দেওয়া হয়নি। কারণ, অলিম্পিক্সে বেশিরভাগ দেশই অনভিজ্ঞ এবং উঠতি ফুটবলারদের পাঠায়। মাঝের ২৮ বছরে সাতটি ফাইনাল খেলেছে আর্জেন্তিনা। কিন্তু বারবার রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। অবশেষে মারাকানায় মোক্ষলাভ। নেমার দ্য় সিলভা স্য়ান্টোস জুনিয়রের ব্রাজ়িলকে ১-০ হারিয়ে ট্রফি জিতলেন মেসিরা।


গোটা টুর্নামেন্টে অবিশ্বাস্য ফর্মে ছিলেন মেসি। নিজে ৪ গোল করেছেন। ৫টি গোল করিয়েছেন। ফাইনালের আগে পর্যন্ত আর্জেন্তিনার করা মোট ১১টি গোলের বাকি দুটোর ক্ষেত্রে যাঁরা ফাইনাল পাস বাড়িয়েছিলেন, তাঁদের বলের জোগান দিয়েছিলেন মেসিই। ফাইনালের পর একাধিক স্বীকৃতি পেলেন আর্জেন্তিনার অধিনায়ক। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার, সেরা ফুটবলার, এবং সর্বোপরি সুদৃশ্য কোপা আমেরিকা ট্রফি। যেটা মোট ১৫ বার পেল আর্জেন্তিনা।


কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনার প্রয়াণের পর কোপা আমেরিকার মঞ্চে তাঁকে লেজ়ার শোয়ের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা কনমেবল। কোপা আমেরিকা জিতে হয়তো মারাদোনাকে আরও বড় শ্রদ্ধার্ঘ্য জানালেন মেসিরা। কারণ, এই একটি ট্রফি মারাদোনার কীর্তির মুকুটেও নেই।



রবিবার ভারতীয় সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় শুরু হওয়া ম্যাচে শুরুর দিকে ছিল আর্জেন্তিনার দাপট। আর্জেন্তিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি ফাইনালে শুরু থেকে খেলিয়েছিলেন দি'মারিয়াকে। যিনি টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলিতে খেলছিলেন পরিবর্ত ফুটবলার হিসাবে। আর স্কালোনির এই চালেই বাজিমাত। দি'মারিয়া থাকায় শুরু থেকেই আক্রমণের ঝাঁঝ ছিল আর্জেন্তিনার।



ম্যাচের ২১ মিনিটেই গোল করেন দি'মারিয়া। আর্জেন্তিনার অর্ধে বল ধরে লম্বা থ্রু পাস বাড়িয়েছিলেন রদ্রিগো দে পল। যিনি রবিবার আর্জেন্তিনার প্রায় সব আক্রমণে অবদান রাখছিলেন। সেই বল দুর্দান্তভাবে রিসিভ করে বাঁ পায়ের টোকায় ব্রাজ়িল গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে জালে জড়িয়ে দেন দি'মারিয়া। গোটা ম্যাচে বারবার চাপ তৈরি করেও যে গোল আর পরিশোধ করতে পারেনি ব্রাজ়িল।


ম্য়াচের শেষের সেরা ছবি হয়ে রইল কান্নায় ভেঙে পড়া নেমারকে বন্ধু মেসির বুকে জড়িয়ে নেওয়ার দৃশ্য।