কলকাতা: সিএবি-র (CAB) অন্যতম পদাধিকারী তিনি। কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক দায়িত্ব রয়েছে তাঁর কাঁধে। যদিও কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে প্রবীর চক্রবর্তীকে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ। আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করছেন তিনি। শুরু হয়েছে আইনি লড়াই।
তবে আদালতে এবার বড় ধাক্কা খেলেন সিএবি কোষাধ্যক্ষ। প্রবীর এবং তাঁর মালিকানাধীন সংস্থা কোয়ালিটি কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিলেন আলিপুর আদালতের বিচারপতি (চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) মৌমিতা রায়। ৭ অগাস্ট মামলার পরের দিন ধার্য করা হয়েছে। সেদিন লেক থানার অফিসার ইন চার্জকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মৌমিতা রায় (যে রায়ের কপি রয়েছে এবিপি লাইভ বাংলার কাছে)।
সেই রায়ে বলা হয়েছে, আদালতের আগের নির্দেশ মতো প্রবীর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করে লেক থানার অফিসার ইন চার্জ একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। পুলিশের সেই তদন্ত রিপোর্টে জানানো হয়েছে, উয়াড়ি ক্লাবের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অভিযুক্ত প্রবীর চক্রবর্তীর সংস্থা কোয়ালিটি কেমিক্যালসে ৬ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়েছে এবং উয়াড়ি ক্লাবের সদস্যদের অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। লেক থানাকে প্রবীর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত।
আর এর মাঝেই সোমবার, ৭ জুলাই ইডেন গার্ডেন্সে প্রবীর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের শুনানি করলেন সিএবি-র এথিক্স অফিসার, প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই শুনানিও সিএবি কোষাধ্যক্ষের জন্য খুব একটা স্বস্তি বয়ে এনেছে বলে খবর নেই। বরং, অস্বস্তি এখনও কাটেনি।
একাধিক অভিযোগ উঠেছে সিএবি কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। যার মধ্যে দুটি অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় চলছে ময়দানে। এক, প্রবীর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ওঠা স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ। লোঢা কমিটির সুপারিশে তৈরি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে শুরু করে প্রত্যেক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার সংশোধিত গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি এক পদের কথা। যদিও প্রবীর একইসঙ্গে উয়াড়ি ক্লাবের সচিব ও সিএবি কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। যা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন উয়াড়ি ক্লাবেরই একাধিক সদস্য। এথিক্স অফিসারের আগের শুনানির দিন অবশ্য আইনজীবী মারফত প্রবীর জানান যে, তিনি উয়াড়ি ক্লাবের সচিব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। পদত্যাগপত্রের কপিও তিনি জমা দেন।
দুই, প্রবীরের বিরুদ্ধে ওঠা টাকা আত্মসাৎ করার গুরুতর অভিযোগ। উয়াড়ি ক্লাবের একাধিক সদস্য কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে অভিযোগ করেছিলেন, সিএবি থেকে ক্লাবের জন্য বরাদ্দ অনুদান ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন প্রবীর। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই লেক থানাকে মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত।
জানা গিয়েছে, সোমবার সিএবি-র এথিক্স অফিসারের শুনানিতে মোটামুটি দুটি বিষয়ের ওপর সওয়াল-জবাব চলে। প্রবীর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ 'ট্র্যাক্টেবল' নাকি 'ইনট্র্যাক্টেবল'? প্রথম ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠলে এথিক্স অফিসার অভিযুক্তকে যে কোনও একটি পদ বেছে নিতে বলতে পারেন। অভিযুক্ত একটি পদ থেকে ইস্তফা দিলেই বিতর্কের ইতি ঘটে। প্রবীর চক্রবর্তীও যা করেছেন।
কিন্তু ঘটনাটি 'ইনট্র্যাক্টেবল' কি না, সেটা খতিয়ে দেখছেন সিএবি-র এথিক্স অফিসার। কী এর অর্থ? নিয়ম বলছে, কেউ একসঙ্গে দুটি পদে থাকাকালীন যদি কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ওঠে, তা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি একটি পদ থেকে ইস্তফা দিলেই দায়মুক্ত হতে পারেন না। খতিয়ে দেখা হয়, একসঙ্গে দুটি পদে থাকাকালীন তিনি কোনও অনৈতিক বা অবৈধ কাজ করেছেন কি না। শোনা গেল, প্রবীর চক্রবর্তী আইনজীবী মারফত সোমবার কিছু কাগজপত্র জমা দেন। যদিও তা খুব একটা সন্তোষজনক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেই খবর।
শুক্রবার, ১১ জুলাই ফের শুনানি ডেকেছেন সিএবি-র এথিক্স অফিসার। আর ১৯ জুলাই রয়েছে ওম্বাডসম্যানের শুনানি।