সন্দীপ সরকার, কল্যাণী: সতীর্থরা তাঁকে ডাকেন এ কে ফর্টি সেভেন বলে। তাঁর নামের আদ্যাক্ষর আর জার্সি নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে।
অংশুল কম্বোজ (Anshul Kamboj)। এ কে। জার্সি নম্বর ৪৭। ডানহাতি মিডিয়াম পেসার কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মাঠে বাংলা শিবিরে (Ranji Trophy) থরহরিকম্প ধরালেন। প্রথম ইনিংসে বাংলার অধিনায়ক অনুষ্টুপ মজুমদারের স্টাম্প উড়িয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও বিধ্বংসী মেজাজে। ৩৫ রানে নিলেন ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে ম্যাচে ৫ উইকেট। বাংলাকে ২৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিল হরিয়ানা। আর সেই জয়ে অন্যতম বড় ভূমিকা নিলেন অংশুল।
বাংলার ব্যাটিংয়ের সময় হরিয়ানা দলে সতীর্থরা বারবার চিৎকার করে বলছিলেন, 'এ কে ফর্টি সেভেন, ওয়েল বোল্ড।' কিংবা, 'ফায়ার করনা শুরু কর দে এ কে ফর্টি সেভেন।' এই অদ্ভূত নামকরণের কারণ কী?
বাংলাকে হারিয়ে উঠে বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে অংশুল বলছিলেন, 'আসলে আমার নাম আর জার্সি নম্বর মিলিয়ে সতীর্থরা মজা করে ওইভাবে ডাকে। বেশিরভাগ ক্রিকেটার জন্মের তারিখ হিসাবে জার্সি নম্বর দেয়। আমি ভেবে দেখেছিলাম, ক্রিকেটারদের জন্মদিন তো গুগল করলেই জানা যায়। তাই একটু অন্যভাবে আমার এ কে নামের সঙ্গে মিলিয়ে জার্সি নম্বর ৪৭ বেছেছিলাম।'
তবে বল হাতে তিনি যে সত্যিই যে কোনও ব্যাটিংকে ঝাঁঝরা করে দিতে পারেন, অংশুলের গোলাগুলি সামলে উঠে ভালই টের পেয়েছেন বঙ্গ ব্যাটাররা।
গত আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ৩টি ম্যাচে খেলেছিলেন। আগামী আইপিএলে খেলবেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসে। নিলাম থেকে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকায় তাঁকে কিনেছে সিএসকে। আইপিএল অভিজ্ঞতা বোলার হিসাবে উন্নতি করতে কতটা সাহায্য করেছে? অংশুল বললেন, 'আগের চেয়ে ধৈর্য্য আর মনঃসংযোগ অনেক বেড়েছে। সব ম্যাচ থেকে কিছু না কিছু শিখতে থাকি।'
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে সতীর্থ হিসাবে পেয়েছিলেন যশপ্রীত বুমরাকে। অংশুল বলছেন, 'বড় ক্রিকেটারদের কাছে অনেক কিছু শেখা যায়। কীভাবে বড় ম্যাচের আগে প্রস্তুতি নিতে হয়, চাপের পরিস্থিতিতে কীভাবে বোলিং করতে হয়, ট্রেনিং কীভাবে করতে হয়, বুমরাকে দেখে শিখেছি।'
কেরলের বিরুদ্ধে চলতি রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। সেই ম্যাচ জীবন কতটা বদলে দিয়েছে? অংশুলের কথায়, '১০ উইকেট ক্রিকেটারেরা রোজ রোজ পায় না। বিরল ঘটনা।' আইপিএলে বিরাট দাম পাওয়ার চেয়েও ইনিংসে দশ উইকেট পাওয়াই তাঁর কাছে বেশি স্পেশ্যাল। মুখিয়ে রয়েছেন ধোনির সঙ্গে আইপিএল খেলার জন্যই। অংশুল বলছেন, 'মাহি ভাইয়ের সঙ্গে খেলার জন্য তর সইছে না। অনেক কিছু শিখতে পারব।'
বাংলার বোলারদের চেয়ে এমন কী আলাদা করলেন যে, ধসে গেল প্রতিপক্ষ? অংশুল বলছেন, 'বাংলার বোলাররা এক জায়গায় বল করেনি। একটু এলোমেলো করেছে। উইকেট নেওয়ার জন্য বাড়তি চেষ্টা করেছে। আমরা শুধু এক জায়গায় বল করে গিয়েছি। তাতেই সাফল্য।'
কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রার ভক্ত। ম্য়াকগ্রা যেভাবে এক জায়গায় সারাদিন ধরে বল করে যেতে পারতেন, সেভাবেই নিজে বোলিং করতে চান। ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ ও এ দলে খেলে ফেলেছেন। এবার সিনিয়র দলের জার্সিতেও এ কে ফর্টি সেভেন হয়ে উঠতে চান কপিল দেব নিখাঞ্জের রাজ্য দলের হয়ে খেলা ২৪ বছরের তরুণ।
আরও পড়ুন: হুইলচেয়ারে চেপে মাঠে, সৌরভ ভক্ত বিক্রমের স্বপ্ন লর্ডসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখার