কলকাতা: একটা সময় মেট্রো রেলে (Kolkata Metro) চাকরি করার পাশাপাশি সিএবি পরিচালিত বিভিন্ন স্থানীয় টুর্নামেন্টে চুটিয়ে খেলেছেন বাংলার ক্রিকেটারেরা। লক্ষ্মীরতন শুক্ল, দীপ দাশগুপ্ত, সৌরাশিস লাহিড়ী, সুদীপ চট্টোপাধ্যায় - তালিকাটা নেহাত ছোট নয়। যাঁদের মধ্যে অনেকে বাংলা দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। 

Continues below advertisement

অথচ অভিযোগ, সেই মেট্রো রেলের ফতোয়ায় সিএবি আয়োজিত স্থানীয় ক্রিকেটে খেলা নিয়েই অন্ধকারে এক ঝাঁক ক্রিকেটার! যাঁদের নাকি বলে দেওয়া হয়েছে, সর্বভারতীয় রেলওয়েজ় টুর্নামেন্টের প্রস্তুতির জন্য রোজ মেট্রো রেলের প্র্যাক্টিসে যোগ দিতে হবে। সরাসরি উল্লেখ না করলেও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, সেই সময় সিএবি লিগেও অংশ নিতে পারবেন না কেউ। এবং সেই নির্দেশিকা কার্যত গোটা ডিসেম্বর মাসের জন্য! ৪ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর - এই পুরো সময়কালে ক্রিকেটারদের অন্য কোনওরকম ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বা অন্য কোনও খেলায় অংশগ্রহণের জন্য ছুটি নেওয়া চলবে না বলেও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এমনকী, দুই কোচ - সফি আমেদ ও অভিজিৎ শিকদারকেও সেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মেট্রো রেলওয়ে স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (MRSA)-এর অনুমতি ব্যতীত কাউকে ছুটি দেওয়া চলবে না।

এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞপ্তিতে রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে বলা হয়েছে, প্র্যাক্টিসে কারা যোগ দিচ্ছেন, আর কারা গরহাজির থাকছেন, তার তালিকা তৈরি করা হবে। এই বিজ্ঞপ্তি মেট্রো রেলের শীর্ষ কর্তাদের অনুমোদন নিয়ে জারি করা বলেও সার্কুলারের শেষ লাইনে উল্লেখ করা হয়েছে। যার প্রতিলিপি রয়েছে এবিপি লাইভ বাংলার হাতে।

Continues below advertisement

অভিযোগ, ৩ ডিসেম্বর জারি হওয়া এই নির্দেশিকায় সংকটে পড়েছেন ১৮ জন ক্রিকেটার ও দুই কোচ। যাঁরা প্রত্যেকেই মেট্রো রেলে চাকুরিরত। পাশাপাশি স্থানীয় ক্রিকেটেও বিভিন্ন দলে খেলেন বা কোচিং করান। অনেকেই খেলেন বড় দলে। ময়দানের তিন প্রধানে খেলা ক্রিকেটারদের নামও রয়েছে সেই তালিকায়। মোহনবাগানে খেলা বিবেক সিংহ, অরিন্দম ঘোষ, শাকির হাবিব গাঁধী থেকে শুরু করে ইস্টবেঙ্গলের আকাশ পাণ্ডে, মহমেডান স্পোর্টিংয়ের নীলকণ্ঠ দাসদের মতো ক্রিকেটারদের নাম রয়েছে এই নির্দেশিকায়। ১৮ জন ক্রিকেটারের বাকিরা হলেন প্রীতম চক্রবর্তী, সৌম্য পাকড়ে, ঋতম কুণ্ডু, অভিজিৎ সিংহ, অমিত কুইল্যা, তৌফিকউদ্দিন মণ্ডল, তুহিন বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ কুমার সিংহ, অঙ্কিত কুমার, আরিফ আনসারি, অতনু ঘোষ, কৌশিক মাইতি ও দেবপ্রতিম হালদার। সৌরভ, শাকিররা তো এই মরশুমেই বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলেছেন।

কেন এরকম সিদ্ধান্ত? সিএবি-র স্থানীয় ক্রিকেটকে অসম্ভব গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলার নির্বাচকেরাও নজর রাখেন স্থানীয় ক্রিকেটে কারা বড় রান করছেন বা উইকেট নিচ্ছেন সে দিকে। স্থানীয় ক্রিকেটে ভাল পারফর্ম করলে বাংলা দলের দরজা খুলে যেতে পারে। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে যায়। যে কারণে স্থানীয় ক্রিকেটে নিজেদের সেরাটা দিতে মুখিয়ে থাকেন ক্রিকেটারেরাও। মহম্মদ শামি থেকে শুরু করে আকাশ দীপ, মুকেশ কুমার - ক্লাব ক্রিকেটে ভাল খেলেই বাংলা দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। তারপর ভারতীয় দলের দরজাও খুলে ফেলেন তাঁরা। ক্লাব ক্রিকেট সাফল্যের পর বাংলা ও পরে জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, কলকাতা ময়দানে এরকম নজির আরও রয়েছে। সেখানে কেন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উত্থানের প্রথম সিঁড়িটিই নড়বড়ে করে দেওয়া হচ্ছে?

বিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন মেট্রো রেলের স্পোর্টস অফিসার অপর্ণা ঘোষ। যিনি কলকাতা মেট্রো রেলের ডেপুটি সেক্রেটারিও। অভিযোগ, ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় কোথাও সমস্যা হচ্ছে।

কেন এত কড়া নির্দেশিকা? কারণ জানতে, প্রতিক্রিয়া নিতে অপর্ণার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের জবাব দেননি।

গোটা বিষয়টি এবিপি লাইভ বাংলার কাছেই শুনলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও তিনি জানিয়েছেন, এখানে সিএবি-র কিছু করার নেই। সৌরভ জানিয়েছেন, এটা ক্রিকেটার ও তাঁদের অফিসের বিষয়।

ক্রিকেটারেরা আপাতত আতান্তরে। শ্যাম রাখবেন না কুল, বুঝে উঠতে পারছেন না। আর ময়দান প্রশ্ন তুলছে, ক্রিকেটারদের ক্লাব ক্রিকেট খেলা বন্ধ রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় কি বার করা যেত না?