কলকাতা: বিতর্কিত আম্পায়ারিং। ক্রিকেটারদের অশান্তিতে ম্যাচ বন্ধ থাকা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে ম্যাচ শুরু হওয়া। তারপর এক ঘণ্টায় মোটে তিন ওভার খেলা হওয়া। দুই দলের ক্রিকেটারদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাওয়া।
গত কয়েকদিন ধরে ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) স্থানীয় ক্রিকেটের প্রথম ডিভিশন গ্রুপ এ-র ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল বনাম ভবানীপুর ক্লাবের ম্যাচে যা ঘটে চলেছে, তাতে সিএবি-র কেউ কেউ বলছিলেন, শুধু হাতাহাতিটাই বাকি রয়ে গেল!
সেই আক্ষেপও মিটে গেল বৃহস্পতিবার! কারণ, ইডেনে প্রথম ডিভিশন লিগের ফাইনালের পঞ্চম তথা শেষ দিন হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন দুই ক্লাবের কর্মকর্তারা। থামাতে গিয়ে হিমশিম খেলেন সিএবি কর্তারা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রীতিমতো পুলিশ ডাকতে হয়েছে ইডেনে।
পাঁচদিনের ম্যাচের দ্বিতীয় দিন থেকেই অশান্তি চলছে। যা শুরু হয়েছিল একটি আউটের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। ভবানীরপুর ক্লাবের ক্রিকেটার শাকির হাবিব গাঁধীকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার কৃষ্ণেন্দু পাল। ব্যাটার মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। পরে স্কোয়্যার লেগ আম্পায়ার অভিজিৎ ভট্টাচার্যর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যাটারকে নট আউট ঘোষণা করে ডেকে নেন আম্পায়ার। ক্ষোভে ফেটে পড়ে ইস্টবেঙ্গল। সেদিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা খেলা বন্ধ ছিল ইডেনে। যে খবর প্রথম জানায় এবিপি আনন্দ। হইচই পড়ে যায় ময়দানে। দুই শিবিরের সঙ্গে সেদিন কথা বলে মাঠে নামানোর চেষ্টা করেছিলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর অনুরোধ আমল পায়নি। শেষে সৌরভের মধ্যস্থতায় ম্যাচ শুরু হয়েছিল বটে, তবে ক্রিকেটের স্পিরিট মেনে কতটা খেলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তৃতীয় দিন এক ঘণ্টায় ৩ ওভার বল করে সকলকে হতচকিত করে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদ শিবির থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যে, ক্রিকেটকে হত্যা করে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়া ব্যাটারকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এরপর তাঁরা যে মাঠে দল নামিয়েছেন, এ-ই অনেক। শাকির হাবিব গাঁধী শেষ পর্যন্ত ২২০ রান করেন। ভবানীপুর শিবির থেকে পাল্টা বলা হয়, ইস্টবেঙ্গল শিবির খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতাই দেখাচ্ছে না।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচের শেষ দিন বিতর্ক গড়াল হাতাহাতিতে। ঠিক কী হয়েছিল? ভবানীপুর ক্লাবের ৬৪৩/৬ (ডিক্লেয়ার)-এর জবাবে ইস্টবেঙ্গলের স্কোর তখন ২৪৩/৮, বিকেলের দিকে বৃষ্টি নেমে যায়। গোলাপি বলে নৈশালোকের ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়। যদিও ভবানীপুর শিবিরের দাবি, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হতেই ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। চাইলে তখনও ম্যাচ খানিকক্ষণ খেলানো যেত। আর ২ উইকেট তুলে নিতে পারলেই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত ভবানীপুর। ফলে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ায় ভবানীপুরের ক্ষোভ তৈরি হয়।
অভিযোগ, ম্যাচ বন্ধ হতে ইস্টবেঙ্গলের দুই অপরাজিত ব্যাটার ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় ও কণিষ্ক শেঠ মাঠ ছেড়ে বেরনোর সময় শাকিরের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। দ্রুত সেই ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন দুই দলের কর্মকর্তারা। ড্রেসিংরুমের বাইরে দুই শিবিরের হাতাহাতি হয়েছে বলে অভিযোগ। সিএবি-র টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্য়ান নীতীশ রঞ্জন দত্ত (অনু), ট্যুর, ফিক্সচার ও টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান সঞ্জয় দাস, মেডিক্যাল কমিটির প্রধান প্রদীপ দাস (বাপি) দুই শিবিরকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। গোটা ঘটনায় সিএবি-র প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এরকম ঘটনা সিএবি প্রেসিডেন্ট বা সৌরভের কাছে পৌঁছনোরই কথা নয়। তার আগেই মিটিয়ে নেওয়া উচিত। কেন তা করা যাচ্ছে না, অবাক অনেকে।
নৈশালোকের ম্যাচ বৃষ্টি থামলে শুরু করা যাবে কি না, সময় বলবে। তবে স্থানীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ম্যাচে যেভাবে প্রহসন চলছে, বঙ্গ ক্রিকেটের এই কলঙ্ক সহজে কাটলে হয়!