কলকাতা: ব্যাটার আউট হতে নাকি সেলিব্রেট করেছেন আম্পায়ার! এলবিডব্লিউয়ের জোরাল আবেদন নাকচ হয়েছে। বোলার কারণ জানতে চাইলে আম্পায়ার প্রথমে বলেছেন, বল লেগস্টাম্পের বাইরে যেত। পাল্টা প্রশ্নে মুহূর্তে বদলে গিয়েছে আম্পায়ারের যুক্তি। বলেছেন, বল প্রথমে ব্যাটে লেগেছিল, তারপর প্যাডে।
সিএবি (CAB) পরিচালিত স্থানীয় ক্রিকেটে ফের আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেল। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হল প্রথম ডিভিশন লিগের গ্রুপ এ-তে ইস্টবেঙ্গল বনাম কাস্টমস ম্যাচে। মাঠেই তৈরি হল অপ্রীতিকর পরিস্থিতি। বচসায় জড়ালেন দুই দলের ক্রিকেটারেরা। আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কাতর্কি চলল। একসঙ্গে চার ক্রিকেটারকে ধরানো হল আচরণবিধি ভঙ্গের চিঠি। সব মিলিয়ে বারাসাতের মাঠে ধুন্ধুমার বেঁধে গেল কার্যত।
চলতি মরশুমেই প্রথমবার ক্রিকেটারদের জন্য আচরণবিধি চালু করেছে বঙ্গ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা সিএবি। নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর এই প্রথম আচরণবিধি ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত হলেন কোনও ক্রিকেটার। তাও একসঙ্গে চারজনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ জমা পড়ল সিএবিতে। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ইস্টবেঙ্গলের ক্রিকেটার অভিষেক দাসের বিরুদ্ধে সিএবি-র আচরণবিধির লেভেল ওয়ান ভাঙার অভিযোগ জমা পড়েছে। কাস্টমস ক্লাবের তিন ক্রিকেটার - অরিক্ত দাস, অভিষেক তামাঙ্গ ও অনন্ত সাহার বিরুদ্ধে লেভেল টু ভাঙার অভিযোগ জমা পড়েছে বলে খবর।
যদিও গোটা ঘটনায় কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে আম্পায়ারিংকেই। ম্যাচে দুই মাঠের আম্পায়ার ছিলেন সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ও অতনু সরকার। ঘটনাচক্রে, ফের অভিযোগের তির সুবীরের দিকে। যাঁর আম্পায়ারিং নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে ময়দানে।
বলা হচ্ছে, গোটা ম্যাচে একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আম্পায়ার। যার ফল ভোগ করতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। সবচেয়ে বেশি চর্চা চলছে যেভাবে কাস্টমসের ক্রিকেটার অভিষেক তামাঙ্গকে দুই ইনিংসেই বিতর্কিত এলবিডব্লিউয়ের শিকার হতে হয়েছে, তা নিয়ে। অভিযোগ, অভিষেককে এলবিডব্লিউ দিয়ে নাকি সেলিব্রেট করেছেন আম্পায়ার সুবীর! যা নিয়ে আউট হওয়া ব্যাটারের সঙ্গে তাঁর তর্কাতর্কিও বাঁধে। অভিষেকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু তিনি আউট হওয়ার পর আম্পায়ার আপত্তিকরভাবে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠছে। অভিযুক্ত আম্পায়ারের কাছে কেন জবাবদিহি চাওয়া হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
কারও কারও অভিযোগ, ম্যাচে কাস্টমসের এক বোলার নিয়ম ভেঙে বলে থুতু লাগিয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী তখনই বিপক্ষকে ৫ রান পেনাল্টি দেওয়া উচিত এবং বল পাল্টে দেওয়া উচিত। আম্পায়াররা তা করেননি। বিতর্ক শুরু হওয়ায় নাকি পরেরদিন বল পাল্টাতে যাওয়া হয়! আর এক দফা বিতর্ক হয়।
ইস্টবেঙ্গল বনাম কাস্টমস ম্যাচটি ড্র হয়। প্রথমে ব্যাট করে কাস্টমস এক সময় ৫০/৫ হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রথম ইনিংসে ৩১১/৮ তোলে কাস্টমস। সেঞ্চুরি করেন অরিক্ত দাস। জবাবে ইস্টবেঙ্গল ২২০ রানে অল আউট হয়ে যায়। সন্দীপন ও অনন্ত তিনটি করে উইকেট পান। তিনদিনের ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৩/৫ তুলে ডিক্লেয়ার দেয় কাস্টমস। ইস্টবেঙ্গল দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ৪০ তোলার পর ম্যাচ অমীমাংসিত ঘোষণা হয়। প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ায় কাস্টমস ৬ পয়েন্ট পায়। ইস্টবেঙ্গল পায় ৪ পয়েন্ট।
ওয়ান ডে টুর্নামেন্টে কাস্টমসের কাছে হারতে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। তারপর লিগে দুই দলের এই ম্যাচে শুরু থেকেই ছিল স্নায়ুর চাপ। দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে বারবার উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ম্যাচে পর্যবেক্ষক শঙ্কর ভট্টাচার্য দুই দলের ক্রিকেটারদের ডেকে সতর্ক করেছিলেন বলেও খবর। যদিও আম্পায়ারিং নিয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে তিনি সিএবি-তে জানাতে বলেন বলে খবর।
বলা হচ্ছে, এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে কেন এমন এক আম্পায়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, যাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। সিএবি-রই একাংশ বলছে, আম্পায়ারদের গ্রেড চালু করে আর ম্যাচের গুরুত্ব বুঝে সেই অনুযায়ী ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া উচিত। শোনা যাচ্ছে, ম্যাচের পর দুই দল রুটিন মাফিক সিএবি-তে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, সেখানে আম্পায়ারদের নিয়ে ভাল কিছু লেখা নেই। বরং অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
ইস্টবেঙ্গলের কোচ আব্দুল মোনায়েম যদিও বলছিলেন, 'টানটান উত্তেজনার ম্যাচ ছিল। আম্পায়ারিং খারাপ হয়নি। তবে আরও ভাল হতে পারত।' তাঁর প্রশ্ন, 'বারাসাতে কুয়াশার মধ্যে সবুজ উইকেটে খেলা হয়েছে। সিএবি-র উচিত স্থানীয় লিগেও পিচ ঢাকার ব্যবস্থা করা। তাতে খেলার মান আরও ভাল হবে। পাশাপাশি মাঠে বাংলার কোনও নির্বাচককে দেখলাম না। ভাল দলের খেলা থাকলে নির্বাচকদের অবশ্যই মাঠে আসা উচিত। আর আচরণবিধি ভাঙার জন্য কাউকে দোষী সাব্যস্ত করলে, পর্যবেক্ষক বা আম্পায়ার নয়, সেটা করা উচিত ম্যাচ রেফারির। সিএবি-র বরং ম্যাচ রেফারি প্রথা চালু করা উচিত।'
পাশাপাশি বলা হচ্ছে, কেন কাস্টমস ক্লাবের ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে সরাসরি আচরণবিধির লেভেল টু ভাঙার অভিযোগ করা হল। কাস্টমস ক্লাবের কোচ, প্রাক্তন ক্রিকেটার মিন্টু দাস বললেন, 'স্থানীয় ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ের মান আরও ভাল হওয়া উচিত। তাতে বাংলার ক্রিকেটই উপকৃত হবে।'
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় দুঃস্বপ্নের সফর! মানসিক শান্তির খোঁজে স্ত্রীকে নিয়ে বৃন্দাবনে কোহলি