সন্দীপ সরকার, কলকাতা: রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে তখন যেন একটু ঝিমুনি ধরেছে সকলেরই। ম্যাচের প্রথম সেশনে পাঁচটা উইকেট পড়লেও দ্বিতীয় সেশন উইকেট-হীন। তৃতীয় সেশনের খেলা চলছে। বাংলার বোলাররা প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছেন উত্তরাখণ্ড ব্যাটিংয়ের কোমর ভাঙার জন্য। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালাচ্ছেন উত্তরাখণ্ডের ব্যাটাররা।
এমন সময়ই মাঠে অনাহূত এক অতিথি। আগন্তুককে দেখে চমকে উঠলেন অনেকে। ক্লাব হাউসের গা ঘেঁষে, অ্যাওয়ে টিমের ড্রেসিংরুমের লাগোয়া ব্যারিকেডের ওপর দিয়ে, সোজা হাজির মাঠের পাশে। কিছুক্ষণ বাউন্ডারির রোপের পাশে বসে খেলা পর্যবেক্ষণ করল। সেখানে তখন রোদে গ্লাভস শুকোতে দিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের এক ক্রিকেটার। সেই গ্লাভস নিয়ে খানিক টানাটানি। আম্পায়াররা কড়া নজর রেখেছিলেন। এই বুঝি মাঠে ঢুকে খেলায় ব্যাঘাত ঘটায়।
ইডেনে শুক্রবার ম্যাচের শেষ বেলার হাজির হল এক বীর হনুমান! যাকে দেখে তটস্থ হলেন আম্পায়ার, মাঠকর্মীরা। যদি তাণ্ডব শুরু করে, যদি মাঠে ঢুকে পড়ে? প্রমাদ গুণছিলেন অনেকেই।
কিন্তু সে উৎপাত করার লক্ষণ দেখায়নি। বরং কিছুটা যেন উদাসীন হয়ে ইতিউতি চাইছিল। যেন কারও খোঁজ করছিল। উত্তরাখণ্ডের ক্রিকেটারেরাও তখন মজা পেয়েছে। একজন তো হাত নেড়ে ডাকতে শুরু করল। বাংলার অতিরিক্ত ক্রিকেটার কাজি জুনেইদ সইফি মাঠে জল নিয়ে যাচ্ছিলেন বারবার। ক্রিকেটারদের জলপান করাতে। তিনিও এক বোতল জল দিতে চাইলেন। তবে বজরঙ্গবলীর সেসবে খুব একটা আগ্রহ নেই যেন। হাজার হোক, গরমের তপ্ত দুপুর তো নয়। বরং গঙ্গার দিক থেকে পড়ে আসা রোদ তখন তীব্র নয়। গায়ে জ্বালা ধরাচ্ছে না।
এরপর হনুমান সোজা হাঁটা দিল সাইটস্ক্রিনের পিছন দিয়ে, বাংলার ড্রেসিংরুমের দিকে। আর সেখানে গিয়েই পেল জামাই আদর! বাংলার ড্রেসিংরুমের বাইরে যে টেবিল, চেয়ার রাখা, তার ওপর গিয়ে বসল হনুমানটি। রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা বাংলার ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের কেউ কেউ বেরিয়ে এলেন। হনুমানটিকে দেখে কেউ ভয় পাননি। বরং এগিয়ে দিলেন খাবার।
কলা থেকে শুরু করে আপেল, ফলাহারে মেতে উঠল বজরঙ্গবলী। তারিয়ে তারিয়ে খেল খাবার। শেষ পাতে পেল ডাবের জল। সব খেয়ে খুশি মনে আপনা হতেই ইডেন ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
সিএবি কর্মীদের কেউ কেউ বললেন, 'হনুমানটি মাঝে মধ্যেই আসছে আজকাল। কারও অনিষ্ট করে না। খাবারের খোঁজে আসে। খাবার পেলে খেয়ে চলে যায়।'