লন্ডন: চার দিনের খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও ভারত না ইংল্যান্ড, লর্ডসে তৃতীয় টেস্টে (ENG vs IND 3rd Test) জয়ের হাসি কে হাসবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। ম্যাচ জয়ের জন্য লক্ষ্য ১৯৩ রানের হলেও, দিনের শেষে ৫৮ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছে ভারতীয় দল। ভারতীয় দলের জয়ের জন্য এখনও ১৩৫ রানের প্রয়োজন। দিনশেষে কেএল রাহুল (KL Rahul) ৩৩ রানে অপরাজিত রয়েছেন। ম্য়াচে যে এখনও দুই দলই জিততে পারে, তা কিন্তু বলাই বাহল্য। এমন পরিস্থিতিতে পঞ্চম দিনের প্রথম সেশন ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
দিনের শুরুটা বিনা উইকেটে দুই রানে করে ইংল্যান্ড। তবে দিনের শুরুতেই ষষ্ঠ ওভারে মহম্মদ সিরাজ বেন ডাকেটকে ১২ রানে সাজঘরে ফেরান। জলপানের বিরতির ঠিক আগেই অলি পোপকে চার রানে আউট করেন সিরাজ। আম্পায়ার তাঁকে প্রথমে আউট না দিলেও, ডিআরএসের সুবাদে সাফল্য পায় ভারত। এরপরে ব্যাটে নামেন প্রথম ইনিংসে শতরানকারী জো রুট। তবে ইংল্যান্ড ৫০ রানের গণ্ডি পার করতেই তৃতীয় সাফল্য পায় ভারত। নীতীশ কুমার রেড্ডির বলে গালিতে বেশ ভাল ক্যাচ ধরে ক্রলিকে ফেরান যশস্বী জয়সওয়াল। তাঁর সংগ্রহ ১২ রান।
তিন উইকেট পড়ে গেলেও হ্যারি ব্রুক অবশ্য এদিন নেমে শুরু থেকেই বেশ আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করেন। আকাশ দীপের পরপর তিন বল বাউন্ডারি পার করান তিনি। দুই চার ও একটি ছক্কা হাঁকান ব্রুক। তবে আকাশ দীপ ঠিক পরের ওভারেই মধুর প্রতিশোধ নেন। ব্রুকের মিডল স্টাম্প ভাঙেন তিনি। প্রথম সেশনে আর কোনও উইকেট পড়েনি। বেন স্টোকস ও জো রুট, ইংল্যান্ডের দুই সবথেকে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দলকে এগিয়ে নিয়ে যান।
দ্বিতীয় সেশনে এই দুই তারকাই দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। দুইজনে মিলে অর্ধশতরানের পার্টনারশিপও গড়েন। বুমরা, সিরাজরা চেষ্টা করেও তাঁদের আউট করতে ব্যর্থ হন। লাঞ্চের পর শুরুতেই জীবনদানও পান রুট। আকাশ দীপের বলে তাঁর ক্যাচ ফেলেন ধ্রুব জুরেল। ক্যাচ ধরলেও অবশ্য নো বলের জন্য তা বাতিলই হত।
জীবনদান পেয়ে রুট, তা কাজে লাগাবেন, এমনটাই আশা করছিলেন ইংরেজ সমর্থকরা। তিনি অর্ধশতরানের দিকেও এগোচ্ছিলেন। ঠিক এমন সময়েই দলের হয়ে জ্বলে উঠেন ওয়াশিংটন সুন্দর (Washington Sundar)। ৪০ রানে রুটের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি নেন তিনি। রুট আউঠ হওয়ার পর জেমি স্মিথ ক্রিজে নামেন। তবে তিনি ১৪ বলের বেশি টিকতে পারেননি। আট রানে সুন্দরের বলেই বোল্ড হন ইংরেজ কিপার-ব্যাটার। এরপরেই স্টোকস এবং ওকস দেখেশুনে স্বভাববিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক ক্রিকেট খেলে ইংল্যান্ডের দুর্গ আগলান। ছয় উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করে ইংল্যান্ড।
কিন্তু চা পানের বিরতির পরেই ইংল্যান্ড বড় ধাক্কা খায়। স্যুইপ মারতে গিয়ে বেন স্টোকস ৩৩ রানে ওয়াশিংটনের বলে বোল্ড হন। এরপর ছিল বুমরা শো। ক্রিস ওকসে প্রথমে বোল্ড করেন বুমরা। এরপরে নিখুঁত ইয়র্কারে প্রথম ইনিংসের হাফসেঞ্চুরিয়ন কার্সেরও স্টাপও ভাঙেন সেই বুমরাই। শেষ উইকেটে আর্চার কিছুটা সামলে খেলার চেষ্টা করছিলেন। বুমরার বলগুলি সুন্দরভাবে ডিফেন্ডও করেন তিনি। তবে সুন্দরের ভেল্কির সামনে সেই আত্মসমর্পণ করতে হল তাঁর পার্টনারকে। এক রানে শোয়েব বশির বোল্ড হলে ইংল্যান্ড ইনিংস সমাপ্ত হয়।
ইংল্যান্ডকে ১৯২ রানে অল আউট করার পর ভারতীয় দল ব্যাট করতে নামে। তবে শুরুটা টিম ইন্ডিয়া একেবারে ভালভাবে করতে পারেনি। দ্বিতীয় ওভারেই এই ম্যাচে দ্বিতীয়বার জোফ্রা আর্চারের বলে আউট হন যশস্বী জয়সওয়াল। তিনি তো খাতাই খুলতে পারেননি। এরপর ব্যাট হাতে ক্রিজে নামেন করুণ নায়ার। প্রথম ইনিংসে রাহুল ও নায়ার, দুই কর্ণাটক ব্যাটার বেশ ভাল এক পার্টনারশিপ গড়েছিলেন। এই ইনিংসেও পার্টনারশিপের শুরুটা তাঁরা তেমনই করেছিলেন। রাহুল বেশ আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করছিলেন। করুণ নায়ারকে দেখে শুনে এগোতে দেখা যায়।
তবে হঠাৎই ছন্দপতন। অফ স্টাম্পের বাইরের এক বল কোনও শটই খেললেন না নায়ার। বল তাঁর প্যাডে লাগে এবং আম্পায়ার তঁকে সঙ্গে সঙ্গেই আউট দেন। করুণও রিভিউ করাননি। গত ম্যাচে স্বপ্নের ব্যাটিংয়ে পর অধিনায়ক শুভমন গিল এই ম্য়াচের প্রথম ইনিংসে রান পাননি। দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি মাত্র ছয় রানে কার্সের বলে সাজঘরে ফেরেন। এরপর নাইট ওয়াচ ম্যান হিসাবে আকাশ দীপকে নামানো হয়। তবে তিনিও টেকেননি। স্টোকস তাঁকে আউট করেন। এরপরেই দিনের খেলা শেষের কথা ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। ঘটনাবহুল এক দিনে মোট ১৪ উইকেট পড়ল।